ETV Bharat / state

হতাশা থেকে মেজাজ হারাচ্ছেন, চিকিৎসার প্রয়োজন জ্যোতিপ্রিয়র ; কটাক্ষ বিরোধীদের - বারবার মেজাজ হারাচ্ছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক

বাম শাসনের সময় 2001 সালে উত্তর 24 পরগনার গাইঘাটা থেকে প্রথমবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। পরের বার আবার । 2011 সালের বিধানসভা নির্বাচনে গাইঘাটা কেন্দ্রটি তফসিলি সংরক্ষিত হয়ে যায় । সেবার জ্যোতিপ্রিয় পাশের হাবড়া কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন ।

মেজাজ হারাচ্ছেন জ্যেতিপ্রিয়
মেজাজ হারাচ্ছেন জ্যেতিপ্রিয়
author img

By

Published : Dec 4, 2020, 11:05 PM IST

বারাসত, 4 ডিসেম্বর : 20 বছরের বিধায়ক । সাড়ে 9 বছর মন্ত্রী । জনসমক্ষে তাঁকে বিশেষ রেগে যেতে আগে দেখা যায়নি । তবে সম্প্রতি আচরণ বদলে গিয়েছে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের । সাংবাদিক বৈঠকে বারবার তিনি মেজাজ হারাচ্ছেন । তাই নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ, হতাশা থেকে মেজাজ হারাচ্ছেন খাদ্যমন্ত্রী। তাঁর চিকিৎসা ও বিশ্রাম প্রয়োজন ।

বাম শাসনের ভরা বাজারেও 2001 সালে উত্তর 24 পরগনার গাইঘাটা থেকে প্রথমবার বিধায়ক হয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক । পরের বার আবার । 2011 সালের বিধানসভা নির্বাচনে গাইঘাটা কেন্দ্রটি তফশিলি সংরক্ষিত হয়ে যায় । সেবার জ্যোতিপ্রিয় পাশের হাবড়া কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন । খাদ্য দপ্তরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পান । গত সাড়ে 9 বছর ধরে তিনি হাবড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী । সঙ্গে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি । কাজের বিপুল চাপ থাকলেও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে জনসমক্ষে বিশেষ রেগে যেতে আগে দেখা যায়নি । কিন্তু গত দু'তিন মাসে জেলার রাজনৈতিক সমীকরণ বিপুল বদলে গিয়েছে । ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত বিদ্রোহ করেছেন । তালিকায় রয়েছেন আরও কয়েকজন বিধায়ক । রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, জেলা পরিষদের কয়েকজন সদস্য দলত্যাগ করে বিজেপিতে নাম লেখানোর জন্য মুখিয়ে রয়েছেন । জেলার প্রায় সব ক'টি পৌরসভার বিপুল সংখ্যক কাউন্সিলর জল মাপছেন । তারই মধ্যে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জ্যোতিপ্রিয়র খাসতালুকে ঢুকে বাংলাকে গুজরাত করার হুমকি দিয়ে গিয়েছেন । সব মিলিয়ে টলমল করছে জ্যোতিপ্রিয়র সংগঠন । জেলা তৃণমূলের নেতারা বিশ্বাসী সাংবাদিককে কাছে পেলে জিজ্ঞাসা করছেন, "ভাই সরকার থাকবে তো?" তাঁর হয়ে দলের অন্তর্ঘাতের খোঁজখবর যাঁরা রাখেন, তাঁরাও মন্ত্রীকে টু দা পয়েন্ট রিপোর্টিং করছেন । বিচক্ষণ জ্যোতিপ্রিয় সব খবর রাখেন । বিরোধীর বলছে, তাতেই তিনি বিচলিত হয়ে পড়ছেন । জেলার সাংবাদিকরা দল নিয়ে প্রশ্ন করলে জ্যোতিপ্রিয় মেজাজ হারাচ্ছেন । যেমন- 2 নভেম্বর বামনগাছির ছোটো জাগুলিয়ায় একটি সরকারি অনুষ্ঠানের পরে তিনি এক সাংবাদিকের নাম ধরে সরাসরি আক্রমণত্মক কথা বলেন । রবিবার জ্যোতিপ্রিয় হাবড়ার কুমড়া-কাশীপুরে তফশিলি শংসাপত্র বিলির একটি সরকারি শিবির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন । সেখানে তিনি হাত দিয়ে সাংবাদিকদের ক্যামেরা নামিয়ে দেন । তারপর সাংবাদিকদের তিনি নানা অসংলগ্ন কথা বলেন । মন্ত্রীর আচরণে হতবাক হয়ে যান তাঁর দলের নেতা-কর্মীরাও ।

