কলকাতা, 23 অগস্ট: একদিকে যখন আরজি করের ঘটনায় উত্তপ্ত বাংলা, অন্যদিকে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে নারী সুরক্ষা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। একের পর এক অভিনেত্রী নাম না করে প্রকাশ্যে আনছেন তাঁদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া পরিচালকের অভব্য আচরণের কাহিনি ৷ এই ঘটনা শুধু বাংলায় নয়, বাংলার বাইরেও ঘটে প্রতিনিয়ত ৷ কোচিতে শুটিং করতে গিয়ে এমনই অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হতে হয়েছিল অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রকেও। ইটিভি ভারতের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন 15 বছর আগেকার সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা।
শ্রীলেখা মিত্র ইটিভি ভারতকে বলেন, "2009 সালে আমাকে এখান থেকে মিস্টার জোশি যোশেফ নামে একজন যোগাযোগ করেন যে একটা মালয়ালম ছবি হচ্ছে, ওরা তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তখন আমার স্বামীর সঙ্গে আমার সমস্যা চলছে। একইসঙ্গে তখন 'বন্ধন' সিরিয়াল করছি। এই কাজটা এল। ভাবলাম বাড়ি থেকে ক'দিন বেরিয়ে যাই। মামোটির সঙ্গে কাজ, প্যারিসে আর কোচির একটা গ্রামে শুটিং হবে। আমাকে টিকিট পাঠিয়ে দেওয়া হল। ডিরেক্ট ফ্লাইট ছিল না। ভেঙে ভেঙে যেতে হয়েছিল। আমাকে নিজেরই জামাকাপড় নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। পাসপোর্ট ক্যারি করতে বলা হল। আমি সব নিয়ে পৌঁছলাম। ফাইভস্টার সুইট দেওয়া হল। সেদিনই পরিচালকের সঙ্গে দেখা করার জন্য গাড়ি পাঠানো হল। আমি গেলাম। দেখা করলাম। হ্যান্ডসাম, ইয়ং ডিরেক্টর। কয়েকটা শ্যুট হল। সন্ধেতে ডাকা হল। বলা হল প্রোডিউসাররা আসবে। ছোট্ট একটা গ্যাদারিং হবে। পৌঁছলাম।"
শ্রীলেখা সেই সন্ধের ঘটনা সম্বন্ধে আরও বলেন, "অনেকে এখন আমাকে মদ্যপ প্রমাণ করতে চাইছে। কিন্তু আমার বাড়িতে একটাও মদের বোতল পাবে না। আউটডোরে গিয়েও আমি পান করি না। আমি এদিক থেকে জাতে মাতাল তালে ঠিক। সেদিনও আমি ড্রিঙ্ক নিইনি। হালকা আলো জ্বলছে ঘরে। সিনেমাটোগ্রাফার বেনু গোপালের সঙ্গে ডিরেক্টরের কথা হচ্ছিল। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ছবির সূত্রে বেণু গোপাল দা'র সঙ্গে কাজ করেছি আমি। পরিচালক আমাকে বললেন, বেণু গোপাল জি'র সঙ্গে কথা বলবেন? আমিও ফোনটা নিলাম। ব্যালকনিতে গিয়ে কথা বলছি। পরিচালক আমার চুরি নিয়ে খেলতে শুরু করলেন। আমি ভাবলাম হয়ত আমি একটু বেশিই চিন্তা করছি। কিন্তু অস্বস্তি হচ্ছিল। পরে গলার কাছে সুড়সুড়ি দেন। তখন আমি ফোনটা ওঁর হাতে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ওর পরের একজনকে বলি আমি আর কাজটা করব না..."
শ্রীলেখা আরও জানান, "আমি প্যারিসে শুটিংয়ে আমার হেয়ার ড্রেসারকে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে ছবির টিম আপত্তি জানায়। সেদিন রাতে বুঝতে পারি কেন ওরা আমার হেয়ার ড্রেসারকে নিতে চায়নি। সেই রাতে ওদেরই দেওয়া গাড়ি নিয়ে হোটেলে ফিরি। নিদ্রাহীন রাত কাটাই। ড্রইং রুমে আগল দিচ্ছিলাম। সোফা দিয়ে দরজা আটকে রেখেছিলাম যদি কেউ ধাক্কা দিয়ে আমার দরজা খুলে দেয়..."
অভিনেত্রী বলেন, "হাজব্যান্ডকে জানানোর অবস্থাতেও ছিলাম না তখন। কেন না তখন আমার সবটা অন্যরকম। প্রোডিউসারকে ফেরার টিকিটের ব্যবস্থা করে দিতে বললাম। কিছুই করলেন না। একটা সময়ের পর ফোনও ধরলেন না। পরদিন আমি ট্যাক্সি ডেকে এয়ারপোর্ট গেলাম। দুটো ফ্লাইট পরপর ছিল। নিজের থেকে 23 হাজার টাকা খরচ করে ফ্লাইটে করে কলকাতায় ফিরি। 'বন্ধন'-এ জানিয়ে দিয়ে গিয়েছিলাম তাই ওরা তখন আমাকে রিপ্লেস করার কথাও ভেবেছিল। "
এই মুহূর্তে কলকাতায় যখন দিকে দিকে পরিচালকদের বিরুদ্ধে অভিনেত্রীরা অভিযোগের তীর উঁচু করছেন তখন কেরালা সরকার 'হেমা কমিটি' গঠন করেছে। যেখানে একজন অভিনেত্রী এগিয়ে এসে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। যাঁরা এসবের শিকার তাঁদের নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, যারা এহেন কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে সোচ্চার হচ্ছেন। এখানেও এরকম হওয়া উচিত বলে মনে করেন শ্রীলেখা মিত্র। তিনি বলেন, "জানি না এখানে কতজন মেয়ে সাহস করে কথা বলবে। কেননা যারা কাজ দেয় তাঁদের মেয়েরা ভয় পায়। যদি আর কাজ না পায়। আমি চার বছর আগে যখন কথাগুলো বলেছিলাম তখন কিছু মিডিয়া আমাকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিল। আজ দুধ কা দুধ পানি কা পানি। আজ তৃণমূলের লোকজন বলছে আমার কাজ নেই। সত্যিই তো নেই। আমি তো কারোর ধামাধারী নই। আবার এই কথাও তো ঠিক এখানে অনেকে মেয়ে হওয়ার সুযোগটাও কাজে লাগায়।"
15 বছর আগেকার কথা। একপ্রকার ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল সেই ঘটনা। আজ এতদিন পর কেরালা সরকার হেমা কমিটি গঠন করেছে। যেখানে একজন অভিনেত্রী এগিয়ে এসে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সঙ্গে রয়েছেন আরও কয়েকজন অভিনেত্রী ৷ যাঁরা নানা সময়ে এহেন ঘটনার শিকার হয়েছেন। তাঁরা তাঁদের কথা সাহস করে জানিয়ে এগিয়ে এসেছেন বিচার চেয়ে। জানা গিয়েছে, যাঁরা ওই সব দোষে অভিযুক্ত তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে।