হায়দরাবাদ, 16 মার্চ: প্রায় প্রত্যেক দিন দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকছে দেশের জাতীয় সড়কগুলি ৷ প্রতি তিন মিনিটে ভারতে গাড়ি দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয় । আর এই মৃত্যু এড়ানো যেতে পারে যদি সঠিকভাবে সিট বেল্ট ব্যবহার করা হয় ৷ তবে এ দেশে অনেকরই সিট বেল্টে অনীহা ৷ সামনে বসে এমনকী গাড়ি চালানোর সময়ও চালককে সিট বেল্ট পড়তে দেখা যায় না ৷ যার জেরে পথ দুর্ঘটনা হলেই গাড়ি থেকে যাত্রীদের প্রাণ নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। তবে সিট বেল্ট দুর্ঘটনায় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তোলে ।
দেশের মাত্র 5 শতাংশ রাস্তা, এক্সপ্রেসওয়ে এবং জাতীয় ও রাজ্য মহাসড়ক রয়েছে ৷ এরপরেও অসংখ্য দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকছে দেশ । কেন্দ্রীয় পরিবহণ ও জাতীয় মহাসড়ক মন্ত্রকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই রাস্তাগুলিতে 2022 সালে 51 হাজার 888 জন প্রাণ হারিয়েছে ৷ দ্রুত গতির কারণেই বেশিরভাগ দুর্ঘটনাগুলি ঘটেছে । পাশাপাশি সিট বেল্ট না পরায় 8 হাজার 384 জন চালক এবং 8 হাজার 331 জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে
রিপোর্ট অনুযায়ী, সিট বেল্ট ব্যবহার করলে সম্ভাব্যভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়া এক তৃতীয়াংশ মানুষের জীবন বাঁচতে পারে ৷ তাই দুর্ঘটনা কমাতে পথ নিরাপত্তার গুরুত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে ।
এই সময়ে দাঁড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন, রাশিয়া, নরওয়ে, ডেনমার্ক এবং জাপানের মতো দেশগুলি গত এক দশকে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির হার অর্ধেক করে বেঞ্চমার্ক স্থাপন করেছে ৷ পাশাপাশি ত্রিশটিরও বেশি দেশ 30 থেকে 50 শতাংশ পর্যন্ত দুর্ঘটনা কমাতে পেরেছে । এই সাফল্যের জন্য সিট বেল্ট প্রযুক্তি এবং যানবাহনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের অগ্রগতি, একই সঙ্গে পথ নিরাপত্তা বিধির কঠোর প্রয়োগকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ । ইউএস ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্রাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রিপোর্টে বলেছে যে 2017 সালে সিট বেল্ট আইনের কঠোর প্রয়োগ প্রায় 15 হাজার জীবন বাঁচিয়েছে ৷ যার ফলে 90 শতাংশের বেশি মানুষে প্রাণ বেঁচেছে ।
তবে ভারতের ছবিটা বিপরীত ৷ ভারত পথ দুর্ঘটনায় ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় ৷ দেশে বার্ষিক 9 হাজার জনেরও বেশি মানুষ বাসের সঙ্গে জড়িত দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ৷ যানবাহনগুলি প্রায়শই ভিড় বেশি থাকে এবং গর্তযুক্ত রাস্তায় চলাচল করে । যার ফেলে দুর্ঘটনা ঘটে ৷ উদ্বেগজনকভাবে এই দুর্ঘটনাগুলি প্রতি বছর প্রায় এক হাজার শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জীবন যায় ৷ ইন্টারন্যাশনাল রোড ফেডারেশনের মতে, তুলনামূলকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 2021 সালে মাত্র 14 জনের প্রাণ গিয়েছে পথ দুর্ঘটনায় এবং চিনে 2022 সালে 215টি ।
বিশ্বের মাত্র 1 শতাংশ যানবাহন রয়েছে ভারতে ৷ এরপরেও বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনার 11 শতাংশ ঘটে দেশে । মর্মান্তিক গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল বিশিষ্ট শিল্পপতি সাইরাস মিস্ত্রি ৷ তাঁর মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহণ এবং জাতীয় সড়ক মন্ত্রক সিট বেল্ট বিধি প্রয়োগের উপর তার নজর জোরদার করেছে । মন্ত্রক 1989 সালের মোটর যান আইনের বিধানগুলিকে শক্তিশালী করেছে । অক্টোবর 2022 থেকে সমস্ত নতুন তৈরি গাড়ি, ভ্যান, বাস এবং ট্রাকে গতি সীমা সতর্কতা, অডিয়ো-ভিডিয়ো সতর্কীকরণ ব্যবস্থার পাশাপাশি সিট বেল্টের পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ৷
আগামী 6 বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি এবং আহতের সংখ্যা 50 শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ৷ এই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাস্তব অন্য কথা বলছে ৷ চার বছর আগে পঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টের নির্দেশে সমস্ত স্কুল বাসে শিশুদের সিট বেল্ট ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিল ৷ কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্কুল বাসে সিট বেল্ট ব্যবহার করতে দেখা যায় না ৷ একইভাবে আরটিসি বাস-সহ সমস্ত ভারী যানবাহনে সিট বেল্টের জন্য কেরল সরকারের সাম্প্রতিক নির্দেশে স্বেচ্ছাসেবী সম্মতির গুরুত্বকে বোঝায় । এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলি মেনে চলা সমস্ত চালকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ তাদের এবং পরিবারের মঙ্গলের জন্য সিট বেল্ট পরা জরুরি ।
আরও পড়ুন: