বারাসত, 26 ডিসেম্বর: বারাসত হাসপাতালের মর্গে মৃতদেহের কাটাছেঁড়া করাই তাঁদের পেশা। কেউ সেই পেশায় কাজ করছেন দীর্ঘ 29 বছর ধরে। আবার কেউ ১৫ বছর, কিংবা তাঁর থেকে সামান্য কম কিছু বছর ধরে। কোরোনা আবহেও পেশা থেকে একচুলও পিছিয়ে যাননি তাঁরা। এরকমই চারজন ডোমকে সম্মানিত করল উত্তর 24 পরগনার বারাসত উৎসব কমিটি। জীবনে প্রথমবার কোনও মঞ্চে সংবর্ধনা পেয়ে আপ্লুত সুপদ মন্ডল, মৃণাল মন্ডল, সুভাষ বণিক, অসীম মিত্ররা।
এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ সুপদ মন্ডল। তাঁর বাড়ি বারাসত পৌরসভার 2 নম্বর ওয়ার্ডের আদ্যপক এলাকায়। স্ত্রী, ছেলে, বউমা ও মেয়ে নিয়ে সংসার। পরিবারের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দিতে একসময় বারাসত হাসপাতালের মর্গে লাশকাটার পেশা বেছে নেন বছর পঞ্চান্নের সুপদবাবু। তা দিয়ে কোনও মতে সংসার চলে তাঁর। সংসারের হাল ধরতে বছর পাঁচেক আগে এই পেশায় যুক্ত হন সুপদবাবুর ছেলে মৃণালও।
অন্যদিকে, 53 বছরের সুভাষ বণিকের বাড়ি বারাসতের বিজয়নগর এলাকায়। তিনিও সংসারের হাল ধরতে 15 বছর আগে যুক্ত হন এই পেশায়। মধ্যমগ্রাম পৌর এলাকার বাসিন্দা অসীম মিত্র অবশ্য এই পেশায় যুক্ত হয়েছেন বছর চারেক আগে। তাঁরও কারণ সেই একই। এঁরা শুধু হাসপাতালের মর্গে লাশ কাটাছেঁড়া করাই নয়, কোরোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসক, নার্সদের মতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমান ভাবে কাজ করে গিয়েছেন।
তবে, এতদিন সেভাবে কোথাও সম্মান পাননি তাঁরা। ওই চারজন ডোমকে শুক্রবার সন্ধ্যায় সম্মানিত করা হল বারাসত উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে। এদিন তাঁদের হাতে স্মারক ও মানপত্র তুলে দেন প্রখ্যাত চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। হাজির ছিলেন বারাসত উৎসব কমিটির সম্পাদক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়-সহ অনেকে। কোরোনার নিয়মবিধি মেনেই আয়োজন করা হয়েছিল এদিনের অনুষ্ঠান।
এদিকে, জীবনে প্রথমবার কোনও মঞ্চে সংবর্ধিত হয়ে আনন্দে আত্মহারা সুপদ মন্ডলের মতো সকলে। এই বিষয়ে সুপদবাবু বলেন, "খুব ভালো লাগছে জীবনে প্রথম কোনও মঞ্চে সংবর্ধনা পেয়ে। এজন্য উদ্যোক্তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।" তাঁরই সহকর্মী অসীম মিত্র বলেন, "বারাসত উৎসব কমিটি আমাদের ডেকে সম্মান দেওয়ায় আপ্লুত। কোরোনার সময় জীবনের পরোয়া না করে কাজ করেছি আমরা।অথচ, কিছু মানুষ দূরে ঢেলে আমাদের একঘরে করার চেষ্টাও করেছিল। এটা না হলেই ভালো।"
বারাসত উৎসব কমিটির সম্পাদক ও পৌরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেন, "কোরোনা আবহে এঁরা যেভাবে মৃতদেহের কাটাছেঁড়া করে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে তা ভাবাই যায় না। ওঁদের এই সম্মান আগেই পাওয়া উচিত ছিল। আমরা ওঁদের সম্মান দিতে পেরে গর্বিত। আমরা এরকম এগারোশো কোরোনা যোদ্ধাকে সম্মানিত করব উৎসব চলাকালীন।"
আরও পড়ুন: কোরোনা আক্রান্ত আরও এক চিকিৎসকের মৃত্যু কলকাতায়
এদিকে এবার বারাসত উৎসবেও পড়েছে কোরোনার ছায়া। কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কোরোনার জেরে এবছর সীমিত সংখ্যক দোকান রয়েছে উৎসবে। শতদল মাঠে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই উৎসব চলবে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত।