রায়গঞ্জ, 12 মে: নেতাদের উপস্থিত বুদ্ধির অভাবেই দাঁড়িভিট হাইস্কুলের ঘটনা ঘটেছিল ৷ দাঁড়িভিট স্কুলে গুলিতে দুই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট ৷ আর সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই দলের নেতাদের রীতিমতো তুলোধনা করলেন ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক আবদুল করিম চৌধুরী ৷ তাঁর দাবি, এনআইএ তদন্তেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে ৷ যদিও বিধায়কের মন্তব্যে পালটা কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি জেলা এবং রাজ্য স্তরের নেতারা ৷
নিজেকে বিদ্রোহী বিধায়ক বলে আগেই ঘোষণা করেছিলেন আবদুল করিম চৌধুরী ৷ আর এরপর থেকেই লাগাতার বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্যের শাসকদলের প্রতি তোপ দেগে গিয়েছেন ইসলামপুরের বিধায়ক ৷ এবার দাঁড়িভিট স্কুলে দুই ছাত্রের অকাল মৃত্যুতে এনআইএ তদন্তে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে বলে মনে করেন আবদুল করিম চৌধুরী। দাঁড়িভিটে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই ছাত্রের রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় এনআইএ তদন্ত প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে শুক্রবার নাম না-করে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের তীব্র সমালোচনা করেন ইসলামপুরের বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী। বিধায়কের দাবি, নেতাদের উপস্থিত বুদ্ধির অভাবে দু'টো প্রাণ হারাতে হয়েছিল। তিনি বিধায়ক থাকলে হয়ত এমন ঘটনা ঘটত না বলেও দাবি করেন করিম চৌধুরী। তাঁর অভিযোগ, ঘটনার পর এলাকায় শুভেন্দু অধিকারী-সহ বড় নেতারা এলেও তাঁরা কেউ পুত্র হারানো মায়ের সঙ্গে দেখা করেননি। দলের নেতাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরী করার জন্যই শুভেন্দু অধিকারীরা পরিকল্পিতভাবে এমন ঘটনা ঘটিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ তাঁর।
রাজ্য সরকারের তরফে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হলেও মৃতের পরিবার সেই তদন্তে রাজি হয়নি। এরপর মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট এনআইএ-এর হাতে তদন্তভার তুলে দিয়েছে। এবার সেই এনআইএ তদন্তের পক্ষেই জোড়াল সওয়াল করেন বিধায়ক করিম চৌধুরী। তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা প্রকৃত ঘটনা সামনে আনবে বলে ৷ করিম চৌধুরীর মন্তব্যের পালটা অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি গোয়ালপোখরের বিধায়ক গোলাম রব্বানি।
রব্বানি জানান, তৎকালীন ইসলামপুরের বিধায়ক কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে নিয়ে তিনি এলাকায় গিয়ে স্বজনহারানো পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন ৷ তাদের ক্ষতিপূরণ-সহ চাকরির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের প্রস্তাব তারা মেনে নেয়নি। তবে পরাজিত বিধায়ক ওই এলাকায় যাননি বলে নাম করে করিম চৌধুরী খোঁচা দিচ্ছে বলেও জানান গোলাম রব্বানি। তাঁর কথায়, আদালতের নির্দেশকে তাঁরা মেনে চলেন। সিআইডি এই মামলায় আদালতে ইতিমধ্যেই চার্জশিট দাখিল করেছে। তবে এনআইএ তদন্ত নিয়ে তাদের কিছু বলার নেই বলে সাফ জানান রব্বানি।
ইসলামপুর বিধানসভা কেন্দ্রে 11 বারের বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী। 2016 সালে বিধানসভা নির্বাচনে করিম চৌধুরী কংগ্রেস প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। 2019 সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে কানাইয়ালাল আগরওয়াল কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিল। লোকসভা প্রার্থী হওয়ার পর কানাইয়ালাল আগরওয়াল বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। এই সামান্য কয়েকটা বছর তিনি ইসলামপুরের বিধায়ক ছিলেন না। সেই সময়েই ঘটে গিয়েছিল দাঁড়িভিট হাইস্কুলে আন্দোলনরত দুই ছাত্রের গুলিবিদ্ধ হয়ে রহস্যজনক মৃত্যু।
আরও পড়ুন: 36 হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের