বারাণসী, 5 নভেম্বর: স্ত্রী ও তিন সন্তানকে গুলি ব্যক্তির ৷ ঘটনাটি ঘটেছে বারাণসীর ভেলুপুর থানা এলাকার ভাদাইনি পাওয়ার হাউসের কাছে ৷ খবর পেয়ে ভেলুপুর থানার ঊর্ধ্বতন আধিকারিক ও ফরেন্সিক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ৷ সংগ্রহ করা হয় নমুনা ৷ পলাতক অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে রোহনিয়া থানার সদরপুর গ্রামে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ।
জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের নাম রাজেন্দ্র গুপ্ত ৷ বারাণসীর ভাদাইনি এলাকায় পাওয়ার হাউসের কাছে পরিবারের সঙ্গে থাকত সে । তার বাড়িতে 15 থেকে 20 জন ভাড়াটে থাকেন । মঙ্গলবার বিকেলে স্ত্রী নীতু (45) ও দুই ছেলে নবনেন্দ্র গুপ্তা (25), সুবেন্দ্র গুপ্তা (15) ও মেয়ে গৌরাঙ্গী গুপ্তাকে (16) গুলি করে রাজেন্দ্র ।
খুনের পর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় সে । তবে চারজনকে খুনের খবরে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায় । প্রতিবেশীদের দেওয়া খবরে পুলিশ এসে তদন্তের জন্য ফরেনসিক দলকে ডেকে পাঠায় । ঘটনাস্থলে রাজেন্দ্র গুপ্তের মাকে পাওয়া গেলেও বয়সের ভারে তিনি হাঁটতে পারেন না । তবে এই ঘটনায় 15 থেকে 20 জন ভাড়াটে কেউ কিছু বলতে প্রস্তুত নয় ।
জানা গিয়েছে, এর আগে ছোট ভাই কৃষ্ণ গুপ্তা ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যার মামলায় জেল খেটেছে রাজেন্দ্র । 22 বছর আগে, একই বাড়িতে ছোট ভাই ও তার স্ত্রীকে খুন করেছিল সে । পরে তাকে গ্রেফতার করা হয় । এই ঘটনার কয়েকদিন পর রাজেন্দ্রর বাবা লক্ষ্মী নারায়ণ গুপ্তা ও তাঁর সঙ্গে থাকা দুই রক্ষী বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে খুন হন । যদিও তা কে করেছে এখনও জানা যায়নি । তবে এক্ষেত্রে সন্দেহ ছিল রাজেন্দ্রর উপর । বর্তমানে পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে ।
প্রতিবেশীদের বক্তব্য
প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গিয়েছে, স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে প্রতিদিনই ঝগড়া হত রাজেন্দ্রর । প্রচুর পৈতৃক সম্পত্তি থাকায় অর্থের অভাব ছিল না পরিবারে । প্রায় 5 থেকে 7টি ঘর রয়েছে তাদের । লাখ টাকা আসে শুধু ঘর ভাড়া থেকে । নীতু ছিলেন রাজেন্দ্রর দ্বিতীয় স্ত্রী । তবে দ্বিতীয়বার বিয়ে করা নিয়েও চিন্তিত ছিল অভিযুক্ত । এই কারণে প্রায়ই স্ত্রী-র সঙ্গে গোলমাল হত । এছাড়া রাজেন্দ্র গুপ্ত আজকাল কোনও কোনও জ্যোতিষীর কথায় প্রভাবিত হয়েছিলেন । জ্যোতিষী জানিয়েছিলেন, স্ত্রী নাকি রাজেন্দ্রর কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন । সেই কারণে রাজেন্দ্র তাকে পথ থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল ৷ প্রতিদিন স্ত্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে মনোমালিন্য হত । মারামারিও হত দু'জনের ৷
