বারাসত, 11 জুলাই : বারাসতের জনবহুল এলাকায় কোয়ারানটিন সেন্টার করার চেষ্টা করল প্রশাসন ৷ এই অভিযোগে আজ পৌরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয়রা ৷ বাসিন্দাদের সাথে বিক্ষোভে সামিল হন BJP ও CPI(M)-র কর্মীরাও । খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থানে এসে পরিস্থিতি সামাল দেয় । আশ্বাস দেওয়া হয় বিষয়টি খতিয়ে দেখার । তারপরই বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয় ৷
স্থানীয় সূত্রে খবর, বারাসতের 34 নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে পৌরসভার একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে । সেখানেই কোরোনা আক্রান্ত সন্দেহে যাঁরা চিকিৎসাধীন তাঁদের রাখার জন্য কোয়ারানটিন সেন্টার করার উদ্যোগ প্রশাসনের তরফে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ । গতকাল সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে যৌথভাবে পরিদর্শনও করা হয় পৌরসভা ও প্রশানের তরফে । আজ থেকে ওই কোয়ারানটিন সেন্টার চালু করার কথাও ছিল ৷ কিন্তু তার আগে সকালেই এলাকার বাসিন্দারা জড়ো হয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন ৷ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক সনাতন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আপত্তির কথা জানানো হয় । তিনি বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনবেন বলা সত্ত্বেও বিক্ষোভ চালিয়ে যান বাসিন্দারা ৷ এরপরই খবর পেয়ে সেই আন্দোলনে সামিল হন BJP ও CPI(M)-র স্থানীয় নেতা ও কর্মীরা । খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে আসে বারাসত থানার পুলিশ ৷ তারা প্রথমে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করে । কিন্তু, জনবহুল এলাকায় কোনওভাবেই কোয়ারানটিন সেন্টার মেনে নেওয়া হবে না বলে স্থানীয়রাও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন ৷ এরপর, বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হলে প্রায় দু'ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় ।
এই বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা সুমন দাশগুপ্ত বলেন, "স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশেই দ্বিজহরি দাস কলোনি, গীতাঞ্জলি, বসুন্ধরা-সহ বেশ কয়েকটি কলোনি রয়েছে ৷ সেখানে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস ৷ এরকম একটি জনবহুল এলাকায় কোয়ারানটিন সেন্টার করা হলে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ তখন মুম্বইয়ের ধারাভির মতো সংক্রমণ হতে বেশি সময় লাগবে না বারাসতেও ৷ আক্রান্তদের কোয়ারানটিন সেন্টারে রাখার বিপক্ষে নই আমরা । কিন্তু সেটা জনবহুল এলাকা বাদ দিয়ে যদি ফাঁকা কোনও স্কুলে করা হয় তাহলে সবার পক্ষেই ভালো ৷" অন্য আর এক মহিলা বাসিন্দা বলেন, "পৌরসভার এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বাচ্চাদের টিকা দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা হয়ে থাকে । কোয়ারানটিন সেন্টার হলে সেই সমস্ত চিকিৎসা তো বন্ধ হয়ে যাবে ৷ কেন প্রশাসন এমন উদ্যোগ নিচ্ছে বুঝতে পারছি না । আমরা কিছুতেই এখানে কোয়ারানটিন সেন্টার করতে দেব না । মানুষের জীবন আগে নাকি কোয়ারানটিন সেন্টার? এটা প্রশাসনকে বুঝতে হবে ৷"
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন BJP-র বারাসত সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় ৷ বলেন, "গতকাল পৌরসভা ও প্রশাসনের লোকজন পরিদর্শন করার পরই কোয়ারানটিন সেন্টার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । এদিনই তা চালু করার কথা ছিল তাঁদের । বারাসতের যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোয়ারানটিন সেন্টার ছিল সেটি নাকি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে । ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কোয়ারানটিন সেন্টার করার উদ্যোগ আমরা কিছুতেই মানব না । পুলিশ প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দিয়েছে এখানে কোয়ারানটিন সেন্টার করা হবে না । এরপরও যদি সেখানে কোয়ারানটিন সেন্টার করার চেষ্টা হয় তাহলে আমরা বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামব ৷"
পৌরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক সনাতন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এখানে কোয়ারানটিন সেন্টার করা হচ্ছে এমন কোনও নির্দেশিকা এখনও অবধি হাতে আসেনি ।" তবে পৌরসভা ও প্রশাসনের তরফে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি । তাঁর মতে, "কোরোনা সন্দেহদের জন্য এখানে কোয়ারানটিন সেন্টার করা যায় কি না তা ভেবে দেখছে প্রশাসন । প্রসঙ্গত, এর আগেও বারাসত কলেজ ও কালীকৃষ্ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে কোয়ারানটিন সেন্টার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের তরফে । তখনও একইভাবে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দারা । তাঁদের চাপের মুখে পড়ে শেষে পিছু হটতে বাধ্য হয় প্রশাসন ।