বারাসত, 24 জুলাই : রাস্তাঘাট ছিল সুনসান । কড়াকড়ি ছিল পুলিশেরও । কিন্তু, লকডাউনের পরের দিনই কোথায় যেন হারিয়ে গেল সেই ছবি । ফিরল চেনা ভিড় । কোথায় সামাজিক দূরত্ব ! শিকেয় উঠেছে স্বাস্থ্যবিধিও । বারাসতের বিভিন্ন বাজার ও রাস্তাঘাটে ধরা পড়ল ভিড়ের ছবি । আর এই ছবি রীতিমতো উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ । সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে এমন অবহেলার জেরে সংক্রমণের ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও বাড়ছে ।
রাজ্যে কোরোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী । শুরু হয়ে গেছে গোষ্ঠী সংক্রমণও । সংক্রমণ রুখতে সপ্তাহে দু'দিন লকডাউনের পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য সরকার । গতকাল ছিল তার প্রথম দিন । সাধারণ মানুষ অবশ্য গতকাল রাস্তায় বেরোনোর সাহস দেখায়নি । যে কয়েকজন রাস্তায় বেরিয়েছিলেন, তাঁদেরও উপযুক্ত নথি দেখার পরই ছেড়েছিল পুলিশ প্রশাসন । আর যাঁরা অকারণে বেরিয়েছিলেন, তাঁদের শায়েস্তা করতে কড়া ভূমিকা নেওয়া হয়েছিল । কিন্তু লকডাউনের দিন কাটতেই ফের পুরোনো সেই ভিড় ফিরল জেলাসদর বারাসতে ।
রাস্তাঘাটে থিকথিকে ভিড় । বাজার, দোকানপাটে গা ঘেঁষাঘেঁষি করেই চলল জিনিসপত্র কেনাবেচা । কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই । যা দেখে শিউরে উঠেছেন অনেকে । সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, যে পুলিশকে গতকাল লকডাউন কার্যকর করতে বারাসতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াতে দেখা গেছিল সেই পুলিশের মধ্যেই আজ সক্রিয়তা নেই বলেই অভিযোগ করছে এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ । ফলে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে ।
কোরোনায় আক্রান্তের নিরিখে এই মুহূর্তে কলকাতার পরেই রয়েছে উত্তর 24 পরগনা । এই জেলায় প্রায় প্রতিদিনই নতুন রেকর্ড গড়ছে কোরোনার সংক্রমণ । গত 24 ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন 545 জন । মৃত্যুও হয়েছে 8 জনের । জেলার মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সদর শহর বারাসতে । প্রায় নিয়ম করে সংক্রমণ বাড়ছে এখানে । কোরোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ইতিমধ্যে আংশিক ও সময়ভিত্তিক লকডাউনের পথে হেঁটেছে পৌরসভার প্রশাসক বোর্ড । কিন্তু, তাতেও সংক্রমণে লাগাম টানা সম্ভব হয়নি । তাই বারাসত শহরে আরও সাতদিনের সম্পূর্ণ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । আগামীকাল থেকে বারাসতে শুরু হচ্ছে এক সপ্তাহের লকডাউন । এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের ধারনা, কোরোনার সংক্রমণে লাগাম টানতে হলে কড়াকড়ি লকডাউন ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই ।
এই বিষয়ে নীলু দাস নামে এক বাসিন্দা বলেন "লকডাউন থেকে আনলকে ফিরতেই যেভাবে বাজার ও দোকানপাটে মানুষ হুড়োহুড়ি শুরু করেছে তা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি । কোনও নিয়ম বিধি ঠিকঠাক ভাবে মানা হচ্ছে না । তাতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আমার ধারণা । শুধু পুলিশ প্রশাসনকে দিয়ে এই সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না । মানুষকেও সচেতন ও সতর্ক হতে হবে ।"
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বারাসত পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বচাঁদ ঠাকুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "সরকার নির্দেশিত লকডাউনের গাইডলাইন সকলকেই মেনে চলতে হবে । অমান্য করলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে । স্বাস্থ্য বিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ প্রতিনিয়ত নজরদারি চালাচ্ছে বিভিন্ন বাজার ও দোকানে । এক্ষেত্রে ঢিলেমি দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই ।"