প্রতিবেশী গোবিন্দ মিশ্র জানান যে, মা-স্ত্রী এবং প্রতিবেশী ছাড়াও অন্যান্য লোকের সঙ্গেও রাজেন্দ্রর আচরণ খুব একটা ভালো ছিল না । সম্প্রতি পাড়ায় বাড়ি নির্মাণ নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধ হয় তার । এ ছাড়া বাড়িতে প্রতিদিনই ঝগড়া হত । ভাই, ভগ্নিপতি, বাবা এবং প্রহরীদের হত্যার পর খুব দাপটের জীবনযাপন করত রাজেন্দ্র ৷ তার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন নীতু । রাজেন্দ্রর প্রথম স্ত্রীর থেকেও দুটি সন্তান রয়েছে । তবে 1997 সালে প্রথম স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কলকাতায় চলে যান এবং এখন সেখানেই থাকেন । এরপর রাজেন্দ্র দ্বিতীয় বিয়ে করে । এরপরই শুরু হয় বিতর্ক । বাবা দ্বিতীয় বিয়ের বিরুদ্ধে ছিলেন, কিন্তু রাজেন্দ্র কারও কথায় কান দেয়নি । বিয়ের পর পরিস্থিতির অবনতি হয় এবং সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ বেড়ে যায় ।
রাজেন্দ্রর সম্পত্তি প্রীতি :
কোটি টাকার সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী ছিল রাজেন্দ্র ৷ ভাই ও বাবার হত্যার পর এক আধিপত্যময় জীবনযাপন করেছিল সে । ভেলুপুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা শুনে সবাই হতবাক হয়ে যায় ৷ রাজেন্দ্রের ভাবমূর্তি খুবই কঠোর এবং অপরাধমূলক ছিল । 1997 সালে ভাই কৃষ্ণ গুপ্ত এবং তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করে রাজেন্দ্র ৷ এই ঘটনার তিন মাস পরে বাবা লক্ষ্মীনারায়ণ গুপ্ত এবং তার দুই প্রহরীর হত্যার মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল রাজেন্দ্র । 2004 সালে জামিনে মুক্ত হয় রাজেন্দ্র ।
রাস্তা লাগোয়া রাজেন্দ্রর যে বাড়ি আছে সেটা খুবই সরু । এখানে প্রায় 45টি ঘরবিশিষ্ট একটি বাড়ি রয়েছে তার ৷ এই বাড়িটি শুধুমাত্র রাজেন্দ্র ও তার মায়ের নামে । যদিও পুরো সম্পত্তির দেখাশোনা করত রাজেন্দ্রর স্ত্রী নীতু । তার কাছে ভাড়াটেদের কাছ থেকে আসা প্রায় লক্ষাধিক টাকার হিসাবের বইও ছিল । এর বাইরে আরও দুটি সম্পত্তির ভাড়াও পেয়েছেন নীতু । এ নিয়ে নীতু ও রাজেন্দ্রর মধ্যে প্রতিদিনই ঝগড়া হত ।
কাশী জোনের ডিসিপি গৌরব বানসওয়াল জানিয়েছেন যে, ঘটনার পিছনে একটি পারস্পরিক বিবাদ সামনে আসছে । রাজেন্দ্র গুপ্ত সন্দেহজনক প্রকৃতির ছিলেন । ঘটনাটি ঘটেছে ভোরে । প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে সবাই তখন তাদের ঘরে ঘুমোচ্ছিল । তবে স্ত্রী নীতু, দুই ছেলে ও মেয়েকে হত্যার পর রাজেন্দ্র গুপ্তের লাশ উদ্ধারের পর হত্যারহস্য জটিল হয়ে উঠেছে । ঘটনাস্থল থেকে প্রায় 12 কিলোমিটার দূরে আখড়িতে তার নির্মাণাধীন বাড়িতে রাজেন্দ্রর মৃতদেহ পাওয়া যায় । রাজেন্দ্র গুপ্তের মৃতদেহ উদ্ধারের পর পুলিশের তদন্তের গতিপথ পাল্টেছে ।
ভাড়াটিয়া ও বন্ধুদের বক্তব্য :
মালিকের আত্মহত্যার খবর মেনে নিতে পারছেন না রাজেন্দ্রর বাড়িতে থাকা ভাড়াটিয়া ও আশেপাশের লোকজন । রাজেন্দ্রর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, শিশুদের দেখাশোনা করত রাজেন্দ্র । স্ত্রীকেও সম্মান করত ৷ অত্যন্ত সম্প্রীতির সঙ্গে নিজের পরিবারের যত্ন নিত । তবে কারও কারও কথায়, রাজেন্দ্র একজন নিষ্ঠুর মানুষ ছিল । ভাড়া দিতে দেরি হলে ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করত । বাড়িতে অতিথি বা ছোট বাচ্চা এলে ভাড়া বাড়িয়ে দিত । ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে প্রতিদিনই ঝগড়া হত । আশপাশের লোকজনের সঙ্গেও কথা বলত না রাজেন্দ্র । আশপাশের লোকজন তার সঙ্গে কথা বলতে এড়িয়ে যায় ।