কলকাতা, 1 ফেব্রুয়ারি: লোকসভা নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন । ভোটের মুখে এই বাজেট কেমন হল ? ভোটমুখী, নাকি জনমুখী ? এই নিয়ে প্রশ্নের জবাব জানতে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলল ইটিভি ভারত ।
অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ী বললেন, "এক কথায় বলতে গেলে প্রধানমন্ত্রী যেমন বলেন, 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা প্রয়াস', ঠিক এমনই বাজেট হয়েছে । অর্থাৎ সবার কথা চিন্তা করেই এই বাজেট তৈরি করা হয়েছে । সব দিক থেকেই এই বাজেট পরিপূর্ণ এবং গত 10 বছরে সমস্ত ক্ষেত্রেই এই বিকাশ লক্ষণীয় । দেশে 'দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি'। তাই দেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বের তালিকায় পাঁচ নম্বরে পৌঁছে গিয়েছে ।"
তিনি আরও বলেন যে, "দারিদ্রসীমার নিচে থাকা প্রায় 25 কোটি মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো হয়েছে । আর সবথেকে আনন্দের বিষয় হল, করের হার বাড়িয়ে সরকার খাজনা আদায় করছে । ঠিক একইভাবে রাজস্ব ঘাটতি কিন্তু বৃদ্ধি পায়নি । এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি কম হচ্ছে । এই বাজেট অত্যন্ত মঙ্গলময় বাজেট, যার সুফল দেশের মানুষ আগামী দিনে পাবে ।"
অশোক লাহিড়ী এ কথা বললেও অপর অর্থনীতিবিদ ব্যাসদেব দাশগুপ্ত আবার একেবারে উলটো কথা বললেন ৷ তিনি বলেন, "অত্যন্ত বাজে বাজেট হয়েছে । জনমানসে এর খুব খারাপ প্রভাব পড়বে । আয়করের হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে । মুদ্রাস্ফীতির হার চূড়ান্ত ভাবে বাড়ছে । এই অবস্থায় গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি আক্রান্ত । তাদের জন্য কোনও কিছু ভাবা হয়নি বাজেটে । তাদের কথা নিয়ে কোনও আলোচনা নেই । দেখানো হচ্ছে কিছু কিছু জিনিসের দাম কমেছে বেড়েছে । ভোটের আগে সরকার দাম কমানো নিয়ে কিছু গিমিক দিয়েই থাকে । নির্বাচন মিটতেই ফের ওইসব জিনিসের দাম চড়চড়িয়ে বাড়তে থাকে । ওই সব দেখিয়ে কোনও লাভ নেই । এখন থেকে 2047-এর পরিকল্পনা দেখানো হচ্ছে । আগে তো 2024 সালে কী করা উচিত সেটা ঠিক হোক । অথচ বাজেটে সেই বিষয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি । বলা হচ্ছে, ঋণ দেওয়া হবে । কিন্তু সাধারণ মানুষের তো ঋণ নেওয়ার ক্ষমতাই নেই । সে ঋণ নিয়ে কী করবে । তাকে তো ঋণ নেওয়ার পরে সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে । সেই দিশা তো দেখানো হয়নি । ফলে এটা একটা দিশাহীন বাজেট ছাড়া আর কিছুই নয় ।"
প্রসঙ্গত, বাজেট পেশ যাওয়ার আগে ইটিভি ভারত অর্থনীতিবিদ শান্তনু বসুর সঙ্গে কথা বলেছিল । তখন তিনি বলেন, "অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে আমার মনে হয় এই বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হবে না । কিন্তু এটা হলে আমি সত্যিই খুব খুশি হতাম । কিন্তু আমি একরকম নিশ্চিত যে, এই দুই খাতে অর্থবরাদ্দ বাড়ানো হবে না ।"
খুব তৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ বাজেটে এমনটাই দেখা গেল । কারণ শিক্ষার খাতে কোনও আর্থিক বরাদ্দের কথা জানানো হল না । তবে স্বাস্থ্যখাতে আয়ুষ্মান ভারতের অন্তর্গত হলেন আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা । আজ বাজেট পেশের পর শান্তনু বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন যে, "শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ হবে না সেটা খুব স্পষ্ট । কারণ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যর উন্নতি চোখে দেখা যায় না, এটা ভোগ করা হয় । ঠিক সেই কারণেই ঝাঁ চকচকে বন্দে ভারতের মতো 40 হাজার বগি তৈরির উপর জোর দেওয়া হল । অর্থাৎ যদি কোনও শিক্ষা বা স্বাস্থ্য প্রকল্প কারও নামাঙ্কিত হয়, তাহলে হয়তো সেই খাতে কিছু বাড়লেও বাড়তে পারত । এমনকি নিউ এডুকেশন পলিসি চালু করার জন্য যে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর প্রয়োজন, তার অভাব রয়েছে ৷ তাই ভেবেছিলাম এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য পরিকাঠামো উন্নতির উপর জোর দেওয়া হবে ।"
এর পাশাপাশি তিনি এও বলেন যে, এই বাজেটের একটি ইতিবাচক দিক হল, আইটি শিল্পের জন্য একটা বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে । ন্যূনতম অথবা বিনা সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৷ এই ঋণ যদি সত্যিকারের প্রয়োজন যাঁদের রয়েছে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া যায়, তাহলে কর্মসংস্থান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ আর এমনটা হলে দেশের জাতীয় সম্পদও বা জিডিপি বৃদ্ধি পাবে ।
আরও পড়ুন: