ETV Bharat / entertainment

উৎপল দত্তর সিনেমা দেখে ভাবতাম দুষ্টু লোক, আসলে যে মহীরুহ: ঋষভ বসু - Utpal Dutt Death Anniversary

Utpal Dutt Death Anniversary: উৎপল দত্তর প্রয়াণ দিবসে তাঁর স্মৃতিতে ভাসলেন এই প্রজন্মের মঞ্চ তথা রুপোলি পর্দার অভিনেতা ঋষভ বসু । তাঁর কথায় উঠে এল বাংলা থিয়েটার তথা ভারতের থিয়েটারের তিন প্রাণপুরুষের নাম ৷

ETV BHARAT
উৎপল দত্তের স্মৃতিচারণায় ঋষভ বসু (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 19, 2024, 4:57 PM IST

কলকাতা, 19 অগস্ট: তিনি ফেলুদার মগনলাল মেঘরাজ । তিনিই হীরক রাজা । বাঙালি উৎপল দত্তকে ভুলবে এই বুকের পাটা এখনও তৈরি করে উঠতে পারেনি । আজ তাঁর প্রয়াণ দিবসে জনপ্রিয় এই মানুষটিকে তাঁর শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন মঞ্চ তথা রুপোলি পর্দার অভিনেতা ঋষভ বসু । তাঁর ভাবনায় শিল্পী উৎপল দত্তের পাশাপাশি তুলে ধরলেন মানুষ উৎপল দত্তকে ৷

1993 সালে মাত্র 64 বছর বয়সে জীবনাবসান হয় উৎপল দত্তের ৷ গোড়া থেকেই নাট্যজগতের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই মানুষ হঠাৎই চলে এসেছিলেন সিনেমার দুনিয়ায় । 'জয় বাবা ফেলুনাথ' থেকে 'হীরক রাজার দেশে' হোক বা 'আগন্তুক' কিংবা 'জন অরণ্য'। হিন্দিতে 'গুড্ডি', 'গোলমাল'-সহ একাধিক ছবিতে পার্শ্বচরিত্রকে কীভাবে কেন্দ্রীয় চরিত্র করে তোলা যায় তা অভিনয় দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন উৎপল দত্ত । সিনেমায় আসার পিছনেও ছিল নাটকের হাত । 'মিনার্ভা থিয়েটার'কে বাঁচাতে সিনেমা জগতে আসেন তিনি । 1950 দশকের শেষ দিকে 'মিনার্ভা থিয়েটার'কে তিনি লিজে নিয়েছিলেন । আর সেই লিজ নিতে গিয়েই তাঁর বিপুল দেনা হয়ে যায় । দেনা মেটাতে সিনেমায় যোগ দেন । সেখানেও হয়ে যান রুপোলি পর্দার রাজা ।

এহেন নাট্যপ্রেমী তথা নাট্য পূজারীকে তাঁর প্রয়াণ দিবসে অর্ঘ্য নিবেদন করলেন এই প্রজন্মের মঞ্চ তথা রুপোলি পর্দার অভিনেতা ঋষভ বসু ।
ঋষভ বলেন, "ওঁর মতো মানুষকে ব্যাখ্যা করার স্পর্ধা আমার নেই । তবে, যেটুকু অনুভব করি সেটা আজ বলব । উৎপল দত্তর সঙ্গে আমার প্রাথমিক পরিচয় সিনেমা থেকে । প্রথম দেখি 'অমানুষ' ছবিতে । এরপর 'হীরক রাজার দেশে' এবং 'আগন্তুক'। তখন ছোটবেলায় অভিনয় কী তা বোঝার মতো বোধ হয়নি । কিন্তু ফ্যাসিনেটেড হয়ে যেতাম সিনেমা দেখে । ভাবতাম, এই লোকটা সত্যিই দুষ্টু লোক । পরে যখন বড় হয়ে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হলাম তখন ওঁর লেখা নাটক, প্রবন্ধ পড়ার সুযোগ হল । মোহিত হয়ে যেতাম । 'টিনের তলোয়ার'-এর একটি অডিয়ো পেলাম এক বন্ধুর কাছ থেকে । মনে আছে, আমি টানা সাত দিন প্রত্যেক রাতে 'টিনের তলোয়ার' শুনতাম এবং যখনই শুনতাম চোখের সামনে উৎপল দত্ত, শোভা সেন, ছন্দা সেন, অসিত বসুকে দেখতে পেতাম । উৎপল দত্ত'র কোনও কাজ আমি মঞ্চে দেখতে পারিনি । আমার দুর্ভাগ্য ।"

