ETV Bharat / opinion

রামায়ণের 'উত্তর কাণ্ড' কি মহাকাব্যেরই অংশ ? - Uttara Ramayana

Uttara Ramayana: উত্তর রামায়ণ ঋষি বাল্মীকির রামায়ণে উত্তর কাণ্ড নামেও পরিচিত । লেখক যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন যে, মূল পাঠ্যটিতে কিছু সংযোজন ও পরিবর্তন করা হয়েছিল । সীতাকে রামের ত্যাগ করা থেকে শুরু করে রামরাজ্যের কাহিনির সমাপ্তি পর্যন্ত, বিভিন্ন ঘটনাকে শ্লোকের মাধ্যমে উল্লেখ করে নিজের যুক্তি তুলে ধরেছেন লেখক ৷

ETV BHARAT
বাল্মীকির আশ্রমে ঋষি নারদ (ছবি: (ইটিভি ভারত উইকিমিডিয়া কমন্স))
author img

By Srinivas Jonnalagadda

Published : Aug 25, 2024, 1:26 PM IST

Updated : Aug 25, 2024, 2:06 PM IST

'উত্তর রামায়ণ' বা রামায়ণের 'উত্তর কাণ্ড' কি এই মহাকাব্যের একটি প্রকৃত অংশ ? মহর্ষি বাল্মীকি কি এই অংশের রচনা করেছিলেন ? পণ্ডিতরা শতাব্দী ধরে এই প্রশ্নটি নিয়ে গবেষণা এবং বিতর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন ৷

সীতা এবং দুই রাজকুমার লব ও কুশের ত্যাগের আবেগপ্রবণ কাহিনিতে বেড়েছে এই কাণ্ডের জনপ্রিয়তা । যাইহোক, এমন কোনও সূত্র কি আছে, যা আমাদের প্রশ্নের সমাধান করতে সাহায্য করে ? এই বিতর্কিত বিষয়ে অনুসন্ধান করা যাক ৷

'মন্দারামু' থেকে যুক্তি

'মন্দারামু' (একটি কল্পতরু, বা একটি গাছ যা সবকিছু দেয়) শিরোনামে রামায়ণের উপর তাঁর মূল লেখনীতে বাসুদাস স্বামী জোর দিয়ে বলেন যে, উত্তর কাণ্ড রামায়ণের একটি প্রামাণ্য অংশ গঠন করে ৷ এ ব্যাপারে নিজের 10টি যুক্তি তুলে ধরেন তিনি ৷ নিম্নলিখিত তিনটি যুক্তি বেশ শক্তিশালী বলে মনে হয় ।

পবিত্র গায়ত্রী মন্ত্রে 24টি অক্ষর রয়েছে । ঋষি 24,000 শ্লোকে রামায়ণ লিখেছিলেন ৷ হাজার হাজার শ্লোকের প্রতিটি সেটের আদ্যক্ষর হিসাবে মন্ত্রের অক্ষরগুলি পরপর ব্যবহার করেছিলেন তিনি । উত্তর কাণ্ড অপসারণ করলে রামায়ণের শ্লোক সংখ্যা 24,000-এর কম হয়ে যায় ।

শ্লোক 1.1.91 (বালা কাণ্ড)-এ ঋষি নারদ রামরাজ্যকে "ন পুত্রমরণং কিচিদ দ্রক্ষ্যন্তি পুরুষাঃ" (পিতারা তাঁদের পুত্রের মৃত্যু দেখতে পাবেন না) বৈশিষ্ট্যের অধিকারী বলে বর্ণনা করেছেন । এটি উত্তর কাণ্ড দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে ।

শ্লোক 1.3.38 (বালা কাণ্ড)-এর মধ্যে "বৈদেহ্যাস্ক বিসর্জননং" (সীতার ত্যাগ) বাক্যাংশ রয়েছে, যা উত্তর কাণ্ডের অনুরূপ পর্বের পূর্বাভাস দেয় বলে মনে হয় ।

মহাকাব্যের অন্যান্য অংশ থেকে পাঠ্য প্রমাণ ব্যবহার করে উপরের যুক্তিগুলিকে কাটাছেঁড়া করা যাক ।

গায়ত্রী মন্ত্র সংযোগ

ধরা যাক, তর্কের খাতিরে, ঋষি বাল্মীকি গায়ত্রী মন্ত্রের 24টি অক্ষরকে মাথায় রেখে মহাকাব্যের 24,000টি শ্লোক রচনা করেছিলেন । এটি এমন একটি কৃতিত্ব যে, কোথাও তার উল্লেখ থাকা উচিত ৷ তবে, ঋষি বাল্মীকি কখনওই, কোথাও এই ধরনের কোনও কিছুর উল্লেখ করেননি বা তার ইঙ্গিতও দেননি ৷

