কালনা, 26 নভেম্বর: একদিকে নির্বাক থেকে সবাক চলচ্চিত্রের সৃষ্টি তাঁর হাত ধরে। আবার তাঁর হাত ধরেই শুরু হয়েছিল বাংলা চলচিত্রের প্লে ব্যাক সিঙ্গিং কিংবা ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক। সেই দেবকী কুমার বসুর 125তম জন্মদিন উপলক্ষে পূর্ব বর্ধমানের কালনা-2 ব্লকের অকালপৌষ গ্রামে এসে সিনেমার শুটিং করা হবে বলে জানালেন দেবকী কুমার বসুর নাতি তথা দেব কুমার বসুর ছেলে দেবাশিস বসু। দেবকী কুমার বসুর জন্মভিটেতে আসতে পেরে উচ্ছ্বসিত অভিনেতা শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ও।
দেবকী কুমার বসুর 125তম জন্মদিনে তাঁর জন্মভিটে কালনার অকালপৌষ গ্রামে দেবকী কুমার বসু স্মৃতি রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে গ্রামের বারোয়ারী তলায় শিল্পীর আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেবকী কুমার বসুর নাতি প্রযোজক দেবাশিস বোস, চিত্রাভিনেতা শুভাশিস মুখোপাধ্যায়-সহ অন্যান্যরা। সেই জন্মভিটেকে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হবে। গড়ে তোলা হবে একটা সংগ্রহশালা বলে জানা গিয়েছে।
চিত্রাভিনেতা শুভাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, "আমি আপ্লুত-অভিভূত। আমি ভাগ্যবান যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি সেই জায়গায় জন্মেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের স্রষ্ট্রা যাঁর হাত ধরে নির্বাক থেকে সবাক চলচ্চিত্রের সৃষ্টি হয়েছিল ৷ সেই দেবকী কুমার বসুর ছেলে দেব কুমার বসুর সঙ্গে আমি কাজ করেছি। দেবকী কুমার বসু চলচ্চিত্রের অনেক কিছু সৃষ্টি করেছেন। যেমন বাংলা চলচিত্রের প্রথম প্লে-ব্যাক সিঙ্গিং (play back singing) তাঁর হাত ধরে শুরু হয়েছিল।"
শুভাশিস আরও বলেন, "আজ যে আমরা সিনেমার পর্দায় গান শুনি। গানে সিনেমায় যাঁরা অভিনয় করেন, লিপ দেন কিন্তু গান গায় অন্য শিল্পী। সেটা প্রথম বাংলা সিনেমায় প্রবর্তন হয়েছিল দেবকী কুমার বসুর হাত ধরে। আজ আমরা বাংলা সিনেমাতে দৃশ্যের পেছনে আবহসঙ্গীত শুনতে পাই। যাকে আমরা বলি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ৷ এই ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিকের স্রষ্টাও দেবকী কুমার বসু। নির্বাক যুগ ও তার পরবর্তী কালে দিনের আলোতে শুটিং হত। কৃত্রিম আলোতে কোন শুটিং হত না। কৃত্রিম আলোর প্রবর্তন করেন দেবকী কুমার বসু। তিনি আন্তর্জাতিক পুরস্কার, জাতীয় পুরস্কার, পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত। তাঁর 125তম জন্মদিনে জন্মভিটেতে আসতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।"
দেবকী কুমার বসুর নাতি প্রযোজক দেবাশিস বোস বলেন, "অকালপৌষ গ্রাম থেকে সারা পৃথিবীতে দেবকী কুমার বসুর নাম ছড়িয়ে পড়ে। এই ভিটেমাটিতে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমার দাদু দেবকী কুমার বসুর যে বাড়ি সেই বাড়িকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তোলা হবে। যাতে মানুষজন ঘুরতে আসতে পারেন। গড়ে তোলা হবে একটা সংগ্রহশালা। যাতে গ্রামের মানুষ বলতে পারেন এই গ্রামের মানুষ ছিলেন দেবকী কুমার বসু। এখানে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। গ্রামবাসীরা যে 125 বছর পরেও দেবকী কুমার বসুকে মনে রেখেছেন সেটা দেখে আমি আপ্লুত। আমরা সিনেমা ছাড়া অন্য কিছু শিখিনি। দাদু-বাবার হাত ধরেই আমাদের পথচলা। আমার ইচ্ছা আছে এই অকালপৌষ গ্রামেই সিনেমার শুটিং করব।"