নয়াদিল্লি, 8 জুলাই: মেডিক্যাল এন্ট্রান্স পরীক্ষা নিট-ইউজি 2024 এর স্বচ্ছতা যদি ‘হারিয়ে গিয়ে’ থাকে এবং যদি এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস হয়ে থাকে, তাহলে পুনরায় পরীক্ষার আদেশ দিতে হবে । সোমবার এই কথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার ও ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি বা এনটিএ-র কাছে জবাব তলব করেছে আদালত ৷ জানতে চেয়েছে, প্রশ্ন ফাঁসের সময় এবং প্রশ্ন ফাঁস ও পরীক্ষার মধ্য়ে সময়ের পার্থক্য কতটা ছিল ?
এ দিন এই মামলার শুনানি হয় দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চে ৷ শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি জানান, যদি প্রশ্নপত্র টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে তো দাবানলের মতো ছড়িয়েছে বলতে হয় ৷ একই সঙ্গে আদালত নিশ্চিত যে এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল ৷ সেকথা শুনানির সময় বেঞ্চের তরফেই উল্লেখ করা হয় ৷ এই নিয়ে তদন্ত করছে সিবিআই ৷ আগামী 11 জুলাই পরবর্তী শুনানিতে সিবিআইয়ের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে আদালত ৷
আদালত বলেছে, "পরীক্ষার স্বচ্ছতা নষ্ট হলে পুনরায় পরীক্ষার আদেশ দিতে হবে । আমরা যদি দোষীদের চিহ্নিত করতে না পারি, তাহলে পুনরায় পরীক্ষার নির্দেশ দিতে হবে ।" আদালতের আরও বক্তব্য, ‘‘প্রশ্ন ফাঁসের যে কথা বলা হচ্ছে, তা পদ্ধতিগত স্তরে হয়েছে কি না, পুরো পরীক্ষার প্রক্রিয়াকে তা প্রভাবিত করেছে কি না এবং সৎ পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে জালিয়াতির সুবিধাভোগীদের আলাদা করা সম্ভব কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।" আদালত আরও বলে, "এমন পরিস্থিতিতে যদি পুরো প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব পড়ে, এবং অন্যদের থেকে সুবিধাভোগীদের আলাদা করা সম্ভব না হয়, তাহলে পুনরায় পরীক্ষার আদেশের প্রয়োজন হতে পারে ৷"
এর সঙ্গে আদালতের সংযোজন যে সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে থাকলে, আবার পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে ৷ আদালতের আরও বলেছে, "যা হয়েছে সেই সম্পর্কে আমাদের অন্তত নিজেদের অস্বীকার করার জায়গা থেকে সরে আসতে হবে ৷ অনুমান করে সরকার পরীক্ষা বাতিল করে না, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করতে কী করবে ?"
বিতর্কিত নিট-ইউজি 2024 নিয়ে 30টি আবেদন জমা পড়েছিল সুপ্রিম কোর্টে ৷ সেই আবেদনগুলি একত্রে নিয়ে এ দিন শুনানি হয় শীর্ষ আদালতে ৷ যে আবেদনগুলি নিয়ে এ দিন শুনানি হয়, তার মধ্যে এই পরীক্ষার অব্যবস্থা সংক্রান্ত অভিযোগ ও নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিও ছিল ৷
সেই শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের আরও পর্যবেক্ষণ, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, এটার থেকে বড় বিষয় সেই ফাঁসের মাত্রা কেমন ছিল ৷ আদালত এখন সেটাই বিচার করে দেখছে ৷ 67 জন পরীক্ষার্থী, যাঁরা 720-র মধ্য়ে 720 পেয়েছিল, তাঁদের নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে ৷ পূর্ববর্তী বছরগুলিতে এই পরিসংখ্যান অনেক কম ছিল ৷ আদালত জানতে যায়, প্রশ্ন ফাঁসের জন্য কতজন পরীক্ষার্থীর সুবিধা হয়েছিল ? এই নিয়ে কেন্দ্রের তরফে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ? কতজনের রেজাল্ট আটকে রাখা হয়েছে ? যাঁরা লাভবান হয়েছেন, তাঁদের ভৌগলিক অবস্থান কী ?
গুজরাত থেকে সুপ্রিম কোর্টে এই নিয়ে 50টি আবেদন জমা পড়েছে ৷ সেখানে পরীক্ষা বাতিল না করার আবেদন করা হয়েছে ৷ অনেকে আবার পরীক্ষা বাতিল করার আবেদন নিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ৷ কেন্দ্র এবং নিট-ইউজি পরীক্ষার পরিচালক সংস্থা এনটিএ সম্প্রতি তাদের হলফনামায় শীর্ষ আদালতকে জানিয়েছে যে কোনও প্রমাণ ছাড়াই পরীক্ষা বাতিল করা হলে সৎ পরীক্ষার্থীদের মধ্য়ে বিপরীত প্রভাব পড়বে ৷
যে 1538 জন পরীক্ষার্থীকে গ্রেস মার্কস দেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করার কথাও গত 13 জুন আদালতে জানিয়েছিল এনটিএ ৷ এই পরীক্ষার্থীদের ফের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বা সময়ের ক্ষতির জন্য দেওয়া ক্ষতিপূরণমূলক মার্কসগুলি ছেড়ে দেওয়ার বিকল্প দেওয়া হয়েছিল । গত 23 জুন ফের পরীক্ষা নেয় এনটিএ ৷ সেই অনুযায়ী গত 1 জুলাই ফের ফলাফল প্রকাশ করা হয় ৷ সেখানে দেখা যায় 61 জন শীর্ষস্থানে রয়েছেন ৷
উল্লেখ্য, ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট-আন্ডারগ্র্যাজুয়েট বা নিট-ইউজি নামের এই পরীক্ষা নেওয়া হয় এমবিবিএস, বিডিএস ও আয়ুষ এবং অন্যান্য মেডিক্যাল সংক্রান্ত পড়াশোনায় সরকারি বা বেসরকার কলেজে ভরতির প্রবেশিকা হিসেবে ৷ এনটিএ এই পরীক্ষা নেয়৷ গত 5 মে এই পরীক্ষা হয়েছিল ৷ কিন্তু সেই পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ৷ এই নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই তোলপাড় দেশ ৷ বিরোধীরা কেন্দ্রের সরকারের বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছে ৷ এখন দেখার সুপ্রিম কোর্ট পরবর্তী শুনানিতে এই নিয়ে কী নির্দেশ দেয় !