ETV BHARAT
ঋষি বাল্মীকি (ছবি: (ইটিভি ভারত উইকিমিডিয়া কমন্স))

এছাড়াও, অনেক পণ্ডিত মনে করেন যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রামায়ণের মূল পাঠে অসংখ্য অনুচ্ছেদ লেখা হয়েছে । সেগুলি বাদ দিলে মহাকাব্যটি 24,000 শ্লোকের থেকে অনেক কম হবে । আর তা হলে সরাসরি মহাকাব্যের শ্লোক সংখ্যা এবং গায়ত্রী মন্ত্রের অক্ষরের মধ্যে সংগতি থাকার বিষয়টি খারিজ হয়ে যায় ।

রামরাজ্যের বর্ণনা

বালা কাণ্ডের শ্লোক 1.1.90 থেকে 1.1.97 তে রামরাজ্যের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ রয়েছে, যেটি বর্ণনা করেছেন ঋষি নারদ । বিশেষ করে, শ্লোক 1.1.91-এর পরের অংশটি ভবিষ্যৎ কালে লেখা । শ্লোক 6.128.95 থেকে 6.128.106 পর্যন্ত যুদ্ধ কাণ্ডের শেষের দিকে অনুরূপ চিত্রায়ন ঘটে। এই অনুচ্ছেদটি এই বর্ণনার পুনরাবৃত্তি করার জন্য একটি পৃথক কাণ্ডের প্রয়োজনীয়তাকে খারিজ করে দেয় ।

বাসুদাস স্বামী যুক্তি দেন যে, শ্লোক 1.1.91 (পিতারা তাঁদের পুত্রদের মৃত্যু দেখতে পাবেন না)-এর বক্তব্য় উত্তর কাণ্ডের 73 থেকে 76 অধ্যায়ে একটি ব্রাহ্মণ বালকের মৃত্যুর গল্পের পূর্বাভাস দেয় ।

শ্লোক 1.1.91 দাবি করে যে, এই ধরনের ঘটনা রামরাজ্যে কখনওই ঘটেনি । এই ধরনের মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা, শম্বুক দ্বারা বর্ণব্যবস্থার একটি লঙ্ঘন এবং 'ধর্ম' পুনরুত্থানের মাধ্যমে মৃত ছেলের বেঁচে ওঠা, প্রশ্নের জবাব দেওয়ার থেকেও আরও বেশি প্রশ্নের উদ্রেক করে ৷

এই পর্বটি একটি পরিবর্তনশীল সামাজিক নৈতিকতার সৃজনশীল প্রতিক্রিয়া হিসাবে আসে, যা অবশ্যই ঋষি বাল্মিকী মূল শ্লোক রচনা করার কয়েক শতাব্দী পরে ঘটেছিল ।

সীতাকে ত্যাগের কথা উল্লেখ না-করা অবিশ্বাসযোগ্য

প্রথমত, শ্লোক 1.3.10 থেকে 1.3.38 পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত (সংক্ষেপ) রামায়ণকে পুনরুদ্ধার করে, যা ঋষি নারদ শ্লোক 1.1.19 থেকে 1.1.89 পর্যন্ত পাঠ করেছেন । সেখানে ভগবান ব্রহ্মাকে দায়ী করা হয় । একটি বক্তৃতায় এই ধরনের পুনরুক্তি একটি ভালো গুণ হিসাবে বিবেচিত হয়, তবে একটি লিখিত সাহিত্যকর্মে এটি একটি ত্রুটি (দোষ)। আদর্শের এমন একটি মৌলিক লঙ্ঘনের জন্য ঋষি বাল্মিকীকে দায়ী করা হলে তা তাঁর কাব্যিক প্রতিভার প্রতি অপমান ।

দ্বিতীয়ত, উল্লিখিত শ্লোকগুলি 1.3.10-1.3.38 বাদ দিলে আখ্যানে কোনও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয় না ! ফলে শ্লোকগুলি পরবর্তী সংযোজন ছিল বলে যে অনুমান, তা আরও যুক্তিগ্রাহ্য হয় ৷

ETV BHARAT
'সীতার বনবাস', নির্বাসনে সীতা (ছবি: (ইটিভি ভারত উইকিমিডিয়া কমন্স))

তৃতীয়ত, ঋষি নারদের সংক্ষিপ্ত রামায়ণ পাঠে 'বৈদেহ্যাশ্চ বিসর্জনং' অংশটি স্থান পায়নি, কিন্তু কোনও এক জাদুকরী বলে ভগবান ব্রহ্মার অনেক সংক্ষিপ্ত পুনরাবৃত্তিতে তা স্থান পায় । এই পুনরাবৃত্তির সংস্করণে উত্তর কাণ্ডের অন্য কোনও গল্পের উল্লেখ পাওয়া যায় না ।