ঋষভ আরও বলেন, "বাংলা থিয়েটার তথা ভারতের থিয়েটারের প্রাণপুরুষ হিসেবে তিনজনের নাম নিতেই হয় । উৎপল দত্ত, শম্ভু মিত্র, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় । নাটক করতে গিয়ে অনুভব করেছি বা অগ্রজদের থেকে জেনেছি এঁরা যে ভাবে থিয়েটারের ভাষাকে এবং থিয়েটারকে একটা জীবনযাপনে পরিণত করেছিলেন সত্যিই মনে রাখার মতো । এঁদের মধ্যে অবশ্য উৎপল দত্ত অদ্ভুত ছিলেন । একই সময়ে তিনি বলিউড ছবিতে, বাংলা কমার্শিয়াল ছবিতে ভিলেনের রোল করছেন, যারপরনাই স্ট্রাগল করছেন, তখন জানতাম না যে ওই স্ট্রাগলটা ছিল থিয়েটারের জন্য। এবং নাট্যকার হিসেবে ওঁর যে নাটকগুলি পরবর্তী সময়ে পড়েছি, যেমন 'দুঃস্বপ্নের নগরী', 'কল্লোল', 'ব্যারিকেড', 'টিনের তলোয়ার'- তখন ফ্যাসিনেটেড হয়ে গিয়েছি, এই যে একটা মানুষ কীভাবে নিজের দুটো সত্ত্বাকে আলাদা করেও দু'জায়গায় সমানভাবে বিরাজমান ।"

ঋষভ তাঁর মনন দিয়ে বিচার করে বলেছেন, "খুব বেশি মানুষ মনে রাখে না উৎপল দত্তকে । কেননা মানুষ হিরোদের কথা বেশি মনে রাখে । কিন্তু উৎপল রিয়েল লাইফে হিরো । আদর্শগত দিক থেকে কোনও দিন বিচ্যুত হননি উনি । আদর্শ নিয়েই থিয়েটার করেছেন, ঝগড়া করে গিয়েছেন, সেই আদর্শ নিয়েই লড়ে গিয়েছেন, সেই আদর্শ নিয়েই সিনেমা করে গিয়েছেন । আমার মনে হয় এই মুহূর্তে বাংলায় থিয়েটার হোক বা সিনেমা- উৎপল দত্তকে আরও বেশি করে স্মরণ করা উচিত । উনি একজন মহীরুহ ।"

'বহুরূপী'তে থিয়েটার করেছেন ঋষভ । সেই সূত্র টেনে অভিনেতা স্মৃতিতে ভাসেন, "আমি প্রায় 6 বছর 'বহুরূপী'তে নাটক করেছি । সেই সুবাদে 'বহুরূপী'র বহু পুরনো ম্যাগাজিন পড়ার সুযোগ হয়েছে । 1998 সালে 'বহুরূপী' একটা সংখ্যা বের করে । যেটা ওদের পঞ্চাশতম সংখ্যা ছিল । পুরোটাই ছিল 'রক্তকরবী' নিয়ে । উৎপল দত্তের দুটি লেখা ছিল সেখানে । একটিতে 1954 সালে 'রক্তকরবী' দেখে শম্ভু বাবু এবং 'বহুরূপী'র উপর বিরক্ত হওয়ার কথা লিখেছেন । আক্রমণ করছেন 'বহুরূপী' এবং শম্ভু মিত্রকে । দ্বিতীয়বার 1963-তে নিজেকে রেক্টিফাই করে লিখছেন, "ওই সময়ে আমি 'রক্তকরবী' ধরতে পারিনি সেটা আমার অপারগতা ৷ এর মতো ফিলোজফি, এরকম বিপ্লবী নাটক, এরকম মানুষের কথা বলা নাটক আর দুটো হয় না । শম্ভু বাবুকে কুর্নিশ ।"