বুধবার মধ্যমগ্রামেও দল নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে । এই নিয়ে জ্যোতিপ্রিয়কে কটাক্ষ করল বিজেপি । জ্যোতিপ্রিয় প্রায়ই সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন । এখন বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শংকর চট্টোপাধ্যায় বলছেন, "জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বুঝতে পেরেছেন, 2021 সালে তাঁর ও তাঁর দলের বিপর্যয় অনিবার্য । তাই হতাশা থেকে তিনি বারবার মেজাজ হারিয়ে ফেলছেন। ওনার এখন সত্যিই চিকিৎসা ও বিশ্রাম প্রয়োজন।"

প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য সজল দে-র মত, "জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে আমার রাজনৈতিক বিরোধিতা আছে । কিন্তু তিনি যেভাবে বারবার মেজাজ হারাচ্ছেন, সেটা ভালো লাগছে না। তাঁর শুভানুধ্যায়ী হিসেবে বলব, তিনি কিছুদিন বিশ্রাম নিন । প্রয়োজনে একটু কাউন্সেলিংও করাতে পারেন ।"

ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়েরের বক্তব্য, "সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা উচিত নয় । জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তো রাজ্যের প্রথম সারির মন্ত্রী । তিনি মেজাজ হারালে ভালো দেখায় না।"

এদিকে, জ্যোতিপ্রিয়র আচরণগত বিচ্যুতিকে মানসিক অস্থিরতা বলে মনে করছেন মনেরোগ বিশেষজ্ঞরা । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বারাসত জেলা হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের এক চিকিৎসকের মতে, 'উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা ও হতাশা থেকে কেউ কেউ হঠাৎ করে রেগে যেতে পারেন । দায়িত্বশীল পদে থাকলে এই ধরনের সমস্যা অনেকের মধ্যে দেখা দেয় । উপযুক্ত চিকিৎসায় তা সেরেও যায়।"

যাদবপুরের কেপিসি মেডিকেল কলেজের এক নামকরা চিকিৎসক বলছেন, "হঠাৎ হঠাৎ রেগে যাওয়া এক ধরনের মানসিক অস্থিরতা । আশঙ্কা, অনিশ্চয়তা ও হতাশা থেকে এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয় । উপযুক্ত চিকিৎসায় মানসিক এই অস্থিরতা সেরে যায় ।"

বারাসত, 4 ডিসেম্বর : 20 বছরের বিধায়ক । সাড়ে 9 বছর মন্ত্রী । জনসমক্ষে তাঁকে বিশেষ রেগে যেতে আগে দেখা যায়নি । তবে সম্প্রতি আচরণ বদলে গিয়েছে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের । সাংবাদিক বৈঠকে বারবার তিনি মেজাজ হারাচ্ছেন । তাই নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ, হতাশা থেকে মেজাজ হারাচ্ছেন খাদ্যমন্ত্রী। তাঁর চিকিৎসা ও বিশ্রাম প্রয়োজন ।