উপরের সমস্ত যুক্তি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, শ্লোক 1.3.10-1.3.38 পরবর্তী সংযোজন ছিল, যা স্পষ্টভাবে উত্তর কাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার জন্য আনা হয়েছিল ।

ভাবার মতো আরও কয়েকটি বিষয়

বাসুদাস স্বামীর যুক্তির অস্থিরতা ছাড়াও, আমরা আরও কয়েকটি বিষয় দেখতে পাই যা নির্দেশ করে যে, উত্তর কাণ্ড ঋষি বাল্মীকির মহাকাব্যের মূল সংস্করণের অংশ ছিল না ।

গল্প শেষ

ঋষি নারদ কর্তৃক বর্ণিত সংক্ষিপ্ত রামায়ণ অনুসরণ করে, শ্লোক 1.4.1 (বালা কাণ্ড) বলেছে যে, রাজ্য পুনরুদ্ধার করা ("প্রাপ্তরাজ্যস্য রামস্য") রামের গল্প সুন্দরভাবে এবং শক্তিশালী বার্তা-সহ বর্ণনা করা হয়েছিল । একইভাবে, শ্লোক 1.4.7 বলে যে, ঋষি বাল্মীকি মহাকাব্যের জন্য তিনটি নাম কল্পনা করেছিলেন: 'রামায়ণ' (রামের পথ), 'সীতায়াস্করিতাং মহাত' (সীতার মহান কাহিনী) এবং 'পৌলস্ত্য বধ' ( রাবণের হত্যার গল্প)৷

পূর্ণ কাণ্ডটিও উত্তর কাণ্ডের মতোই বড় এবং ভিন্নধর্মী ৷ এটি যুদ্ধ কাণ্ডের পরবর্তী অধ্যায় ৷ ঋষি বাল্মীকি মহাকাব্যের অন্যতম শিরোনাম হিসাবে রাবণ হত্যাকে বেছে নিতেন না । এই শিরোনামগুলি একে অপরের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হয়ে উঠবে, যদি না কাহিনিটি রামের রাজ্যাভিষেকের সঙ্গে শেষ হয় ।

কয়টি কাণ্ড ?

শ্লোক 1.4.2 (বালা কাণ্ড) স্পষ্টভাবে বলেছে যে, ঋষি বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেছিলেন 6টি কাণ্ডে ('ষট কাণ্ডানি')। অধিকন্তু, এটি বলে যে রামায়ণে সর্গের সংখ্যা প্রায় 500 ('সর্গ শতান পাঞ্চ')।

অন্যদিকে, উত্তর কাণ্ডকে রামায়ণের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মনে করা হলে তা উপরের কথার বিরোধিতা করবে: কাণ্ডের সংখ্যা 7 হবে, আর সর্গের সংখ্যা 650-এর কাছাকাছি আসবে ।

ফলশ্রুতি

যে কোনও সাহিত্যকর্মের শেষে একটি ছোট অংশ থাকে, যা সেই সাহিত্য পড়ার বা শোনার উপকারিতা ঘোষণা করে (ফলশ্রুতি)। এটি একটি প্যাটার্ন, যা খুব কঠোরভাবে মেনে চলা হয় ।

শ্লোক 1.1.90 থেকে 1.1.97 পর্যন্ত বালা কাণ্ডে রামরাজ্যের বর্ণনা রয়েছে । এটি অনুসরণ করে আমরা দেখতে পাই যে, শ্লোক 1.1.98 থেকে 1.1.100 তে ফলশ্রুতি রয়েছে । সেই অনুসারে, শ্লোক 6.128.95 থেকে 6.128.106 পর্যন্ত যুদ্ধ কাণ্ডে রামরাজ্যের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যা 10,000 বছর ধরে চলেছিল ('দশ বর্ষ সহস্রাণী রাম রাজ্যমাকারায়েত')। এটি অনুসরণ করে, শ্লোক 6.128.107 থেকে 6.128.125 পর্যন্ত বিস্তারিতভাবে ফলশ্রুতি স্থাপন করে ।

ঋষি বাল্মীকি যদি রামায়ণকে 7টি কাণ্ডের মহাকাব্য হিসেবে কল্পনা করতেন, তাহলে তিনি কখনওই রামরাজ্যের বর্ণনা দিতেন না (ভবিষ্যৎ কাল), ষষ্ঠ কাণ্ড অর্থাৎ যুদ্ধ কাণ্ডের শেষেই একটি বিস্তৃত ফলশ্রুতি রয়েছে ৷

