হায়দরাবাদ : বর্ষা মানেই মশাবাহিত রোগের মরশুম । বর্ষায় সবচেয়ে সাধারণ রোগগুলির মধ্যে একটি হল ডেঙ্গু । ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) মতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় 500,000 মানুষ প্রতি বছর ডেঙ্গুর কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয় । শুধুমাত্র ভারতে, সংখ্যাটি গত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে । ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (NVBDCP)-এর তথ্য অনুসারে, 2019 সালে, শুধুমাত্র ভারতেই 67,000 টিরও বেশি ডেঙ্গুর কেস নথিভুক্ত করা হয়েছিল ।
ডেঙ্গু সম্পর্কে আরও জানতে আমরা গাজিয়াবাদের সিনিয়র জেনারেল ফিজিশিয়ান ড. রাকেশ সিং-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম ৷ তিনি জানান, ডেঙ্গু একটি ভাইরাল সংক্রমণ, যা সংক্রমিত মহিলা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে । সেরোটাইপস, DENV-1, DENV-2, DENV-3 এবং DENV-4 মূলত এই চারটি ভাইরাস ডেঙ্গুর জন্য দায়ী ৷ এই ভাইরাস ব্যক্তির রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে । লক্ষণগুলি 4-10 দিনের মধ্যে প্রবল হয়ে ওঠে ৷
রোগের উপসর্গ গুলি কী কী?
ডাঃ রাকেশ জানান প্রবল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু সংক্রমণে হাড়ের সংযোগস্থল এবং পেশীতে তীব্র ব্যথা শুরু হয় । ডেঙ্গু জ্বর তিন ধরনের, মাইলড ডেঙ্গু ফিভার, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (ডিএইচএফ) এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (ডিএসএস)।
মাইলড ডেঙ্গুর লক্ষণ এমন হতে যা অন্য রোগের সঙ্গে সহজেই গুলিয়ে যেতে পারে । WHO উল্লিখিত উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে :
- জ্বর
- মাথাব্যথা
- চোখে ব্যথা
- পেশী এবং জয়েন্টে ব্যথা
- বমি বমি ভাব
- বমি
- ফুসকুড়ি
- ক্লান্তি
অন্যদিকে, রোগের তীব্র হলে যে যে লক্ষণ দেখা দেয় তারও একটি নির্দেশিকা দিয়েছে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন ৷ সিডিসি অনুসারে, "সাধারণত আপনার জ্বর চলে যাওয়ার 24-48 ঘন্টা পরে গুরুতর ডেঙ্গুর লক্ষণগুলি শুরু হয় । আপনার বা পরিবারের কোনও সদস্যের নিম্নলিখিত লক্ষণগুলির মধ্যে কোনওটি থাকলে অবিলম্বে তাঁকে স্থানীয় ক্লিনিকে নিয়ে যান।
- পেট ব্যথা
- বমি করা (24 ঘণ্টায় অন্তত 3 বার)
- নাক বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
- রক্ত বমি, বা মলের মধ্যে রক্ত
- ক্লান্তি বোধ করা
ডক্টর রাকেশ বলেন, "ডেঙ্গুর কোনও উপসর্গকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয় । এমনকি চিকিৎসায় সামান্য বিলম্বও অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে এবং অনেক সময় মৃত্যুও হতে পারে । যদিও ডেঙ্গুর কোনও সঠিক প্রতিকার নেই, তবে উপসর্গের ওপর নির্ভর করে ওষুধ, অক্সিজেন থেরাপি, রক্ত বা প্লেটলেট ট্রান্সফিউশন, ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড ইত্যাদির সাহায্যে রোগের চিকিৎসা করা হয় ।"
ডেঙ্গু প্রতিরোধ (how to prevent dengue ):
ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য প্রথম বিষয়টি হল মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে । এ জন্য মশা নিরোধিক স্প্রে, কয়েল, ক্রিম, মেশিন এবং রাতে শোয়ার সময় মশারি ব্যবহার করা যেতে পারে ।
আরও কিছু টিপস যা অনুসরণ করা যেতে পারে:
- যেহেতু ডেঙ্গুর মশা সকাল এবং সন্ধ্যার সময় বেশি সক্রিয় থাকে, তাই এই সময়ে বাইরে কম যান । তবে, অনিবার্য পরিস্থিতিতে, এমন পোশাক পরুন যা আপনার শরীরকে পুরোপুরি ঢেকে রাখে । এছাড়া মশা তাড়ানোর ক্রিম এবং রোল-অনও ব্যবহার করতে পারেন ।
- বাড়িতে এবং বাড়ির আশেপাশে কীটনাশক স্প্রে করে দিন এতে উপকার হতে পারে ।
- বাড়ির আশেপাশে প্রচুর গাছ বা ললাট লম্বা ঘাস থাকলে সেগুলিতে কীটনাশক স্প্রে করুন । এছাড়াও যদি সম্ভব হয়, ঘাস ছেঁটে দিন ৷
- আপনার বাড়ির আশেপাশে জল জমা হতে দেবেন না । নজর রাখুন বাড়ির চারপাশের ড্রেনগুলি পরিষ্কার এবং ঢাকা আছে কি না । এছাড়াও, আপনার যদি কুলার থাকে তবে নিয়মিত তার জল পরিবর্তন করুন ।
আরও পড়ুন : আশঙ্কা বাড়াচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিসট্যান্ট টাইফয়েড