দত্তপুকুর, 17 জুলাই: 'ভোট আসে, ভোট যায়'! অথচ, জমা জল যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই মেলে না উত্তর 24 পরগনার দত্তপুকুরের ইছাপুর-নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতের বিবেকানন্দ পল্লীর বাসিন্দাদের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রায় 12 বছর ধরে এই নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে তাঁদের ৷ প্রশাসনকে বললেও মেলেনি সুরাহা ৷
বঙ্গে বর্ষা এখনও পুরোদমে শুরু হয়নি। কিন্তু তার আগেই মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এর প্রধান কারণই হল জমা জল। ইছাপুর-নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতের বিবেকানন্দ পল্লীতেও ধরা পড়েছে সেই জমা জল যন্ত্রণার ছবি ! সেখানে একটি রাস্তায় এখনও থইথই করছে বৃষ্টির জমা জল। তার জেরে যাতায়াতে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়ছেন বাসিন্দারা । বাড়ছে অসুখও । জমা জল নিকাশের বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না থাকায় বাসিন্দাদের যন্ত্রণা আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ।
রাস্তায় ঢোকার আগে নিকাশ নালা রয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার অবস্থাও তথৈবচ! ময়লা, আবর্জনায় পরিপূর্ণ সেই নিকাশি নালা। যার ফলে বৃষ্টি হলেও নিকাশি নালা দিয়ে জল যাওয়ার কোনও উপায় নেই। ভুক্তভোগী বাসিন্দারা বলছেন 'এক পশলা বৃষ্টিতেই জল দাঁড়িয়ে যায় সেখানে। সেই জল সরতে গড়িয়ে যায় বেশ কয়েকমাস'। ততদিন বাসিন্দাদের কার্যত সাপ, ব্যাঙ, বিভিন্ন পোকামাকড়ের আতঙ্কেই দিন কাটাতে হয়। এর জেরে একদিকে যেমন রোগ সংক্রমণের প্রবণতা বাড়তে থাকে অন্যদিকে, তেমনই জল যন্ত্রণায় দুর্বিষহ হয়ে ওঠে এলাকাবাসীর জীবন। ফলে পঞ্চায়েতের ভূমিকায় বেজায় ক্ষুদ্ধ ভুক্তভোগী বিবেকানন্দ পল্লীর বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমিত্রা ঘরামী অভিযোগ করে বলেন, "ভোটের সময় ঠিক ভোট নিতে আসবে নেতারা। তখন কত প্রতিশ্রুতি ! রাস্তা করে দেব, জলের সমস্যা মেটাব। আরও কত কি! কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের কাজ কিছু হয় না।আমরা সেই নরক যন্ত্রণার মধ্যে বাস করছি পরিবার নিয়ে। শুধু পঞ্চায়েতে নয়! প্রশাসনের কাছেও যাওয়া হয়েছে সমস্যার সমাধানে। কিন্তু তাতেও কোনও সুরাহা হয়নি। জানি না কবে এর থেকে মুক্তি পাব আমরা।"
একই সুর শোনা গিয়েছে দীপঙ্কর মজুমদার নামে আরও এক ভুক্তভোগী বাসিন্দার গলাতেও। তাঁর আক্ষেপ, "আমরা সাধারণ মানুষ বলেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। যদি এই সমস্যা কোনও নেতার হত,তাহলে এতদিনে সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। দলমত নির্বিশেষে আমাদের একটাই আবেদন, এই পরিবারগুলির দিকে একটু মুখ তুলে তাকাক প্রশাসন।"
স্থানীয় বিজেপি নেতা প্রশান্ত দাস এই বিষয়ে কটাক্ষ করেছেন এলাকার শাসক শিবিরকে ৷ তিনি বলেন, "এখানকার বেশিরভাগ রাস্তার অবস্থায় এরকম। একটু বৃষ্টি হলেই জল জমে থাকে দীর্ঘদিন ধরে। এনিয়ে কে বলতে যাবে ! বলতে গেলেই তো বিজেপি নেতাদের আক্রান্ত হতে হচ্ছে। দেখছেন না। কয়েক মাস আগেই তো রাস্তার দাবি করায় মন্ত্রীর সামনেই আমাদের দলের নেতাকে চড় মারা হল। এই তো অবস্থা! এখন তো মনে হচ্ছে শাসনের মতো অবস্থা ইছাপুর-নীলগঞ্জ পঞ্চায়েত এলাকাও।"
আরও পড়ুন: হাত প্রতিস্থাপনের বিরল সাফল্য, এসএসকেএমের চিকিৎসকদের অভিনন্দন মুখ্যমন্ত্রীর
অন্যদিকে, সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েও তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতে যথেষ্ট উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন বলে দাবি পঞ্চায়েত প্রধান নরেন্দ্রনাথ দত্তের। তিনি বলেন, "এই ধরণের অভিযোগ করে পঞ্চায়েতকে বদনাম করার চেষ্টা করছে বিজেপির কিছু লোক। যে রাস্তার কথা বলা হচ্ছে সেখানে আমরাই ইট পাতিয়ে দিয়েছি। যেহেতু এলাকাটি নিচু তাই জল সরতে সময় লাগছে। ইতিমধ্যে রাস্তাটি পাকা করার অনুমোদন মিলেছে। ভোট প্রক্রিয়া মিটে গেলেই রাস্তার কাজে হাত দেওয়া হবে। সিপিএম আমলে মাটির রাস্তা দিয়ে হাঁটত এখানকার মানুষজন। পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় এসে এখানকার সার্বিক উন্নয়ন ঘটিয়েছি আমরাই। এটা সকলেই জানে। অযথা রাজনীতি চলছে এটা নিয়ে।"