বারাসাত , 18 মার্চ : বারাসত স্টেশনের সুলভ শৌচালয়ের নোংরা জল গিয়ে মিশছে খোলা নর্দমায় । যার জেরে দূষণ ছড়াচ্ছে এলাকায় । সেই দূষিত জল থেকে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না এলাকার বাসিন্দারা । কোরোনা আতঙ্কের মধ্যেই এখন এই আশঙ্কা তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁদের । বিষয়টি অজানা নয় রেল কর্তৃপক্ষেরও । কিন্তু, তার পরেও কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ । স্বভাবতই রেলের উদাসীনতা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এলাকাবাসী । রেলের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরও । যদিও, এবিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন বারাসত স্টেশনের ম্যানেজার । তাঁকে বারবার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও উত্তর দিতে চাননি । বরং এবিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের কোর্টেই বল ঠেলেছেন ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বারাসত স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের চাতালের ঠিক পাশেই রয়েছে রেলের সুলভ শৌচালয় । প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ ব্যবহার করেন এই শৌচালয় । শৌচালয়ের গা ঘেঁষেই রয়েছে বসতবাড়ি । রয়েছে বিভিন্ন মার্কেট, খাবারের দোকান । অভিযোগ, রেলের সেই শৌচালয়ের নোংরা জল সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে খোলা নর্দমায় গিয়ে মিশছে । সেই নোংরা জলই আবার গিয়ে পড়ছে সুটি খালে । যার ফলে দূষিত হচ্ছে খালের জল । দূষণ ছড়াচ্ছে বারাসত পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বনমালীপুর, পাল পাকুরিয়া ও স্টেশন সংলগ্ন এলাকা । দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এলাকার বাসিন্দা থেকে ব্যবসায়ী। বিষয়টির সুরাহার আশায় রেল কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছিলেন তাঁরা । স্থানীয় কাউন্সিলরও বহুবার পৌরসভায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন । কিন্তু, তারপরও সুরাহা মেলেনি ।
এনিয়ে কার্যত ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকার বাসিন্দারা । শৌচালয়ের ঠিক লাগোয়া ফ্ল্যাটেই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন শ্যামল কুণ্ডু । তিনি বলেন, "রেলের মল ও মূত্রের জল একেবারে খোলা নর্দমায় গিয়ে পড়ছে । যার ফলে দুর্গন্ধে টেকাই দায় হয়ে পড়েছে । পাশেই মার্কেট রয়েছে । সেখানে ৩০টি মতো দোকান রয়েছে । প্রচণ্ড দুর্গন্ধে ক্রেতারাও মাঝে মাঝে অভিযোগ করেন । অনেকে আবার দুর্গন্ধে দোকানের ভিতরে ঢুকতেও চান না । এর ফলে অসুবিধা হচ্ছে ব্যবসা করতেও।" শ্যামল বাবুর কথায়, "এর দূষণ থেকে রোগ, সংক্রমণের আশঙ্কাও রয়েছে । কে বলতে পারে এই নোংরায় কোরোনা ভাইরাস ও ডেঙ্গির জীবাণু নেই ? সব সময় আতঙ্কে রয়েছি । বহুবার আমরা বারাসত স্টেশনের রেলকর্তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি । কিন্তু, আজ পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি।"
প্রকাশ্যেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও । কম্পিউটার ব্যবসায়ী সৌমিত্র সরকার বলেন, "রেলের শৌচালয়ের যে নোংরা নর্দমায় গিয়ে পড়ছে, তার নিকাশি ব্যবস্থাও ভালো নয় ।" সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় নামে অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, "রেলের তরফে যখন এখানে শৌচালয় তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন আমরা সবাই মিলে আপত্তি জানিয়েছিলাম । কিন্তু, সেই আপত্তি অগ্রাহ্য করে শৌচালয় তৈরি করা হয় । তারপর তো যা অব্যবস্থা সেটা আপনারা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছেন । সন্ধ্যা নামলেই মশা, মাছির উৎপাত, সঙ্গে দুর্গন্ধ তো লেগেই রয়েছে । বিভিন্ন রোগ, জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কাও রয়েছে । কিন্তু, এত কিছুর পরও স্থায়ী সমস্যার সমাধান হয়নি । কবে হবে তাও আমরা জানি না । আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।"
এদিকে এবিষয়ে রেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সমীর কুণ্ডু । তিনি বলেন, "দীর্ঘদিন এই সমস্যা চললেও তার সমাধানে রেল কোনও উদ্যোগই নেয়নি । এলাকার লোকজন ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই প্রথম সমস্যার কথা জানতে পারি । এরপর প্রায় দু'বছর ধরে রেলের কর্তাদের কাছে বারবার সমস্যার কথা তুলে ধরেছি । কিন্তু কোনও লাভ হয়নি । আশা করি, খবর সম্প্রচার হলে হয়ত নড়েচড়ে বসবে রেল প্রশাসন।" কাউন্সিলরের কথায়, "রেলের শৌচালয়ের মল, মূত্র ট্যাঙ্কের মধ্যে পড়বে, সেটা ঠিক আছে । কিন্তু এখানে তার নোংরা জল বেরিয়ে মিশছে নর্দমায় গিয়ে । তার ফলে দূষণ ছড়াচ্ছে এলাকায় । নোংরা দূষিত জল বনমালীপুর, পাল পাকুড়িয়া হয়ে সোজা গিয়ে পড়ছে সুটি খালে।"
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে বারাসত পৌরসভার প্রধান সুনীল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "বিষয়টি আপনার কাছ থেকেই প্রথম জানলাম । কেউ আমাকে বিষয়টি জানায়নি । লোক পাঠিয়ে কিছু করা যায় কি না,সেটা দেখছি।" এরপরই রেলের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে পৌরপ্রধান বলেন,"ওরা(রেল) আমাদের সাথে কোনও বিষয়ে আলোচনা করে না । জানানোর প্রয়োজনবোধও করে না । পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত ওরা কোনও সম্পত্তি কর জমা দেয়নি । এই নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষকের কাছে বারবার যাওয়া হয়েছে । কিন্তু লাভ হয়নি"।
অপরদিকে, শৌচাগারের নোংরা বর্জ্য পদার্থ থেকে এলাকায় দূষণ ছড়ানোর প্রসঙ্গে বারাসতের স্টেশন ম্যানেজার জয়দেব মণ্ডলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি । বারবার তাঁকে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও তাঁর থেকে কোনও সদুত্তর মেলেনি । শুধু বলেন, "সংবাদ মাধ্যমের কাছে মুখ খোলা নিষেধ আছে । যা বলার রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই বলবে।"
সবমিলিয়ে, রেলের শৌচালয়ের দূষিত জলের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকার বাসিন্দা থেকে ব্যবসায়ীরা ৷ সকলেই চাইছেন, বিষয়টির দিকে নজর দিক রেল কর্তৃপক্ষ । দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হোক । তা না হলে আগামীদিনে বড়সড় আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তাঁরা । পাশাপাশি তাঁরা বিষয়টিকে নজরে আনার জন্য ETC ভারতকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন ৷