একজন দূতকে হত্যা করা

উত্তর কাণ্ড 13.39 বলে যে, ক্রোধান্বিত রাবণ তার খুড়তুতো ভাই কুবেরের পাঠানো দূতকে হত্যা করেছিল ('দূতাং খড়গেন জাগনিভান')। যখন রাবণ দেবতাদের সঙ্গে তার প্রাথমিক যুদ্ধ করছিলেন তখন এই পর্বটি ঘটে।

কালানুক্রমিকভাবে অনেক পরে, সুন্দর কাণ্ড সর্গ 52-এ, বিভীষণ হনুমানকে হত্যা করার জন্য রাবণের আদেশের বিরুদ্ধে পরামর্শ দেন । শ্লোক 5.52.15-এ, তিনি বলেছেন যে কেউ কখনও একজন দূতকে হত্যা করার কথা শোনেনি ('বধঃ তু দূতস্য ন নঃ শ্রুতো অপি')। এই ঘটনাটি ঘটে যুদ্ধের একেবারে দ্বারপ্রান্তে, তার মাত্র এক মাস আগে ।

উপরের দুটি বর্ণনা সরাসরি একে অপরের বিপরীত । কুবেরের দূতের কালানুক্রমিকভাবে পূর্বের ঘটনাটি যদি সত্যিই ঘটে থাকে, তবে বিভীষণ অবশ্যই তা জানতেন এবং, তিনি দাবি করতেন না যে রাবণ যখন হনুমানকে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন, তখন এমন কথা শোনা যায়নি ।

মহাভারতে রামায়ণের গল্প

মহাকাব্য মহাভারতের অরণ্য পর্বে ঋষি মারকাণ্ডেয় সর্গ 272 থেকে 289-তে ধর্মরাজের কাছে রামায়ণের গল্প বর্ণনা করেছেন । আমরা দেখতে পাই যে, গল্পের কয়েকটি উপাদান বাল্মীকি রামায়ণের অনুরূপ থেকে আলাদা ।

তথাপি, এই আখ্যান অনুসারেও, রামায়ণের কাহিনি সর্গ 289-এ রামের মুকুট পরিধানের মাধ্যমে শেষ হয় । স্পষ্টতই, মহাভারত রচিত হওয়ার পরে উত্তর কাণ্ডের লেখা তৈরি হয়েছিল ।

লব এবং কুশ রামায়ণ পাঠ করে

বালা কাণ্ডের 1.4.27 থেকে 1.4.29 শ্লোকে, রাম অযোধ্যার রাস্তায় রামায়ণ পাঠরত দুই তপস্বী বালক লব এবং কুশকে দেখতে পেয়েছিলেন । তিনি তাদের তার প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন এবং যথাযথভাবে তাদের সম্মান করলেন । লব এবং কুশ তখন রামের দরবারে রামায়ণ পাঠ করলেন ।

অন্যদিকে, উত্তর কাণ্ডের সর্গ 94 বলে যে, রামের অশ্বমেধ যজ্ঞের (ঘোড়া বলির আচার) অনুষ্ঠানের বিরতির সময় লব এবং কুশ রামায়ণ পাঠ করেছিলেন । নৈমিষারণ্যে গোমতী নদীর তীরে এটি হয় । এই তথ্য একে অপরের বিরোধিতা করে: দুটির মধ্যে শুধুমাত্র একটিই বৈধ হতে পারে ।

সীতাকে ত্যাগ

উত্তর কাণ্ডের শ্লোক 42.29 অনুসারে, রাম এবং সীতা রাজকীয় সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করে 10,000 বছর একসঙ্গে বসবাস করেছিলেন: "দশবর্ষ সহস্রাণি গাতানি সুমহাত্মনোঃ প্রপ্তায়র্ভিভিধান ভোগান"। তারপর, সীতা বনে ঋষি ও তপস্বীদের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন । অতঃপর, সর্গ 43-এ, ভাদ্র রামকে অযোধ্যার কিছু পুরুষ সম্পর্কে অবহিত করেন, যাঁরা রামের সীতাকে গ্রহণ করাকে সমালোচনা করছিলেন ৷ রাবণ তাঁর জায়গায় এক বছরের জন্য আটকে রেখেছিলেন সীতাকে ৷

এটা হাস্যকর যুক্তি যে, রাজ্যের মুকুট পরার পর 10,000 বছর ধরে রামের সীতাকে গ্রহণের সঙ্গে একমত ছিলেন অযোধ্যার নাগরিকরা, কিন্তু তার পরেই এই বিষয়ে তাঁদের অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল । তখন যুক্তি দেখানো হয় যে, তাঁদের আপত্তি শুনে রাম সীতাকে ত্যাগ করেছিলেন ৷ এটি স্পষ্ট চরিত্রহনন । এটি যুক্তিযুক্ত হিসাবে মানার অযোগ্য ।

