বসিরহাট, 24 অক্টোবর: প্রতিমা নিরঞ্জন ঘিরে দুই বাংলার মিলনক্ষেত্র ইছামতী! বহু বছর ধরে দশমীর দিন ইছামতীতে প্রতিমা বিসর্জনের রেওয়াজ চলে আসছে। এই একটা দিন ভারত-বাংলাদেশের জলরেখার ভৌগলিক ভাগ যেন কার্যত মুছে যায়। নদীবক্ষে ওপার থেকে ভেসে আসে ঢাকের বোল। এপার মুখরিত হয় 'আসছে বছর আবার হবে ধ্বনিতে'। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি। এই দৃশ্যে বুকের ভিতর কোথাও যেন বাঙালির সনাতনী-চিরন্তনী সমস্ত সত্ত্বা আরও আবেগবিহ্বল হয়ে ওঠে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, এদিন বেলা 12টা থেকে শুরু হয়েছে টাকিতে নিরঞ্জনপর্ব। যা চলে বিকেল 5টা অবধি। প্রতিমা নিরঞ্জনে অংশ নেওয়ার জন্য পুজো উদ্যোক্তাদের আগাম অনুমতিপত্র নিতে হয় স্থানীয় পৌরসভা ও পুলিশের কাছ থেকে।তা দেখিয়েই মাঝ নদীতে নৌকায় করে প্রতিমা নিরঞ্জনের সুযোগ মেলে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পুলিশ আর কাউন্সিল। এই দু'জনের থেকে অনুমতি নিতে হয়। যদিও এবারে বাংলাদেশের নৌকার সংখ্যা তুলনামূলক অনেকটাই কম বলে জানা গিয়েছে। বরং ভারতের নৌকার সংখ্যা 500-র ওপরে।
টাকিতে রাজবাড়ি ঘাট, ঘোষবাবুর ঘাট, মুক্তবাবুর ঘাটেই মূলত বিসর্জন হয়। প্রতিমা নিরঞ্জন উপভোগ করতে এদিন দূর দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন টাকির রাজবাড়ি ঘাটে। হাজির হন বহু পর্যটকও। কড়া পুলিশি নিরাপত্তার সঙ্গে মাঝ নদীতে চলে বিএসএফের টহলদারিও। নদীবক্ষে বিএসএফের স্পিড বোট দিয়ে তৈরি হয় অস্থায়ী বর্ডার। মূলত নদীর মাঝ বরাবর এগুলি থাকে। এদিনের জন্য দুই দেশের নদী-সীমান্ত এই স্পিড বোটই নির্দিষ্ট করে দেয়। বোটের টিকিট পেতে গেলে আগাম তা কেটে রাখতে হয়। তবে নদীর ধারে দাঁড়িয়ে যে কেউ চাক্ষুষ করতেই পারেন এই নয়নাভিরাম দৃশ্য।
অন্যদিকে, নিয়ম-রীতি মেনে টাকি রাজবাড়ি (পুবের বাড়ি) প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে এবছরও। নিয়ম অনুযায়ী টাকি রাজবাড়ির প্রতিমা ভাসানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এপার বাংলার প্রতিমা নিরঞ্জনপর্ব। এরপর বাকি বনেদি এবং বারোয়ারি পুজোর প্রতিমা ভাসান চলে পরপর। পান্তা ভাত ও কচু শাক দিয়ে বিদায় জানানো হয় টাকি জমিদার বাড়ির দুর্গা মাকে। পরে সেই পান্তা ভাত এবং কচু শাক প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয় সকলকে। এই রীতি দীর্ঘ 300 বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে টাকি পুবের বাড়ির রাজবাড়িতে। এখানে আরও এক বৈশিষ্ট্য হল 26 বেয়ারার কাঁধে চেপে উমা-কে জমিদার বাড়ি থেকে বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় টাকি রাজবাড়ি ঘাটে। চলে ধুমধাম করে সিঁদুর খেলাও।
আরও পড়ুন: বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গাপুজোয় সাবেকি সাজে মহিলাদের ঐতিহ্যের সিঁদুর খেলা