বাম শাসনের ভরা বাজারেও 2001 সালে উত্তর 24 পরগনার গাইঘাটা থেকে প্রথমবার বিধায়ক হয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক । পরের বার আবার । 2011 সালের বিধানসভা নির্বাচনে গাইঘাটা কেন্দ্রটি তফশিলি সংরক্ষিত হয়ে যায় । সেবার জ্যোতিপ্রিয় পাশের হাবড়া কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন । খাদ্য দপ্তরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পান । গত সাড়ে 9 বছর ধরে তিনি হাবড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী । সঙ্গে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি । কাজের বিপুল চাপ থাকলেও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে জনসমক্ষে বিশেষ রেগে যেতে আগে দেখা যায়নি । কিন্তু গত দু'তিন মাসে জেলার রাজনৈতিক সমীকরণ বিপুল বদলে গিয়েছে । ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত বিদ্রোহ করেছেন । তালিকায় রয়েছেন আরও কয়েকজন বিধায়ক । রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, জেলা পরিষদের কয়েকজন সদস্য দলত্যাগ করে বিজেপিতে নাম লেখানোর জন্য মুখিয়ে রয়েছেন । জেলার প্রায় সব ক'টি পৌরসভার বিপুল সংখ্যক কাউন্সিলর জল মাপছেন । তারই মধ্যে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জ্যোতিপ্রিয়র খাসতালুকে ঢুকে বাংলাকে গুজরাত করার হুমকি দিয়ে গিয়েছেন । সব মিলিয়ে টলমল করছে জ্যোতিপ্রিয়র সংগঠন । জেলা তৃণমূলের নেতারা বিশ্বাসী সাংবাদিককে কাছে পেলে জিজ্ঞাসা করছেন, "ভাই সরকার থাকবে তো?" তাঁর হয়ে দলের অন্তর্ঘাতের খোঁজখবর যাঁরা রাখেন, তাঁরাও মন্ত্রীকে টু দা পয়েন্ট রিপোর্টিং করছেন । বিচক্ষণ জ্যোতিপ্রিয় সব খবর রাখেন । বিরোধীর বলছে, তাতেই তিনি বিচলিত হয়ে পড়ছেন । জেলার সাংবাদিকরা দল নিয়ে প্রশ্ন করলে জ্যোতিপ্রিয় মেজাজ হারাচ্ছেন । যেমন- 2 নভেম্বর বামনগাছির ছোটো জাগুলিয়ায় একটি সরকারি অনুষ্ঠানের পরে তিনি এক সাংবাদিকের নাম ধরে সরাসরি আক্রমণত্মক কথা বলেন । রবিবার জ্যোতিপ্রিয় হাবড়ার কুমড়া-কাশীপুরে তফশিলি শংসাপত্র বিলির একটি সরকারি শিবির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন । সেখানে তিনি হাত দিয়ে সাংবাদিকদের ক্যামেরা নামিয়ে দেন । তারপর সাংবাদিকদের তিনি নানা অসংলগ্ন কথা বলেন । মন্ত্রীর আচরণে হতবাক হয়ে যান তাঁর দলের নেতা-কর্মীরাও ।

বুধবার মধ্যমগ্রামেও দল নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে । এই নিয়ে জ্যোতিপ্রিয়কে কটাক্ষ করল বিজেপি । জ্যোতিপ্রিয় প্রায়ই সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন । এখন বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শংকর চট্টোপাধ্যায় বলছেন, "জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বুঝতে পেরেছেন, 2021 সালে তাঁর ও তাঁর দলের বিপর্যয় অনিবার্য । তাই হতাশা থেকে তিনি বারবার মেজাজ হারিয়ে ফেলছেন। ওনার এখন সত্যিই চিকিৎসা ও বিশ্রাম প্রয়োজন।"

প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য সজল দে-র মত, "জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে আমার রাজনৈতিক বিরোধিতা আছে । কিন্তু তিনি যেভাবে বারবার মেজাজ হারাচ্ছেন, সেটা ভালো লাগছে না। তাঁর শুভানুধ্যায়ী হিসেবে বলব, তিনি কিছুদিন বিশ্রাম নিন । প্রয়োজনে একটু কাউন্সেলিংও করাতে পারেন ।"

ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়েরের বক্তব্য, "সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা উচিত নয় । জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তো রাজ্যের প্রথম সারির মন্ত্রী । তিনি মেজাজ হারালে ভালো দেখায় না।"

এদিকে, জ্যোতিপ্রিয়র আচরণগত বিচ্যুতিকে মানসিক অস্থিরতা বলে মনে করছেন মনেরোগ বিশেষজ্ঞরা । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বারাসত জেলা হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের এক চিকিৎসকের মতে, 'উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা ও হতাশা থেকে কেউ কেউ হঠাৎ করে রেগে যেতে পারেন । দায়িত্বশীল পদে থাকলে এই ধরনের সমস্যা অনেকের মধ্যে দেখা দেয় । উপযুক্ত চিকিৎসায় তা সেরেও যায়।"

যাদবপুরের কেপিসি মেডিকেল কলেজের এক নামকরা চিকিৎসক বলছেন, "হঠাৎ হঠাৎ রেগে যাওয়া এক ধরনের মানসিক অস্থিরতা । আশঙ্কা, অনিশ্চয়তা ও হতাশা থেকে এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয় । উপযুক্ত চিকিৎসায় মানসিক এই অস্থিরতা সেরে যায় ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.