উপসংহার

এইভাবে, আমরা দৃঢ় ভিত্তিতে এই উপসংহারে পৌঁছতে পারি যে, উত্তর কাণ্ড মহাকাব্য রামায়ণে অনেক পরে লেখা হয়েছিল, এবং তাতে কিছু সংযোজন করা হয়েছিল ৷ এবং সেই সংশোধন করা হয়েছিল মহাকাব্যের মূল পাঠের খসড়াটিকে বিশ্বাসযোগ্যতা দেওয়ার জন্যই । অতএব, উত্তর কাণ্ড মহাকাব্যেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ নয় ।

'উত্তর রামায়ণ' বা রামায়ণের 'উত্তর কাণ্ড' কি এই মহাকাব্যের একটি প্রকৃত অংশ ? মহর্ষি বাল্মীকি কি এই অংশের রচনা করেছিলেন ? পণ্ডিতরা শতাব্দী ধরে এই প্রশ্নটি নিয়ে গবেষণা এবং বিতর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন ৷

সীতা এবং দুই রাজকুমার লব ও কুশের ত্যাগের আবেগপ্রবণ কাহিনিতে বেড়েছে এই কাণ্ডের জনপ্রিয়তা । যাইহোক, এমন কোনও সূত্র কি আছে, যা আমাদের প্রশ্নের সমাধান করতে সাহায্য করে ? এই বিতর্কিত বিষয়ে অনুসন্ধান করা যাক ৷

'মন্দারামু' থেকে যুক্তি

'মন্দারামু' (একটি কল্পতরু, বা একটি গাছ যা সবকিছু দেয়) শিরোনামে রামায়ণের উপর তাঁর মূল লেখনীতে বাসুদাস স্বামী জোর দিয়ে বলেন যে, উত্তর কাণ্ড রামায়ণের একটি প্রামাণ্য অংশ গঠন করে ৷ এ ব্যাপারে নিজের 10টি যুক্তি তুলে ধরেন তিনি ৷ নিম্নলিখিত তিনটি যুক্তি বেশ শক্তিশালী বলে মনে হয় ।

পবিত্র গায়ত্রী মন্ত্রে 24টি অক্ষর রয়েছে । ঋষি 24,000 শ্লোকে রামায়ণ লিখেছিলেন ৷ হাজার হাজার শ্লোকের প্রতিটি সেটের আদ্যক্ষর হিসাবে মন্ত্রের অক্ষরগুলি পরপর ব্যবহার করেছিলেন তিনি । উত্তর কাণ্ড অপসারণ করলে রামায়ণের শ্লোক সংখ্যা 24,000-এর কম হয়ে যায় ।

শ্লোক 1.1.91 (বালা কাণ্ড)-এ ঋষি নারদ রামরাজ্যকে "ন পুত্রমরণং কিচিদ দ্রক্ষ্যন্তি পুরুষাঃ" (পিতারা তাঁদের পুত্রের মৃত্যু দেখতে পাবেন না) বৈশিষ্ট্যের অধিকারী বলে বর্ণনা করেছেন । এটি উত্তর কাণ্ড দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে ।

শ্লোক 1.3.38 (বালা কাণ্ড)-এর মধ্যে "বৈদেহ্যাস্ক বিসর্জননং" (সীতার ত্যাগ) বাক্যাংশ রয়েছে, যা উত্তর কাণ্ডের অনুরূপ পর্বের পূর্বাভাস দেয় বলে মনে হয় ।

মহাকাব্যের অন্যান্য অংশ থেকে পাঠ্য প্রমাণ ব্যবহার করে উপরের যুক্তিগুলিকে কাটাছেঁড়া করা যাক ।

গায়ত্রী মন্ত্র সংযোগ

ধরা যাক, তর্কের খাতিরে, ঋষি বাল্মীকি গায়ত্রী মন্ত্রের 24টি অক্ষরকে মাথায় রেখে মহাকাব্যের 24,000টি শ্লোক রচনা করেছিলেন । এটি এমন একটি কৃতিত্ব যে, কোথাও তার উল্লেখ থাকা উচিত ৷ তবে, ঋষি বাল্মীকি কখনওই, কোথাও এই ধরনের কোনও কিছুর উল্লেখ করেননি বা তার ইঙ্গিতও দেননি ৷

ETV BHARAT
ঋষি বাল্মীকি (ছবি: (ইটিভি ভারত উইকিমিডিয়া কমন্স))

এছাড়াও, অনেক পণ্ডিত মনে করেন যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রামায়ণের মূল পাঠে অসংখ্য অনুচ্ছেদ লেখা হয়েছে । সেগুলি বাদ দিলে মহাকাব্যটি 24,000 শ্লোকের থেকে অনেক কম হবে । আর তা হলে সরাসরি মহাকাব্যের শ্লোক সংখ্যা এবং গায়ত্রী মন্ত্রের অক্ষরের মধ্যে সংগতি থাকার বিষয়টি খারিজ হয়ে যায় ।

