ওয়েনাড়, 13 নভেম্বর: তিনি এলেন, দেখলেন ৷ প্রথম নির্বাচনে জয়ী হলেন কি না, তার জানা যাবে 23 নভেম্বর ৷ বুধবার সকালে বহুচর্চিত ওয়েনাড় লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথ ঘুরে নির্বাচন কেমন হচ্ছে, তা সরেজমিনে দেখলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধি ৷
তাঁর প্রথম নির্বাচনে ভোট পড়েছে প্রায় 65 শতাংশ, যা গতবারের তুলনায় কিছুটা কম ৷ চলতি বছরের এপ্রিলে হওয়া লোকসভা নির্বানে 74 শতাংশের কাছাকাছি ভোট পড়েছিল ৷ সেবার প্রার্থী ছিলেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধি ৷ এর আগে 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে 80 শতাংশেরও বেশি ভোট পড়েছিল ৷ প্রার্থী ছিলেন রাহুলই ৷ তাঁর ছেড়ে দেওয়া আসনটিতে বোন প্রিয়াঙ্কাকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস ৷
উপ-নির্বাচনের দিন সকালে হলুদ শাড়ি পরিহিতা রাজীব-তনয়াকে দেখে আপ্লুত কংগ্রেস কর্মী থেকে শুরু করে ভোটাররা ৷ সকাল 7টায় ভোট শুরু হওয়ার পর প্রথম দিকে ভালোই ভোট পড়ছিল ৷ মনে হচ্ছিল যেন আগের থেকেও বেশি ভোট পড়বে ৷ কিন্তু বেলা গড়াতেই সেই আশা ক্রমে ফিকে হয়ে গেল ৷ ভোটের হার 50 শতাংশ পেরতে 8 ঘণ্টা সময় লেগে গেল ৷
সন্ধ্যা 6টায় নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত হিসেব অনুযায়ী ওয়েনাড় লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়েছে 64.69 শতাংশ ৷ কমিশন জানিয়েছে, এই হিসেব চূড়ান্ত নয় ৷ অনেক বুথেই ভোটারদের লাইন ছিল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৷
বাবা পারেননি, এখন শাহজাদা ষড়যন্ত্র করছেন ! নাম না-করে রাহুল-রাজীবকে তোপ মোদির
কেরল বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ভিডি সাথিসানের মতে, সিপিআই(এম)-এর প্রভাব যে জায়গাগুলিতে, সেখানে মানুষের মধ্যে ভোট দেওয়ার উৎসাহটা কম ৷ অন্যদিকে এলডিএফ এবং বিজেপির নেতৃত্বে গঠিত এনডিএফ এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে ৷ তাদের পাল্টা যুক্তি, কংগ্রেস এবং তার জোটদলগুলির প্রভাব যে জায়গাগুলিতে রয়েছে, সেখানকার মানুষই ভোট দেননি ৷
এদিকে ত্রিশূরের চেলাক্কারা বিধানসভা কেন্দ্রে 72.54 শতাংশ ভোট পড়েছে, যা রেকর্ড ৷ নির্বাচন কমিশন মনে করছে, এই হার আরও বাড়তে পারে ৷ কারণ, অনেকেই সময় শেষের পরেও ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ৷ উপনির্বাচন হয়েছে একেবারে কড়া প্রহরায় ৷ তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি ওয়েনাড়ে ৷ শুধু ওয়েনাড় ও চেলাক্কারার কয়েকটি বুথে ইভিএম ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে ৷ তড়িঘড়ি বন্দোবস্ত করেছেন নির্বাচনী আধিকারিকরা ৷
গত জুলাই মাসে বিধ্বংসী ভূমিধসে ওয়েনাড়বাসীদের অনেকেই তাঁদের পরিবারের সদস্যদের থেকে শুরু করে বাড়িঘর হারিয়েছেন ৷ তাঁদের জন্য বুথগুলিতে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল ৷ ওই বিপর্যয়ের পর তাঁদের অনেকেই বুথে এসে বহুদিন পর প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের দেখতে পেলেন ৷ ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিনামূল্যে গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যাতে তাঁরা দূর থেকেও সহজে এবং দ্রুত বুথে আসতে পারেন ৷
নির্বাচন কমিশন জানাচ্ছে, ওয়েনাড়ে নথিভুক্ত ভোটারের সংখ্যা 14 লক্ষ ৷ এদিন সকাল থেকে 1 হাজার 354টি বুথে বেশ ভালোই চলছিল ভোটপর্ব ৷ ওয়েনাড়ে সর্বত্র ছুটি ছিল এদিন ৷ ওয়েনাড় লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে সাতটি বিধানসভা আছে- মানাথাভাডি (তফশিলি উপজাতি), সুলতান বাথেরি (তফশিলি উপজাতি) এবং ওয়েনাড় জেলার কালপেট্টা ৷ এছাড়া কোঝিকোড় জেলার তিরুভামবাডি এবং এরানাড, মালাপ্পুরম জেলার নিলাম্বুর ও ওয়ানডুর ৷
চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের অন্যতম শক্তিশালী কেন্দ্র আমেঠি থেকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধির প্রার্থী হওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল ৷ কিন্তু তা হয়নি ৷ সেখানে প্রার্থী হন গান্ধি পরিবারের ঘনিষ্ঠ কিশোরী লাল শর্মা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে হারিয়ে তিনি জয়ী হন ৷ অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলি এবং কেরলের ওয়েনাড় থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধি ৷ তখন তাঁর জন্য নির্বাচনী প্রচারে দেখা গিয়েছিল প্রিয়াঙ্কাকে ৷ দু'টি কেন্দ্র থেকেই রাহুল বিপুল ভোটে জয়ী হন ৷ তাছাড়া 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনেও রাহুল গান্ধি ওয়েনাড় থেকে রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়েছিলেন ৷ তাই ওয়েনাড় যে কংগ্রেস তথা গান্ধি পরিবারের শক্তিশালী ঘাঁটি তা বলাই যায় ৷
পরে রাহুল গান্ধি ওয়েনাড় কেন্দ্র থেকে ইস্তফা দেন এবং রায়বরেলি আসনটি রেখে দেন ৷ ফলে ফাঁকা হয়ে যায় তাঁর প্রিয় ওয়েনাড় ৷ তখনই জল্পনা ছিল যে, দাদার ছেড়ে দেওয়া আসনে প্রার্থী হতে পারেন প্রিয়াঙ্কা ৷ 17 জুন একটি সাংবাদিক বৈঠক করে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ঘোষণা করেন ওয়েনাড় থেকে লোকসভা নির্বাচন লড়বেন প্রিয়াঙ্কা ৷ রাহুল গান্ধিও সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ৷
এই কেন্দ্রে 16 জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৷ কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কার বিরুদ্ধে আছেন সিপিআই(এম)-এর নেতৃত্বে গঠিত এলডিএফ জোটের প্রার্থী সত্যান মোকেরি এবং বিজেপির নব্যা হরিদাস ৷ ভোট শেষে ওয়েনাড়বাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধি ৷ প্রথম থেকেই ওয়েনাড় নিয়ে আবেগী ছিলেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ৷