বারাসত,27 মে : লকডাউনের জেরে সবজি ও ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে আগেই ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল কৃষকদের।সেই দগদগে ক্ষত এখনও শুকোয়নি।তারই মধ্যে আমফানের থাবা।জোড়া ধাক্কায় কার্যত বেসামাল কৃষকরা।সাইক্লোনের দাপটে উত্তর 24 পরগনার বিঘার পর বিঘা চাষের জমিতে নষ্ট হয়েছে সবজি ও ফসল।মাঠের জিনিস এখন পচে যাচ্ছে মাঠেই।ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতে মাথায় হাত পড়েছে জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষকদের।আমফান তাঁদের মেরুদণ্ড কার্যত ভেঙে দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এখন চাইছেন সরকারি সাহায্য।সেদিকেই তাকিয়ে আছেন তাঁরা।তবে,শুধু সবজি ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে এমনটা নয়,আমফানের তাণ্ডবে মাছ,ফুল ও অন্যান্য চাষেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর,বারাসত সহ জেলার বিভিন্ন মহকুমায় প্রায় 1 লাখ 39 হাজার হেক্টর কৃষিজমির ফসল নষ্ট হয়েছে।ক্ষয়ক্ষতির পরিমান 1 হাজার 138 কোটি টাকা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে,উত্তর 24 পরগনার বারাসতের 1 ও 2 নম্বর ব্লকের গ্রামীণ এলাকা, দেগঙ্গা ও আমডাঙার বিভিন্ন এলাকায় সবজি ও ফসলের চাষবাদ হয়।বনগাঁর একাংশ ও বসিরহাটের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়েও বিভিন্ন সবজি ও ফসলের চাষ করে থাকেন কৃষকরা।অধিকাংশই ধারদেনা ও সুদে টাকা নিয়ে মাঠে নামেন ফসল ফলাতে।ভালো ফলন হলেই একমাত্র লাভের মুখ দেখতে পারেন।নইলে দুর্দশার অন্ত থাকেনা কৃষকদের।এরই মধ্যে লকডাউন জারি হওয়ায় বিপাকে পড়তে হয় তাঁদের।অনেকে মাঠের থেকে সবজি ও ফসল তুলতে পারলেও বাজারদর না পাওয়ায় লোকসানের মুখ দেখতে হয়।আবার ফসল কাটার শ্রমিক না পেয়ে মাঠের জিনিস মাঠেই রেখে দিতে হয় অনেক কৃষককে।ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল হওয়ায় কৃষকদের একাংশ ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন।তার আগেই ঘূর্ণিঝড় আমফানের জোর ধাক্কায় ওলটপালট করে দিয়েছে সবকিছু।ঘুরে দাঁড়ানোর মেরুদণ্ড-টায় ভেঙে দিয়েছে হাজার হাজার কৃষকের।বারাসত,দেগঙ্গা,আমডাঙা সহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার শস্য ভাণ্ডারের দিকে চোখ রাখলেই দেখা যাবে আমফানের তান্ডবের চিহ্ন স্পষ্ট।বিঘার পর বিঘা চাষের জমিতে জল ঢুকে নষ্ট হয়ে গিয়েছে সবজি ও ফসলের।হাওয়ার গতিতেও নুইয়ে গিয়েছে বিভিন্ন ফসলও।এই পরিস্থিতিতে পরিবার নিয়ে কিভাবে বাঁচবেন তা ভেবেই অস্থির ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।সরকারি সাহায্যই একমাত্র তাঁদের বাঁচাতে পারে বলে মনে করছেন কৃষকরা।
এবিষয়ে এক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা বলেন,"ধারদেনা করে এক বিঘা জমিতে পটল,ঝিঙে ও নেলুয়ার চাষ করেছিলাম।ভেবেছিলাম তা বিক্রি করে লাভের মুখ দেখে ধারদেনা মেটাব।কিন্তু,আমফানের জেরে সবকিছু শেষ হয়ে গেল।এখন কিভাবেই ধারদেনা মেটাব?আর কি খাব?তার চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছে"।তাঁর কথায়,"সাইক্লোনের তাণ্ডবে সমস্ত সবজি মাঠেই নষ্ট হয়ে গেছে।বিপুল লোকসান হয়েছে।এই অবস্থায় সরকারি সাহায্য না পেলে মৃত্যু ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।প্রশাসনকে বলব,অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে। সরকার সাহায্য করুক।আশা করব,প্রশাসন নিশ্চয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াবে"।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে,বারাসত,বনগাঁ ও বসিরহাট মহকুমার প্রায় 20 হাজার হেক্টর সবজি,19 হাজার হেক্টর তিল,48 হাজার হেক্টর পাট,10 হাজার হেক্টর কলা,5 হাজার হেক্টর পেঁপে চাষ ছাড়াও ফুল ও অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।আধিকারিকদের দাবি,সামগ্রিক তথ্য হাতে এলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।এই তিন মহকুমার প্রায় 16 হাজার হেক্টর মিষ্টি ও নোনা জলের মাছ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এছাড়া 500 মেট্রিক টন বাগদা ও ভেনামি চিঙড়ি,700 মেট্রিক টন গলদা চিঙড়ি চাষের ক্ষতি হয়েছে।ক্ষতি হয়েছে 20 মেট্রিক টন মাছের চারা পোনাও।
এদিকে,লকডাউনের জেরে সবজি ও মাছের জোগান এমনিতেই কম ছিল বাজারে।তার ওপর গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো হাজির হয়েছে আমফান।জোড়া ধাক্কায় ইতিমধ্যেই জোগানে ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করেছে।বাড়ছে সবজি ও মাছের দামও।যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে গৃহস্থের হেঁসেলে।