বারাসত, 25 মে: আগুন কেড়েছে সবকিছু । এক লহমায় ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছিল আশ্রয়টুকুও । তবু হার মানেননি ।অদম্য জেদ এবং দারিদ্রতাকে দূরে সরিয়ে আজ উচ্চমাধ্যমিকে সফল রেল বস্তির যুবক রাজেশ দাস । শতবাধা সত্ত্বেও লক্ষ্যে অবিচল রাজেশ ৷ বাণিজ্য বিভাগে 87 শতাংশ নম্বর পেয়েছে সে ৷ মোট প্রাপ্ত নম্বর 438 ৷ নিজের স্কুলে বাণিজ্য বিভাগে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে ৷ ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য চাইলেন প্রশাসনের কাছে ৷ ইতিমধ্যে মেধাবী এই পড়ুয়ার পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন । ছেলের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির সামনে সাহায্যের আরজি জানিয়েছেন রাজেশের বাবা ।
ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছেন রাজেশ । সেই থেকে সংগ্রাম শুরু ৷ বাবার ছায়াতেই বড় হয়ে ওঠা তাঁর । বাবা সহদেব দাসই রাজেশের প্রেরণা । পাড়ায় পাড়ায় কসমেটিক্সের জিনিস ফেরি করেন । সামান্য আয়ে কোনওরকমে সংসার চলে দু'জনের । তাই, নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে দিনমজুর সহদেবের কাছে ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করা যথেষ্টই কষ্টসাধ্য ৷ তবে কষ্ট হলেও তবু নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন । সেই কষ্টেরই সুফল মিলেছে ছেলে উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করায় । উত্তর 24 পরগনার বারাসাতের বয়েজ হাইস্কুল থেকে এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল রাজেশ ।
কিন্তু ভালো ফলাফল করেও মন ভালো নেই রাজেশের । কারণ, চারদিন আগেই শিয়ালদা-বনগাঁ শাখার হৃদয়পুর স্টেশনের পাশে রেল ঝুপড়িতে ভয়াবহ আগুনে সর্বশ্রান্ত রাজেশের পরিবার । চোখের সামনে নিমেষে পুড়ে ছাই হতে দেখেছেন ছোট্ট সংসার । কোনওক্রমে ঘর থেকে বেরিয়ে বাবা-ছেলে জীবন বাঁচাতে পারলেও আগুনের গ্রাস থেকে রক্ষা করতে পারেননি জিনিসপত্র । নষ্ট হয়ে গিয়েছে রাজেশের যাবতীয় বই এবং উচ্চমাধ্যমিকের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রও । সেই শোক এখনও ভুলতে পারেননি পারেননি বাবা-ছেলে । আপাতত রেল লাইনের পাশেই এক অস্থায়ী ঠিকানায় ঠাঁই হয়েছে দু'জনের ।
এই প্রসঙ্গেই সহদেব দাস বলেন, "আগুনে তো যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে । এই বেদনার মধ্যেও ছেলে উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করেছে এটাই সবচেয়ে আনন্দের বিষয় । আমার সামর্থ্য নেই যে ওকে আর্থিক সহযোগিতা করব ৷ তাই প্রশাসনের কাছে কাতর আবেদন, আমার ছেলের ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হোক ।"
এদিকে, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোই যে তাঁর একমাত্র লক্ষ্য তা স্পষ্ট ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন উচ্চমাধ্যমিকে কৃতি পড়ুয়া রাজেশ দাস । কৃতী পড়ুয়া বলেন, "অনেক পরিশ্রম করে সমস্ত কিছু তৈরি করেছিলাম । কিন্তু,সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছে আগুনে । শিক্ষিত হয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই । স্থানীয় প্রশাসনে পক্ষ থেকেও আশ্বাস মিলেছে পাশে থাকার ৷"
আরও পড়ুন: পরীক্ষা-শেষে বাবার মুখাগ্নি, উচ্চমাধ্যমিকে 61 শতাংশ পেলেন বোলপুরের মৌসুমী
সমস্ত বিষয়টি জানতে পেরেই এই মেধাবী পড়ুয়ার পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ । এই বিষয়ে টিএমসিপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি সোহম পাল জানান, এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও যে এত ভালো ফলাফল করেছে তার একমাত্র কৃতিত্ব রাজেশরই । যে সমস্ত নথিপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে সেগুলো পুনরায় তৈরি করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন । সেই সঙ্গে ওর পড়াশোনার দায়িত্বও তুলে নেওয়া হয়েছে সংগঠনগতভাবে ।