ইন্দোর, 17 ডিসেম্বর: রাস্তায় গরিব, দুঃস্থদের হাতে সামান্য অর্থ ভিক্ষা দেওয়ার ইচ্ছে হতেই পারে ৷ কিন্তু ভারতের একটি শহরে এমনটা করলে কপালে জুটতে পারে কড়া শাস্তি ৷ এমনকী ভিক্ষে দিতে গিয়ে ধরা পড়লে যিনি ভিক্ষে দিচ্ছেন, তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর পর্যন্ত দায়ের করতে পারে প্রশাসন ৷ এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর প্রশাসন ৷
কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক ভারতের দশটি শহরকে ভিখারি-মুক্ত শহর হিসেবে গড়ে তোলার পাইলট প্রজেক্টের কাজ শুরু করেছে ৷ ইন্দোর তার মধ্যে অন্য়তম ৷ ইন্দোরকে 'মডেল বেগার ফ্রি' শহরে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন ৷ অর্থাৎ শহরের কোথাও কোনও ভিখারি থাকবে না ৷
এই প্রসঙ্গে সোমবার ইন্দোরের কালেক্টর আশিস সিং সাংবাদিকদের বলেন, "ভিক্ষাবৃত্তির বিরুদ্ধে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত আমরা প্রচার চালিয়ে যাব ৷ 2025 সালের 1 জানুয়ারি থেকে ভিক্ষা দিলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ ভিখারিদের ধরে ত্রাণশিবিরে পাঠানো হবে ৷ আর যাঁরা ভিক্ষা দেবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে ৷ কেউ ভিক্ষা দিতে গিয়ে ধরা পড়লে এফআইআর দায়ের করা হতে পারে ৷" |
প্রশাসনের এহেন ভিখারি নির্মূলকরণে নাগরিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন কালেক্টর ৷ তিনি বলেন, "আমি ইন্দোরের সব বাসিন্দাদের কাছে আবেদন জানাব, মানুষকে ভিক্ষা দিয়ে পাপের ভাগীদার হবেন না ৷"
এমন কড়া পদক্ষেপ কেন ?
এই ব্যবস্থার নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে ৷ শহরের আনাচেকানাচে অনেক ভিখারির কাছ থেকে যথেষ্ট অর্থ পাওয়া গিয়েছে বলে খবর ৷ এদিকে তাঁরা ভিক্ষাবৃত্তিকে জীবিকা হিসাবে গ্রহণ করেছে। দিব্য রোজগার চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ বহু মানুষ অভ্যাসবশত ভিক্ষাবৃত্তি করে থাকেন ৷ সম্প্রতি তল্লাশি অভিযান চালিয়ে তাঁদের কাছ থেকে যে অর্থ পাওয়া গিয়েছে, তাতে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড় ৷
কালেক্টর বলেন, "এক মহিলার কাছে 75 হাজার টাকা এবং তার আগে আরেকজন ভিখারির কাছ থেকে এক লক্ষেরও বেশি টাকা উদ্ধার হয়েছে ৷ এতেই বোঝা যায়, কত লোক ভিক্ষাবৃত্তিকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছে ৷"
প্রশাসনের পরিকল্পনা
ইন্দোরে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে ভিখারিদের পুনর্বাসন দেওয়া হচ্ছে ৷ অনেককে উজ্জ্বয়িনীর সেবাধাম আশ্রম-সহ বিভিন্ন রিহ্যাব সেন্টারে পাঠানো হয়েছে ৷ সেখানে তাঁরা বিশেষ প্রশিক্ষণ পাবেন বলে জানান আশিস সিং ৷ তিনি বলেন, "যাঁরা আর কোনও উপায় না-পেয়ে বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করেন, তাঁদেরও স্বনির্ভর হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ৷ যাতে তাঁরা জীবন যাপনের মতো অর্থ উপার্জন করতে পারেন ৷"
দারিদ্র্য, শারীরিক অসুস্থতা, বেকারত্বের মতো নানাবিধ কারণে মানুষ ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিতে বাধ্য হয় ৷ আবার এর পিছনে কাজ করে বড় গ্যাং ৷ তারা এই ধরনের মানুষকে বেছে নিয়ে ভিক্ষা করতে পাঠায় ৷ ভিক্ষায় পাওয়া অর্থের একটা বড় অংশই চলে যায় ওই গ্যাংয়ের কাছে ৷ এই দিকটিও মাথায় রেখেছে ইন্দোর প্রশাসন ৷ আশিস বলেন, "আমরা এমন অনেক গ্যাংকে ধরেছি, যারা মানুষকে ভিক্ষা চাইতে বাধ্য করে ৷"
এছাড়া প্রতিবেশী রাজ্যগুলি থেকেও বহু মানুষ ভিক্ষা করতে ইন্দোরের পথেঘাটে ভিড় জমায় ৷ তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় সাময়িক বসবাস করে ৷ কোথাও ধরা পড়লে সেই জায়গা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় ৷ তাদেরও হাতেনাতে পাকড়াও করার পরিকল্পনা করেছে প্রশাসন ৷ ভিক্ষাবৃত্তির অবসানে শহরজুড়ে তুমুল প্রচার চালাচ্ছে ইন্দোর প্রশাসন ৷
আগামী বছরের 1 তারিখ থেকে যেন শহরে কোথাও কোনও ভিখারি চোখে না পড়ে সেই ব্যাপারে সচেতন করার কাজ শুরু হয়েছে ৷ কালেক্টর আশিস সিং বলেন, "আমরা ইন্দোরকে আদর্শ ভিখারি-বিহীন শহরে পরিণত করতে বদ্ধপরিকর ৷ বাসিন্দাদের কাছে আর্জি, প্রশাসনের এই উদ্যোগে তাঁরাও সামিল হন ৷ 2025 সালের 1 জানুয়ারি থেকে কড়া বন্দোবস্ত কার্যকর করা হবে ৷"