রায়গঞ্জ, 29 অক্টোবর : প্রাচীন রীতি অনুযায়ী সূর্য অস্ত যাওয়ার পর কাঁচা দুধ ও কাঁচা মদ সহযোগে মাটি তৈরি করে শুরু হয় প্রতিমা নির্মাণের কাজ ৷ তারপর সেই প্রতিমা পুরোপুরি তৈরি করে রাতভর পুজো করার পর সূর্যোদয়ের আগেই তা নিরঞ্জন দিতে হয় ৷ প্রায় পাঁচশো বছর ধরে এমনই রীতি মেনে দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে পুজো হয়ে আসছে রায়গঞ্জ শহরের দেবীনগর কালীবাড়ির মন্দিরে ।
শুধু তাই নয়, দেবীর আদেশে এই মন্দিরের নেই কোনও ছাদ । চারিদিক দেওয়াল দিয়ে মন্দির ঘেরা থাকলেও খোলা আকাশের নিচের বেদিতেই পুজিতা হন পরম জাগ্রত দেবীনগর কালীবাড়ির মা ৷ এর পিছনেও রয়েছে একটি জনশ্রুতি ৷
কথিত আছে, রায়গঞ্জ শহরের দক্ষিণ প্রান্তে দেবীনগরের রাজপথের ধারে এই কালীমন্দিরে একসময় গাছের তলায় ডাকাতদল পুজো করত । দিনাজপুরের রাজা একবার এই পথ দিয়ে ভূপালপুর রাজবাড়ি যাওয়ার সময় এই স্থানে আটকে পড়েন । সেই সময় দেবী তাঁকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে এখানে মন্দির তৈরি করে পুজো করার নির্দেশ দেন । মন্দিরের চারিদিক পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হলেও দেবীর আদেশ ছিল, মন্দিরের মাথায় থাকবে না কোনও ছাদ বা আচ্ছাদন । রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, ঠান্ডা সবেতেই তিনি এখানে পুজিতা হবেন । মন্দির তৈরির পাশাপাশি কীভাবে পুজো করা হবে তাও দেবী স্বপ্নাদেশ দিয়ে দিনাজপুরের রাজাকে জানিয়েছিলেন ৷ সেই মতোই রায়গঞ্জ শহরের দেবীনগরে রাজপথের ধারে ছাদ খোলা মন্দির তৈরি করে দেন রাজা ।
সেই আদেশ অনুযায়ী আজও এখানে পুজো চলে আসছে ৷ সারাবছর পঞ্চমুন্ডির বেদিতে মায়ের নিত্য পুজো হলেও দীপান্বিতা অমাবস্যার এই একদিনেই দেবীমূর্তি গড়ে পুজো করে দিনের দিনই তা বিসর্জন দেওয়া হয় ৷ একটিবারের জন্যও এই রীতির অন্যথা হয়নি রায়গঞ্জ শহরের দেবীনগর কালীবাড়ির পুজোয় । দেবী মাহাত্ম্যের কারণে গোটা দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে কালীপুজোয় ভক্ত সমাগম হয় এখানে ৷ এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও অসম, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, বিহার ও অন্যান্য রাজ্য থেকে হাজার হাজার ভক্ত আসেন এখানে । তবে কোভিড বিধি থাকায় এবার মাস্ক ও ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ ছাড়া মন্দিরে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন ।
আরও পড়ুন : Kali Puja: 500 বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, পুরুলিয়ায় একই মন্দিরে ভদ্রকালী ও পীরের উপাসনা