বারাসত, 25 জুলাই: পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পর থেকেই তাঁর ঘনিষ্ঠদের উপর নজর ইডি'র ৷ কার কার সঙ্গে বেশি মেলামেশা করতেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা বর্তমান শিল্পমন্ত্রী, ইতিমধ্যেই সেই বিষয়ে খোঁজ খবর শুরু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷ সূত্রের খবর, বারাসতের এক বিপণী সংস্থার কর্ণধারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ৷ সুসম্পর্ক এবং যোগাযোগ ভালো থাকায় ওই বিপণী সংস্থার প্রায় সব অনুষ্ঠানেই হাজির থাকতেন ধৃত মন্ত্রী ৷
সেই কারণে ইডি'র আধিকারিকরা মনে করছেন বারাসতের ওই বিপণী সংস্থার মাধ্যমে শিক্ষক দুর্নীতির টাকা বিদেশে পাচার হয়ে থাকতে পারে । তবে শুধু বারাসতেরই নয়, গড়িয়ারও একটি বিপণী সংস্থার সঙ্গে মন্ত্রীর সুসম্পর্কের কথা জানা গিয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর(ed eyes to investigate barasat and garia textile company close to partha chatterjee)৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই টাকা উদ্ধার কাণ্ডের রহস্য ভেদ করতে এই দুটি বিপণী সংস্থার কর্তৃপক্ষকে জেরা করার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে ইডি আধিকারিকদের । ইতিমধ্যে তার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে বলে খবর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে । জানা গিয়েছে, রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় কয়েকবছরেই বারাসতের ওই বিপণী সংস্থার মালিক ব্যবসার পরিধি বাড়িয়ে ফেলেন কয়েকগুণ । মন্ত্রীর সঙ্গে সখ্যতার সুবাদে তিনি নামে-বেনামে বহু সম্পত্তিও করে ফেলেছেন ইতিমধ্যে ৷ বারসতে কান পাতলে সেই কথায় আলোচিত হতে শোনা যাবে ৷
আরও পড়ুন : কে এই পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতা ? জানুন মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কেমিস্ট্রি
পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পরই জল্পনা আরও বেড়েছে । তাই ব্যবসায়ীদের একাংশ চাইছেন, এত দ্রুত ওই বিপণন সংস্থার মালিকের ফুলে ফেঁপে ওঠার প্রকৃত রহস্য সামনে আনুক ইডি । এছাড়া সংস্থার মাধ্যমে যদি কোনও বেআইনি লেনদেন কিংবা দুর্নীতির টাকা বিদেশে পাচার হয়ে থাকে তবে তারও তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন ব্যবসায়ী মহলের একাংশ । এদিকে,বারাসতের ওই বিপণী সংস্থার সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যে যোগাযোগ রয়েছে তার বেশ কিছু ছবিও সামনে এসেছে । সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে ওই বিপণী সংস্থায় গোল টেবিলে বসে রয়েছেন রাজ্যের বর্তমান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । তাঁকে ঘিরে রয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ থেকে শুরু করে বারাসত পৌরসভার চেয়ারম্যান-সহ শাসকদলের নেতা-নেত্রীরা । ছবিটি গত বছরের পুজোর ঠিক আগে বলে খবর স্থানীয় সূত্রে ।
আরও চমক রয়েছে, মুজিবর রহমানের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি চটের ব্যাগ উন্মোচন করা হয়েছিল ওই বিপণনী সংস্থার তরফে । সংস্থার সেই অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ৷
আরও পড়ুন : এসএসসি দুর্নীতিতে গ্রেফতার পার্থ, কীভাবে গোটানো হল তদন্তের জাল ?
তদন্তে নেমে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এক দেহরক্ষীর প্রতিও নজর রেখেছে ইডি ৷ তদন্তে নেমে ইডি আধিকারিকরা জানতে পারেন, মাঝে মধ্যেই উত্তর 24 পরগনার বারাসতের একটি শাড়ির দোকান থেকে ভুরি ভুরি শাড়ি কিনে আনতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় । ওই দেহরক্ষী নিজে বারাসতের সংশ্লিষ্ট বিপণী সংস্থা থেকে প্যাকেট প্যাকেট শাড়ি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গাড়িতে তুলে দিত । কেন মন্ত্রী ওই বিপণী সংস্থা থেকেই বিপুল পরিমাণ শাড়ি কিনতেন, তার উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা । পাশাপাশি পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে একাধিক নথিপত্রের পাশাপাশি উদ্ধার হয় বেশ কিছু দোকানের ক্যাশমেমো । সেই সকল ক্যাশমেমো ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর ইডি'র গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন উত্তর 24 পরগনার বারাসতের একটি বিপণী সংস্থা থেকে একাধিকবার জিনিসপত্র কিনেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় । বিশেষ করে একাধিক দামি শাড়ি কিনেছিলেন বিভিন্ন সময় । এমনকি সেই ক্যাশমেমো থেকে ইডির গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, একাধিক সময় সংশ্লিষ্ট বিপণী সংস্থায় বিনিয়োগ করতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় । আর এই বিনিয়োগ করার তথ্য সামনে আসার পরেই এই ঘটনায় আরও বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা ।
আরও পড়ুন : পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতার বাড়ি থেকে 20 কোটি টাকা উদ্ধার ইডি'র
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ইডি'র গোয়েন্দারা সংশ্লিষ্ট বিপণী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং প্রয়োজন পড়লে তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারেন ৷ গোয়েন্দারা সন্দেহ করছেন যে, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া 21 কোটি টাকা কিছুই নয়, বরং এর থেকেও বিপুল পরিমাণ টাকা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সাহায্যে বাংলাদেশে হাওয়ালার মাধ্যমে ট্রান্সফার হয়ে গিয়েছে । বারাসতের ওই বিপণী সংস্থার মাধ্যমেই বিপুল পরিমাণ টাকা বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের অনুমান ৷ ফলে বারাসতের ওই বিপণী সংস্থার সঙ্গে কথা বলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দাদের কাছে ৷
আরও পড়ুন : দুর্নীতিকে সমর্থন করি না, পার্থর থেকে কি দূরত্ব বাড়ালেন মমতা ?