বারাসত, 16 অক্টোবর : নৈহাটি পৌরসভার আস্থাভোটে জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস ৷ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আজ বারাসতে জেলাশাসকের উপস্থিতিতে আস্থাভোট হয় ৷ সংখ্যার বিচারে জয়লাভ করে তৃণমূল ৷ ফলাফল 24-0 ৷ BJP -র আটজন কাউন্সিলরের মধ্যে একজন তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ৷ বাকি সাতজন কাউন্সিলর আস্থাভোটে গরহাজির ছিলেন ৷
গত 25 সেপ্টেম্বর বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় রায় দিয়েছিলেন, 21 দিনের মধ্যে নৈহাটি পৌরসভার আস্থাভোট করতে হবে । বারাসতে জেলাশাসকের অফিসেই করতে হবে সেই আস্থাভোট । কিন্তু পৌরপ্রধান অশোক চট্টোপাধ্যায় তড়িঘড়ি পয়লা অক্টোবর নৈহাটি পৌরভবনেই অনাস্থা ভোট হবে বলে সব কাউন্সিলরকে চিঠি পাঠান । হাইকোর্টের নির্দেশ মানা হচ্ছে না বলে BJP অভিযোগ তোলে । সেদিন আস্থাভোট ভেস্তে যায় । অবশেষে বুধবার বারাসতে জেলা শাসকের অফিসে আস্থা ভোট হল । তাতে তৃণমূল 24-0 ভোটে জয়ী হল ।
লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ ও ব্যারাকপুর কেন্দ্রে BJP জয়লাভ করার পর উত্তর 24 পরগনা জেলায় তৃণমূল ছেড়ে BJP-তে যোগদানের হিড়িক পড়ে যায় । সেই জোয়ারে প্রাথমিকভাবে বনগাঁ, নৈহাটি, গাড়ুলিয়া, হালিশহর, ভাটপাড়া ও কাঁচরাপাড়া পৌরসভা BJP-র দখলে চলে যায় । কিন্তু পরে একে একে হারানো জমি উদ্ধার করে তৃণমূল ।
প্রশাসক থাকায় বাকি ছিল শুধু নৈহাটি পৌরসভা । নৈহাটি পৌরসভার 31টি ওয়ার্ডের সব ক'টিতেই তৃণমূল কাউন্সিলর ছিলেন । লোকসভা ভোটের পর 18 জন কাউন্সিলর BJP-তে যোগদান করেন । ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এগিয়ে যায় BJP । BJP-র ওই 18 কাউন্সিলর গত 31 মে পৌরপ্রধান অশোক চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন । কিন্তু আস্থাভোট হওয়ার আগেই রাজ্য সরকার সেখানে প্রশাসক বসিয়ে দেয় । ফলে BJP পৌরসভার দখল নিতে পারেনি । BJP প্রশাসকের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয় । কিন্তু ইতিমধ্যে তৃণমূল ছেড়ে BJP-তে যোগদান করা 18 জন কাউন্সিলরের মধ্যে 10 জন আবার তৃণমূলে ফিরে যান । ফলে নৈহাটি পৌরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরের সংখ্যা 23-এ দাঁড়ায় । এই অবস্থায় এখন BJP-র সংখ্যা মোটে 8 ।
নৈহাটি পৌরসভায় অনৈতিকভাবে প্রশাসক বসানো নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় BJP । সেই মামলার রায়ে 25 সেপ্টেম্বর বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় জানান, 21 দিনের মধ্যে আস্থাভোট করে নৈহাটি পৌরসভার বোর্ড গঠন করতে হবে । বারাসতে জেলাশাসকের অফিসেই করতে হবে সেই ভোট । কিন্তু পৌরপ্রধান অশোক চট্টোপাধ্যায় 1 অক্টোবর নৈহাটি পৌরভবনেই আস্থাভোট হবে বলে সব কাউন্সিলরকে চিঠি পাঠান । হাইকোর্টের নির্দেশ মানা হচ্ছে না, এই বলে BJP অভিযোগ তোলে । তাতে সেদিন ভোট বাতিল হয়ে যায় । অবশেষে 16 অক্টোবর বারাসতে আস্থাভোট হবে বলে সব কাউন্সিলরকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী ।
জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, "অনাস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন 24 জন কাউন্সিলর ৷" যদিও BJP-র তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশমত পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি ৷ এ বিষয়ে জেলাশাসক বলেন, " আমরা নিয়ম মেনে নোটিশ দিয়েছিলাম ৷ পুলিশের তরফ থেকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছিল ৷ "
তৃণমূলের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান অশোক চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, লোকসভা ভোটের পর সন্ত্রাসের কারণে তৃণমূলের অনেক কাউন্সিলর BJP-তে যোগ দিয়েছিলেন । তাঁরা অনেকে আবার ফিরেও এসেছেন । আজ আস্থা ভোটে 24-0 শূন্য ভোটে জয়ী তৃণমূল । BJP-র পক্ষ থেকে সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে অশোকবাবু বলেন, "BJP যদি বলে থাকে সন্ত্রাসের কারণে তারা আসেনি, তাহলে এর জবাব দেবেন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ ৷ আমার নৈহাটি থানার IC জবাব দেবেন ৷ "
BJP-র ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ফাল্গুনী পাত্র বলেন, " আমি মনে করি না BJP-র নৈতিক পরাজয় হল ৷ কারণ 18 জন যারা ছিলেন তারা কীভাবে ওদের সঙ্গে গেছে তা আগামীদিন মানুষ বুঝতে পারবে ৷ স্বেচ্ছায় গেছে না কি ভয় দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেটা মানুষ বুঝতে পারবেন ৷ তাদের জোর করে নিয়েও আসা হয়নি ৷ কিন্তু তারা গেছে জোর করে, খুব কষ্ট পেয়ে গেছে ৷ আমাদের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব বলেছেন বিরত থাকার জন্য তাই আমরা যাইনি ৷ "