রামরাজ্যের বর্ণনা

বালা কাণ্ডের শ্লোক 1.1.90 থেকে 1.1.97 তে রামরাজ্যের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ রয়েছে, যেটি বর্ণনা করেছেন ঋষি নারদ । বিশেষ করে, শ্লোক 1.1.91-এর পরের অংশটি ভবিষ্যৎ কালে লেখা । শ্লোক 6.128.95 থেকে 6.128.106 পর্যন্ত যুদ্ধ কাণ্ডের শেষের দিকে অনুরূপ চিত্রায়ন ঘটে। এই অনুচ্ছেদটি এই বর্ণনার পুনরাবৃত্তি করার জন্য একটি পৃথক কাণ্ডের প্রয়োজনীয়তাকে খারিজ করে দেয় ।

বাসুদাস স্বামী যুক্তি দেন যে, শ্লোক 1.1.91 (পিতারা তাঁদের পুত্রদের মৃত্যু দেখতে পাবেন না)-এর বক্তব্য় উত্তর কাণ্ডের 73 থেকে 76 অধ্যায়ে একটি ব্রাহ্মণ বালকের মৃত্যুর গল্পের পূর্বাভাস দেয় ।

শ্লোক 1.1.91 দাবি করে যে, এই ধরনের ঘটনা রামরাজ্যে কখনওই ঘটেনি । এই ধরনের মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা, শম্বুক দ্বারা বর্ণব্যবস্থার একটি লঙ্ঘন এবং 'ধর্ম' পুনরুত্থানের মাধ্যমে মৃত ছেলের বেঁচে ওঠা, প্রশ্নের জবাব দেওয়ার থেকেও আরও বেশি প্রশ্নের উদ্রেক করে ৷

এই পর্বটি একটি পরিবর্তনশীল সামাজিক নৈতিকতার সৃজনশীল প্রতিক্রিয়া হিসাবে আসে, যা অবশ্যই ঋষি বাল্মিকী মূল শ্লোক রচনা করার কয়েক শতাব্দী পরে ঘটেছিল ।

সীতাকে ত্যাগের কথা উল্লেখ না-করা অবিশ্বাসযোগ্য

প্রথমত, শ্লোক 1.3.10 থেকে 1.3.38 পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত (সংক্ষেপ) রামায়ণকে পুনরুদ্ধার করে, যা ঋষি নারদ শ্লোক 1.1.19 থেকে 1.1.89 পর্যন্ত পাঠ করেছেন । সেখানে ভগবান ব্রহ্মাকে দায়ী করা হয় । একটি বক্তৃতায় এই ধরনের পুনরুক্তি একটি ভালো গুণ হিসাবে বিবেচিত হয়, তবে একটি লিখিত সাহিত্যকর্মে এটি একটি ত্রুটি (দোষ)। আদর্শের এমন একটি মৌলিক লঙ্ঘনের জন্য ঋষি বাল্মিকীকে দায়ী করা হলে তা তাঁর কাব্যিক প্রতিভার প্রতি অপমান ।

দ্বিতীয়ত, উল্লিখিত শ্লোকগুলি 1.3.10-1.3.38 বাদ দিলে আখ্যানে কোনও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয় না ! ফলে শ্লোকগুলি পরবর্তী সংযোজন ছিল বলে যে অনুমান, তা আরও যুক্তিগ্রাহ্য হয় ৷

ETV BHARAT
'সীতার বনবাস', নির্বাসনে সীতা (ছবি: (ইটিভি ভারত উইকিমিডিয়া কমন্স))

তৃতীয়ত, ঋষি নারদের সংক্ষিপ্ত রামায়ণ পাঠে 'বৈদেহ্যাশ্চ বিসর্জনং' অংশটি স্থান পায়নি, কিন্তু কোনও এক জাদুকরী বলে ভগবান ব্রহ্মার অনেক সংক্ষিপ্ত পুনরাবৃত্তিতে তা স্থান পায় । এই পুনরাবৃত্তির সংস্করণে উত্তর কাণ্ডের অন্য কোনও গল্পের উল্লেখ পাওয়া যায় না ।

উপরের সমস্ত যুক্তি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, শ্লোক 1.3.10-1.3.38 পরবর্তী সংযোজন ছিল, যা স্পষ্টভাবে উত্তর কাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার জন্য আনা হয়েছিল ।

ভাবার মতো আরও কয়েকটি বিষয়

বাসুদাস স্বামীর যুক্তির অস্থিরতা ছাড়াও, আমরা আরও কয়েকটি বিষয় দেখতে পাই যা নির্দেশ করে যে, উত্তর কাণ্ড ঋষি বাল্মীকির মহাকাব্যের মূল সংস্করণের অংশ ছিল না ।

