ETV Bharat / lifestyle

কেন চক্ষুদানের মধ্যে দিয়ে পুজো শুরু হয় আগমেশ্বরী কালী'র ?

13 ফুট উচ্চতার মাতৃ মূর্তি জ্বলজ্বল করে ৷ উচ্চতা বেশি হওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় বিসর্জনের পথে যাওয়া প্রত্যেকটি রাস্তার আলোর।

KALI PUJA 2024
আগমেশ্বরী কালীমা (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 4 hours ago

শান্তিপুর, 28 অক্টোবর: চক্ষুদানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় পুজো ৷ 400 বছর ধরে চিরাচরিত প্রথা মেনে পূজিত হন দেবী আগমেশ্বরী কালীমাতা ৷ ভক্তদের দেওয়া দানে সোনার অলংকারে মোড়া মাতৃমূর্তি ৷

পুজোর ইতিহাস-

আজ থেকে প্রায় আনুমানিক 400 বছর আগে আগমেশ্বরী কালীপুজো শান্তিপুরে শুরু করেছিলেন সার্বভৌম আগমবাগীশ। এই সার্বভৌম আগমবাগীশ ছিলেন পণ্ডিত কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের প্রপৌত্র। তিনি ছিলেন তন্ত্রসাধক। তাঁরা আগমশাস্ত্রজ্ঞ ছিলেন বা সেই শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য লাভ করেছিলেন বলে তাদের আগমবাগীশ উপাধি দান করা হয়। সেইসময় শাক্ত ও বৈষ্ণবদের মধ্যে বিরোধ চলছিল বলেই শোনা যায় ৷ তাই শান্তিপুরের অদ্বৈতাচার্য্যের পৌত্র মথুরেশ গোস্বামী শক্তি আর ভক্তির মিলনের আশায় তাঁর কন্যার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন সার্বভৌম আগমবাগীশের।

দেবী আগমেশ্বরী কালীমাতা (ইটিভি ভারত)

এর ফল তো আশানুরূপ হয়নি, বরং জটিলতা আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় মথুরেশ গোস্বামী তাঁর কন্যা-সহ জামাইকে নিয়ে চলে আসেন শান্তিপুরে। মথুরেশ গোস্বামী শান্তিপুরে তাঁর বসতবাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি পঞ্চমুণ্ডির আসন স্থাপন করে দেন তাঁর জামাইয়ের তন্ত্রচর্চার জন্য। সেখানেই সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন সার্বভৌম আগমবাগীশ। মায়ের নির্দেশে তিনি গঙ্গা থেকে মাটি নিয়ে এসে মূর্তি নির্মাণ করে পুজো করেন তারপরই মূর্তি বিসর্জন দিয়ে দেন ৷

এই প্রাচীন প্রথা আজও হয়ে আসছে মা আগমেশ্বরীর পুজোয়। বর্তমানে এই পঞ্চমুণ্ডির আসন সংলগ্ন স্থানটি আগমেশ্বরীতলা নামেই পরিচিত। এভাবে ঐতিহ্যের সঙ্গে ও আধ্যাত্মিকতার এক উজ্জ্বলতম প্রকাশ দেখা যায় শান্তিপুরের আগমেশ্বরীর পুজোয়। এ তো গেল মাতা আগমেশ্বরীর ইতিহাসের কথা ৷ কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে বেশকিছু সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়।

KALI PUJA 2024
13 ফুট উচ্চতার মাতৃ মূর্তি (নিজস্ব ছবি)

বর্তমান পুজো-

শান্তিপুরের বড় গোস্বামী বাড়ির বংশধরদের অবদান থাকলেও এখন আগমেশ্বরী মাতা পুজো সমিতি এই পুজো পরিচালন করে। মায়ের ভোগের ক্ষেত্রে রয়েছে অনন্য নিয়ম ৷ বৈষ্ণবমতে দক্ষিণা কালীরূপে পূজিত হোন দেবী আগমেশ্বরী ৷ তাই বড় গোস্বামী বাড়ির গৃহবধূরা নিরামিষ পদে মায়ের ভোগ রান্না করেন।

আগমেশ্বরী মাতাকে ভোগ নিবেদন-

ভক্তবৃন্দদের প্রসাদের জন্য কয়েক কুইন্টাল ভোগ রান্নার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও দেবী এতটাই জাগ্রত যে ভক্তদের মনস্কামনা অবশ্যই পূরণ হয় ৷ আর তার কারণে ভক্তদের দেওয়া দানে মাতা আগমেশ্বরীর মাতৃ মূর্তি সোনা এবং রুপোর অলংকারে মুড়ে ফেলা হয়।

KALI PUJA 2024
আগমেশ্বরী মাতার মন্দির (নিজস্ব ছবি)

মায়ের সজ্জা-

প্রায় 13 ফুট উচ্চতার মাতৃ মূর্তি জ্বলজ্বল করে এখানে ৷ শুধু নদিয়া নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য ভক্তবৃন্দ পুজোর দিন সকাল থেকেই ছুটে আসেন শান্তিপুরে আগমেশ্বরী মাতার মন্দিরে। দেবীর বিসর্জনের সময় রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ ৷ মাতৃ মূর্তির উচ্চতা বেশি হওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় বিসর্জনের পথে যাওয়া প্রত্যেকটি রাস্তার আলোর।

