বারাসত, 12 অগস্ট : প্রকল্পের টাকা বরাদ্দ হওয়ার সাত মাস পরও শুরু হয়নি বেহাল বারাসত উড়ালপুল সংস্কারের কাজ। ফলে ঝুঁকি নিয়েই বিপজ্জনক এই ব্রিজ দিয়ে চলছে একের পর এক গাড়ির যাতায়াত। প্রাণ হাতে নিয়ে পারাপার করছেন পথচারীও। যে কোনও সময় বড়সড় অঘটনের আশঙ্কা রয়েছে। আশঙ্কা এবং আতঙ্ককে সঙ্গী করেই এখন দিন কাটছে উড়ালপুলের নিচে অবস্থান করা ব্যবসায়ীদের।
এনিয়ে প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন তারা। যদিও উড়ালপুল নিয়ে কোনওরকম বিপদের আশঙ্কা নেই বলে দাবি করেছে প্রশাসন। সেই সঙ্গে উড়ালপুলের সংস্কারের কাজও দ্রুত শুরুর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বারাসত কলোনি মোড়ের সঙ্গে চাপাডালি মোড়ের সংযোগকারী এই উড়ালপুল তৈরি হয়েছিল বাম আমলে। 2008 সালে বাম সরকারের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত উদ্ধোধন করেছিলেন বারাসত উড়ালপুলটি। এই উড়ালপুল 34 এবং 35 নম্বর জাতীয় সড়কের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। ফলে,বারাসত উড়ালপুলের গুরুত্ব যথেষ্টই। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ উড়ালপুল দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সূত্রের খবর,উড়ালপুলের বেশ কয়েকটি পিলার এবং তার জয়েন্টে ত্রুটি ধরা পড়েছে। কোনও কোনও পিলারে আবার জয়েন্ট থেকে হাফ ইঞ্চির মতো সরে গিয়ে ফাঁক হয়ে রয়েছে। ফাটল ধরেছে উড়ালপুলের রেলিংয়ের বেশকিছু অংশেও।
আরও পড়ুন : Cbi Raid Naihati: নৈহাটিতে চিটফান্ড ডিরেক্টরের বাড়িতে সিবিআই হানা
ব্যবসায়ীদের মতে ভারী যানবাহন চলাচল করলেই কেঁপে ওঠে উড়ালপুল। তখন বিপদের আশঙ্কা বাড়তে থাকে। এই পরিস্থিতিতে বেহাল উড়ালপুল দ্রুত সংস্কারের দাবিতে সরব হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দু'বছর আগে একবার বারাসত উড়ালপুলের সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের তরফে। সেই সময় কোনওরকম জোড়া তাপ্পি দিয়ে সংস্কার করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই উড়ালপুলের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে ।
এবারের পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক বলেই মনে করা হচ্ছে। এই নিয়ে রিপোর্টও পাঠানো হয় সরকারের কাছে। সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে বেহাল উড়ালপুলের সংস্কারের জন্য 6 কোটি 90 লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয় রাজ্য সরকারের তরফে। তাও সেই টাকা বরাদ্দ হয়েছে প্রায় সাত মাস আগে। কিন্তু তারপরও বেহাল বারাসত উড়ালপুলের সংস্কারের কাজ শুরু হয়নি।
উড়ালপুলে ওঠার মুখে জ্বলজ্বল করছে প্রকল্পের সাইনবোর্ড। সেখানে প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা থেকে শুরু করে কাজ আরম্ভ এবং শেষ করার দিনক্ষণ, প্রকল্পের ঠিকাদারি সংস্থার নাম সবকিছুই রয়েছে জনসমক্ষে। অথচ, সংস্কারের কাজ শুরু হওয়া তো দূরের কথা, শুধু দুর্বল পিলার এবং জয়েন্ট চিহ্নিত করা ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি প্রশাসনের তরফে। যা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।
যদিও উড়ালপুলের সংস্কার যে আরম্ভ হয়নি তার পিছনে করোনা আবহকে দায়ী করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। এদিকে, এখনও বেহাল উড়ালপুল সংস্কারের কাজ শুরু না হওয়ায় আশঙ্কা এবং আতঙ্ক দুটোই বাড়ছে শহরবাসীর মধ্যে।
আরও পড়ুন : লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে ট্যাক্স নেওয়ার অভিযোগ, অস্বীকার করে প্রচার পঞ্চায়েতের
এই বিষয়ে কৃষ্ণেন্দু সাহা নামে উড়ালপুলের নিচের এক ব্যবসায়ী বলেন,"ব্রিজের অবস্থা যা,তাতে যে কোনও সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভগবানের ভরসায় এখানে ব্যবসা করতে হচ্ছে আমাদের। প্রশাসনকে বারবার বলা হলেও সংস্কারে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রতিবারই উড়ালপুলের মাপজোক হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়না। এখন তো আবার বলছে কাজ শুরু হবে। দেখা যাক কি হয় ৷" একই সুর শোনা গিয়েছে পূজা দাস এবং মিতা চৌধুরী নামে দুই মহিলা ব্যবসায়ীর গলাতেও। তারাও বেহাল উড়ালপুল নিয়ে আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন।
যদিও বেহাল উড়ালপুলের সংস্কারের বিষয়ে প্রশাসন উদ্যোগী হয়েছে বলে জানিয়েছেন বারাসত পৌরসভার প্রশাসক মন্ডলীর অন্যতম সদস্য অশনি মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন,"ভেন্ডার সমস্যার কারণে কিছুটা দেরি হয়েছে ঠিকই। তবে, শীঘ্রই সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হবে। চারটি পিলার ধরে বিভিন্ন ধাপে সংস্কারের কাজ চলবে। যাতে উড়ালপুলের নিচের ব্যবসায়ী এবং হকারদের কোনও সমস্যা না হয়। মোটামুটি দেড় বছর সময় লাগবে সংস্কারের কাজ শেষ হতে। সংস্কারের কাজ চলাকালীন উড়ালপুলের নিচের ব্যবসায়ীদের বিকল্প পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে পৌরসভার তরফে। ইতিমধ্যে তাদের নিয়ে বৈঠকও করা হয়েছে" ৷
এই বিষয়ে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ এবং বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী বলেন,"মাঝেরহাট এবং পোস্তা উড়ালপুল বিপর্যয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের সমস্ত উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন। সেই মতো বারাসত উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বেশকিছু ত্রুটি ধরা পড়েছে। তবে,বিপজ্জনক অবস্থায় নেই উড়ালপুলটি। আতঙ্ক এবং আশঙ্কা হওয়ারও কারণ নেই। পূর্ত দফতর ও প্রশাসন এই বিষয়ে ইতিমধ্যে উদ্যোগী হয়েছে। আশা করা যায়,অগস্ট মাসের শেষেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।
অন্যদিকে,উড়ালপুলের সংস্কারের টালবাহানা নিয়ে প্রশাসনকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির। এ বিষয়ে বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহসভাপতি শঙ্কর দাস বলেন,"যতক্ষণ না উড়ালপুল ভেঙে পড়ছে ততক্ষণ ঘুম ভাঙবে না প্রশাসনের। রাজ্য প্রশাসন এসি ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাদের বাইরে সমস্যা মেটানো নিয়ে কোনও মাথাব্যাথা নেই। না আছে মানুষের অসুবিধা দূর করার সময়। উড়ালপুলের উপর দিয়ে যাতায়াত করা মানুষজন এবং উড়ালপুলের নিচের ব্যবসায়ী উভয়েরই জীবন আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে। কোনও অঘটন না ঘটলে টনক নড়বে না প্রশাসনের"।