ঋষভ বলেন, "যে শিল্পী নিজেকে সমালোচনা করে সেই বড় শিল্পী । আমরা নিজেকে সংশোধন বা সমালোচনা করি না । এটা উৎপল দত্তই পারতেন ।"

কলকাতা, 19 অগস্ট: তিনি ফেলুদার মগনলাল মেঘরাজ । তিনিই হীরক রাজা । বাঙালি উৎপল দত্তকে ভুলবে এই বুকের পাটা এখনও তৈরি করে উঠতে পারেনি । আজ তাঁর প্রয়াণ দিবসে জনপ্রিয় এই মানুষটিকে তাঁর শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন মঞ্চ তথা রুপোলি পর্দার অভিনেতা ঋষভ বসু । তাঁর ভাবনায় শিল্পী উৎপল দত্তের পাশাপাশি তুলে ধরলেন মানুষ উৎপল দত্তকে ৷

1993 সালে মাত্র 64 বছর বয়সে জীবনাবসান হয় উৎপল দত্তের ৷ গোড়া থেকেই নাট্যজগতের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই মানুষ হঠাৎই চলে এসেছিলেন সিনেমার দুনিয়ায় । 'জয় বাবা ফেলুনাথ' থেকে 'হীরক রাজার দেশে' হোক বা 'আগন্তুক' কিংবা 'জন অরণ্য'। হিন্দিতে 'গুড্ডি', 'গোলমাল'-সহ একাধিক ছবিতে পার্শ্বচরিত্রকে কীভাবে কেন্দ্রীয় চরিত্র করে তোলা যায় তা অভিনয় দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন উৎপল দত্ত । সিনেমায় আসার পিছনেও ছিল নাটকের হাত । 'মিনার্ভা থিয়েটার'কে বাঁচাতে সিনেমা জগতে আসেন তিনি । 1950 দশকের শেষ দিকে 'মিনার্ভা থিয়েটার'কে তিনি লিজে নিয়েছিলেন । আর সেই লিজ নিতে গিয়েই তাঁর বিপুল দেনা হয়ে যায় । দেনা মেটাতে সিনেমায় যোগ দেন । সেখানেও হয়ে যান রুপোলি পর্দার রাজা ।

এহেন নাট্যপ্রেমী তথা নাট্য পূজারীকে তাঁর প্রয়াণ দিবসে অর্ঘ্য নিবেদন করলেন এই প্রজন্মের মঞ্চ তথা রুপোলি পর্দার অভিনেতা ঋষভ বসু ।
ঋষভ বলেন, "ওঁর মতো মানুষকে ব্যাখ্যা করার স্পর্ধা আমার নেই । তবে, যেটুকু অনুভব করি সেটা আজ বলব । উৎপল দত্তর সঙ্গে আমার প্রাথমিক পরিচয় সিনেমা থেকে । প্রথম দেখি 'অমানুষ' ছবিতে । এরপর 'হীরক রাজার দেশে' এবং 'আগন্তুক'। তখন ছোটবেলায় অভিনয় কী তা বোঝার মতো বোধ হয়নি । কিন্তু ফ্যাসিনেটেড হয়ে যেতাম সিনেমা দেখে । ভাবতাম, এই লোকটা সত্যিই দুষ্টু লোক । পরে যখন বড় হয়ে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হলাম তখন ওঁর লেখা নাটক, প্রবন্ধ পড়ার সুযোগ হল । মোহিত হয়ে যেতাম । 'টিনের তলোয়ার'-এর একটি অডিয়ো পেলাম এক বন্ধুর কাছ থেকে । মনে আছে, আমি টানা সাত দিন প্রত্যেক রাতে 'টিনের তলোয়ার' শুনতাম এবং যখনই শুনতাম চোখের সামনে উৎপল দত্ত, শোভা সেন, ছন্দা সেন, অসিত বসুকে দেখতে পেতাম । উৎপল দত্ত'র কোনও কাজ আমি মঞ্চে দেখতে পারিনি । আমার দুর্ভাগ্য ।"