গল্প শেষ

ঋষি নারদ কর্তৃক বর্ণিত সংক্ষিপ্ত রামায়ণ অনুসরণ করে, শ্লোক 1.4.1 (বালা কাণ্ড) বলেছে যে, রাজ্য পুনরুদ্ধার করা ("প্রাপ্তরাজ্যস্য রামস্য") রামের গল্প সুন্দরভাবে এবং শক্তিশালী বার্তা-সহ বর্ণনা করা হয়েছিল । একইভাবে, শ্লোক 1.4.7 বলে যে, ঋষি বাল্মীকি মহাকাব্যের জন্য তিনটি নাম কল্পনা করেছিলেন: 'রামায়ণ' (রামের পথ), 'সীতায়াস্করিতাং মহাত' (সীতার মহান কাহিনী) এবং 'পৌলস্ত্য বধ' ( রাবণের হত্যার গল্প)৷

পূর্ণ কাণ্ডটিও উত্তর কাণ্ডের মতোই বড় এবং ভিন্নধর্মী ৷ এটি যুদ্ধ কাণ্ডের পরবর্তী অধ্যায় ৷ ঋষি বাল্মীকি মহাকাব্যের অন্যতম শিরোনাম হিসাবে রাবণ হত্যাকে বেছে নিতেন না । এই শিরোনামগুলি একে অপরের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হয়ে উঠবে, যদি না কাহিনিটি রামের রাজ্যাভিষেকের সঙ্গে শেষ হয় ।

কয়টি কাণ্ড ?

শ্লোক 1.4.2 (বালা কাণ্ড) স্পষ্টভাবে বলেছে যে, ঋষি বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেছিলেন 6টি কাণ্ডে ('ষট কাণ্ডানি')। অধিকন্তু, এটি বলে যে রামায়ণে সর্গের সংখ্যা প্রায় 500 ('সর্গ শতান পাঞ্চ')।

অন্যদিকে, উত্তর কাণ্ডকে রামায়ণের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মনে করা হলে তা উপরের কথার বিরোধিতা করবে: কাণ্ডের সংখ্যা 7 হবে, আর সর্গের সংখ্যা 650-এর কাছাকাছি আসবে ।

ফলশ্রুতি

যে কোনও সাহিত্যকর্মের শেষে একটি ছোট অংশ থাকে, যা সেই সাহিত্য পড়ার বা শোনার উপকারিতা ঘোষণা করে (ফলশ্রুতি)। এটি একটি প্যাটার্ন, যা খুব কঠোরভাবে মেনে চলা হয় ।

শ্লোক 1.1.90 থেকে 1.1.97 পর্যন্ত বালা কাণ্ডে রামরাজ্যের বর্ণনা রয়েছে । এটি অনুসরণ করে আমরা দেখতে পাই যে, শ্লোক 1.1.98 থেকে 1.1.100 তে ফলশ্রুতি রয়েছে । সেই অনুসারে, শ্লোক 6.128.95 থেকে 6.128.106 পর্যন্ত যুদ্ধ কাণ্ডে রামরাজ্যের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যা 10,000 বছর ধরে চলেছিল ('দশ বর্ষ সহস্রাণী রাম রাজ্যমাকারায়েত')। এটি অনুসরণ করে, শ্লোক 6.128.107 থেকে 6.128.125 পর্যন্ত বিস্তারিতভাবে ফলশ্রুতি স্থাপন করে ।

ঋষি বাল্মীকি যদি রামায়ণকে 7টি কাণ্ডের মহাকাব্য হিসেবে কল্পনা করতেন, তাহলে তিনি কখনওই রামরাজ্যের বর্ণনা দিতেন না (ভবিষ্যৎ কাল), ষষ্ঠ কাণ্ড অর্থাৎ যুদ্ধ কাণ্ডের শেষেই একটি বিস্তৃত ফলশ্রুতি রয়েছে ৷

একজন দূতকে হত্যা করা

উত্তর কাণ্ড 13.39 বলে যে, ক্রোধান্বিত রাবণ তার খুড়তুতো ভাই কুবেরের পাঠানো দূতকে হত্যা করেছিল ('দূতাং খড়গেন জাগনিভান')। যখন রাবণ দেবতাদের সঙ্গে তার প্রাথমিক যুদ্ধ করছিলেন তখন এই পর্বটি ঘটে।