শান্তিপুর, 28 অক্টোবর: চক্ষুদানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় পুজো ৷ 400 বছর ধরে চিরাচরিত প্রথা মেনে পূজিত হন দেবী আগমেশ্বরী কালীমাতা ৷ ভক্তদের দেওয়া দানে সোনার অলংকারে মোড়া মাতৃমূর্তি ৷

পুজোর ইতিহাস-

আজ থেকে প্রায় আনুমানিক 400 বছর আগে আগমেশ্বরী কালীপুজো শান্তিপুরে শুরু করেছিলেন সার্বভৌম আগমবাগীশ। এই সার্বভৌম আগমবাগীশ ছিলেন পণ্ডিত কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের প্রপৌত্র। তিনি ছিলেন তন্ত্রসাধক। তাঁরা আগমশাস্ত্রজ্ঞ ছিলেন বা সেই শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য লাভ করেছিলেন বলে তাদের আগমবাগীশ উপাধি দান করা হয়। সেইসময় শাক্ত ও বৈষ্ণবদের মধ্যে বিরোধ চলছিল বলেই শোনা যায় ৷ তাই শান্তিপুরের অদ্বৈতাচার্য্যের পৌত্র মথুরেশ গোস্বামী শক্তি আর ভক্তির মিলনের আশায় তাঁর কন্যার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন সার্বভৌম আগমবাগীশের।

দেবী আগমেশ্বরী কালীমাতা (ইটিভি ভারত)

এর ফল তো আশানুরূপ হয়নি, বরং জটিলতা আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় মথুরেশ গোস্বামী তাঁর কন্যা-সহ জামাইকে নিয়ে চলে আসেন শান্তিপুরে। মথুরেশ গোস্বামী শান্তিপুরে তাঁর বসতবাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি পঞ্চমুণ্ডির আসন স্থাপন করে দেন তাঁর জামাইয়ের তন্ত্রচর্চার জন্য। সেখানেই সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন সার্বভৌম আগমবাগীশ। মায়ের নির্দেশে তিনি গঙ্গা থেকে মাটি নিয়ে এসে মূর্তি নির্মাণ করে পুজো করেন তারপরই মূর্তি বিসর্জন দিয়ে দেন ৷

এই প্রাচীন প্রথা আজও হয়ে আসছে মা আগমেশ্বরীর পুজোয়। বর্তমানে এই পঞ্চমুণ্ডির আসন সংলগ্ন স্থানটি আগমেশ্বরীতলা নামেই পরিচিত। এভাবে ঐতিহ্যের সঙ্গে ও আধ্যাত্মিকতার এক উজ্জ্বলতম প্রকাশ দেখা যায় শান্তিপুরের আগমেশ্বরীর পুজোয়। এ তো গেল মাতা আগমেশ্বরীর ইতিহাসের কথা ৷ কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে বেশকিছু সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়।

KALI PUJA 2024
13 ফুট উচ্চতার মাতৃ মূর্তি (নিজস্ব ছবি)

বর্তমান পুজো-

শান্তিপুরের বড় গোস্বামী বাড়ির বংশধরদের অবদান থাকলেও এখন আগমেশ্বরী মাতা পুজো সমিতি এই পুজো পরিচালন করে। মায়ের ভোগের ক্ষেত্রে রয়েছে অনন্য নিয়ম ৷ বৈষ্ণবমতে দক্ষিণা কালীরূপে পূজিত হোন দেবী আগমেশ্বরী ৷ তাই বড় গোস্বামী বাড়ির গৃহবধূরা নিরামিষ পদে মায়ের ভোগ রান্না করেন।

আগমেশ্বরী মাতাকে ভোগ নিবেদন-

ভক্তবৃন্দদের প্রসাদের জন্য কয়েক কুইন্টাল ভোগ রান্নার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও দেবী এতটাই জাগ্রত যে ভক্তদের মনস্কামনা অবশ্যই পূরণ হয় ৷ আর তার কারণে ভক্তদের দেওয়া দানে মাতা আগমেশ্বরীর মাতৃ মূর্তি সোনা এবং রুপোর অলংকারে মুড়ে ফেলা হয়।

KALI PUJA 2024
আগমেশ্বরী মাতার মন্দির (নিজস্ব ছবি)

মায়ের সজ্জা-

প্রায় 13 ফুট উচ্চতার মাতৃ মূর্তি জ্বলজ্বল করে এখানে ৷ শুধু নদিয়া নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য ভক্তবৃন্দ পুজোর দিন সকাল থেকেই ছুটে আসেন শান্তিপুরে আগমেশ্বরী মাতার মন্দিরে। দেবীর বিসর্জনের সময় রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ ৷ মাতৃ মূর্তির উচ্চতা বেশি হওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় বিসর্জনের পথে যাওয়া প্রত্যেকটি রাস্তার আলোর।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.