ঋষভ আরও বলেন, "বাংলা থিয়েটার তথা ভারতের থিয়েটারের প্রাণপুরুষ হিসেবে তিনজনের নাম নিতেই হয় । উৎপল দত্ত, শম্ভু মিত্র, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় । নাটক করতে গিয়ে অনুভব করেছি বা অগ্রজদের থেকে জেনেছি এঁরা যে ভাবে থিয়েটারের ভাষাকে এবং থিয়েটারকে একটা জীবনযাপনে পরিণত করেছিলেন সত্যিই মনে রাখার মতো । এঁদের মধ্যে অবশ্য উৎপল দত্ত অদ্ভুত ছিলেন । একই সময়ে তিনি বলিউড ছবিতে, বাংলা কমার্শিয়াল ছবিতে ভিলেনের রোল করছেন, যারপরনাই স্ট্রাগল করছেন, তখন জানতাম না যে ওই স্ট্রাগলটা ছিল থিয়েটারের জন্য। এবং নাট্যকার হিসেবে ওঁর যে নাটকগুলি পরবর্তী সময়ে পড়েছি, যেমন 'দুঃস্বপ্নের নগরী', 'কল্লোল', 'ব্যারিকেড', 'টিনের তলোয়ার'- তখন ফ্যাসিনেটেড হয়ে গিয়েছি, এই যে একটা মানুষ কীভাবে নিজের দুটো সত্ত্বাকে আলাদা করেও দু'জায়গায় সমানভাবে বিরাজমান ।"

ঋষভ তাঁর মনন দিয়ে বিচার করে বলেছেন, "খুব বেশি মানুষ মনে রাখে না উৎপল দত্তকে । কেননা মানুষ হিরোদের কথা বেশি মনে রাখে । কিন্তু উৎপল রিয়েল লাইফে হিরো । আদর্শগত দিক থেকে কোনও দিন বিচ্যুত হননি উনি । আদর্শ নিয়েই থিয়েটার করেছেন, ঝগড়া করে গিয়েছেন, সেই আদর্শ নিয়েই লড়ে গিয়েছেন, সেই আদর্শ নিয়েই সিনেমা করে গিয়েছেন । আমার মনে হয় এই মুহূর্তে বাংলায় থিয়েটার হোক বা সিনেমা- উৎপল দত্তকে আরও বেশি করে স্মরণ করা উচিত । উনি একজন মহীরুহ ।"

'বহুরূপী'তে থিয়েটার করেছেন ঋষভ । সেই সূত্র টেনে অভিনেতা স্মৃতিতে ভাসেন, "আমি প্রায় 6 বছর 'বহুরূপী'তে নাটক করেছি । সেই সুবাদে 'বহুরূপী'র বহু পুরনো ম্যাগাজিন পড়ার সুযোগ হয়েছে । 1998 সালে 'বহুরূপী' একটা সংখ্যা বের করে । যেটা ওদের পঞ্চাশতম সংখ্যা ছিল । পুরোটাই ছিল 'রক্তকরবী' নিয়ে । উৎপল দত্তের দুটি লেখা ছিল সেখানে । একটিতে 1954 সালে 'রক্তকরবী' দেখে শম্ভু বাবু এবং 'বহুরূপী'র উপর বিরক্ত হওয়ার কথা লিখেছেন । আক্রমণ করছেন 'বহুরূপী' এবং শম্ভু মিত্রকে । দ্বিতীয়বার 1963-তে নিজেকে রেক্টিফাই করে লিখছেন, "ওই সময়ে আমি 'রক্তকরবী' ধরতে পারিনি সেটা আমার অপারগতা ৷ এর মতো ফিলোজফি, এরকম বিপ্লবী নাটক, এরকম মানুষের কথা বলা নাটক আর দুটো হয় না । শম্ভু বাবুকে কুর্নিশ ।"

ঋষভ বলেন, "যে শিল্পী নিজেকে সমালোচনা করে সেই বড় শিল্পী । আমরা নিজেকে সংশোধন বা সমালোচনা করি না । এটা উৎপল দত্তই পারতেন ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.