কালানুক্রমিকভাবে অনেক পরে, সুন্দর কাণ্ড সর্গ 52-এ, বিভীষণ হনুমানকে হত্যা করার জন্য রাবণের আদেশের বিরুদ্ধে পরামর্শ দেন । শ্লোক 5.52.15-এ, তিনি বলেছেন যে কেউ কখনও একজন দূতকে হত্যা করার কথা শোনেনি ('বধঃ তু দূতস্য ন নঃ শ্রুতো অপি')। এই ঘটনাটি ঘটে যুদ্ধের একেবারে দ্বারপ্রান্তে, তার মাত্র এক মাস আগে ।

উপরের দুটি বর্ণনা সরাসরি একে অপরের বিপরীত । কুবেরের দূতের কালানুক্রমিকভাবে পূর্বের ঘটনাটি যদি সত্যিই ঘটে থাকে, তবে বিভীষণ অবশ্যই তা জানতেন এবং, তিনি দাবি করতেন না যে রাবণ যখন হনুমানকে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন, তখন এমন কথা শোনা যায়নি ।

মহাভারতে রামায়ণের গল্প

মহাকাব্য মহাভারতের অরণ্য পর্বে ঋষি মারকাণ্ডেয় সর্গ 272 থেকে 289-তে ধর্মরাজের কাছে রামায়ণের গল্প বর্ণনা করেছেন । আমরা দেখতে পাই যে, গল্পের কয়েকটি উপাদান বাল্মীকি রামায়ণের অনুরূপ থেকে আলাদা ।

তথাপি, এই আখ্যান অনুসারেও, রামায়ণের কাহিনি সর্গ 289-এ রামের মুকুট পরিধানের মাধ্যমে শেষ হয় । স্পষ্টতই, মহাভারত রচিত হওয়ার পরে উত্তর কাণ্ডের লেখা তৈরি হয়েছিল ।

লব এবং কুশ রামায়ণ পাঠ করে

বালা কাণ্ডের 1.4.27 থেকে 1.4.29 শ্লোকে, রাম অযোধ্যার রাস্তায় রামায়ণ পাঠরত দুই তপস্বী বালক লব এবং কুশকে দেখতে পেয়েছিলেন । তিনি তাদের তার প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন এবং যথাযথভাবে তাদের সম্মান করলেন । লব এবং কুশ তখন রামের দরবারে রামায়ণ পাঠ করলেন ।

অন্যদিকে, উত্তর কাণ্ডের সর্গ 94 বলে যে, রামের অশ্বমেধ যজ্ঞের (ঘোড়া বলির আচার) অনুষ্ঠানের বিরতির সময় লব এবং কুশ রামায়ণ পাঠ করেছিলেন । নৈমিষারণ্যে গোমতী নদীর তীরে এটি হয় । এই তথ্য একে অপরের বিরোধিতা করে: দুটির মধ্যে শুধুমাত্র একটিই বৈধ হতে পারে ।

সীতাকে ত্যাগ

উত্তর কাণ্ডের শ্লোক 42.29 অনুসারে, রাম এবং সীতা রাজকীয় সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করে 10,000 বছর একসঙ্গে বসবাস করেছিলেন: "দশবর্ষ সহস্রাণি গাতানি সুমহাত্মনোঃ প্রপ্তায়র্ভিভিধান ভোগান"। তারপর, সীতা বনে ঋষি ও তপস্বীদের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন । অতঃপর, সর্গ 43-এ, ভাদ্র রামকে অযোধ্যার কিছু পুরুষ সম্পর্কে অবহিত করেন, যাঁরা রামের সীতাকে গ্রহণ করাকে সমালোচনা করছিলেন ৷ রাবণ তাঁর জায়গায় এক বছরের জন্য আটকে রেখেছিলেন সীতাকে ৷

এটা হাস্যকর যুক্তি যে, রাজ্যের মুকুট পরার পর 10,000 বছর ধরে রামের সীতাকে গ্রহণের সঙ্গে একমত ছিলেন অযোধ্যার নাগরিকরা, কিন্তু তার পরেই এই বিষয়ে তাঁদের অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল । তখন যুক্তি দেখানো হয় যে, তাঁদের আপত্তি শুনে রাম সীতাকে ত্যাগ করেছিলেন ৷ এটি স্পষ্ট চরিত্রহনন । এটি যুক্তিযুক্ত হিসাবে মানার অযোগ্য ।

উপসংহার

এইভাবে, আমরা দৃঢ় ভিত্তিতে এই উপসংহারে পৌঁছতে পারি যে, উত্তর কাণ্ড মহাকাব্য রামায়ণে অনেক পরে লেখা হয়েছিল, এবং তাতে কিছু সংযোজন করা হয়েছিল ৷ এবং সেই সংশোধন করা হয়েছিল মহাকাব্যের মূল পাঠের খসড়াটিকে বিশ্বাসযোগ্যতা দেওয়ার জন্যই । অতএব, উত্তর কাণ্ড মহাকাব্যেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ নয় ।

Last Updated : Aug 25, 2024, 2:06 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.