পুরুলিয়া, 2 মার্চ: শিক্ষার জন্য বয়স যে বাধা নয়, তা একবার ফের প্রমাণ করলেন বলরামপুর থানার পতিডি গ্রামের বাসিন্দা দুলু মাহান্তী পতি। যাঁর বয়স 39 বছর ৷ যিনি নিজের 19 বছরের মেয়ে ইন্দ্রাণী পতির সঙ্গে এবছর স্নাতক স্তরের প্রথমবর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পুরুলিয়ার বরাবাজার থানা এলাকার নীলমোহনপুরের বাসিন্দা দুলু দেবী যখন দশম শ্রেণিতে ওঠেন তখন সালটা 1999। সেই সময়ই তাঁর বিয়ে হয়ে যায় পতিডি গ্রামের বাসিন্দা দয়াময় পতির সঙ্গে (Mother and Daughter in Appear in Graduation)।
শ্বশুরবাড়ির লোকজনের উৎসাহে ফের নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। 2018 সালে মুক্ত বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও 2020 সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। এই কাজে বউমাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন 70 বছরের শাশুড়ি পুতুলুরানি পতিও। এ বছর মা দুলু দেবী যিনি বলরামপুর কলেজের পাশ কোর্সের ছাত্রী তিনি স্নাতক স্তরের পরীক্ষা দিচ্ছেন বরাবাজার কলেজ থেকে। অন্যদিকে, বরাবাজার কলেজের শিক্ষাবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী মেয়ে ইন্দ্রাণী পরীক্ষা দিচ্ছেন মানবাজার কলেজ থেকে।
বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে দুলু দেবী বলেন, "খুবই ভালো লাগছে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে। বাড়িতে সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছে। পড়াশোনার ইচ্ছে আমার বরাবরই ছিল, কিন্তু ছোট ছোট বাচ্চা থাকার কারণে তখন হয়নি ৷ তারপর ছেলে, মেয়ে যখন বড় হল তখন নিজের ইচ্ছের কথা বাড়িতে সকলকে জানায় আর সবাই তাতে রাজিও হয়ে যায়। মেয়ে যখন আমার দশম শ্রেণিতে ওঠে তখন আমিও মুক্ত বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা পুনরায় শুরু করি।"
আরও পড়ুন: এমএ পাশ মেয়ের পরামর্শে ছেলের সঙ্গে মাধ্যমিকে বসলেন মা
নিজের বাড়ির কাজ, হেঁসেলের কাজ সামলে মা ও মেয়ে বসে যান পড়াশোনা নিয়ে ৷ পরীক্ষার দিনগুলিতেও রান্না করার পর মা ও মেয়ে লেগে পড়েন একে অপরকে তৈরি করে দিতে। এদিন পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে দেখা গেল মা ও মেয়ে একে অপরের খোঁজ নিচ্ছেন যে, "কলম টলম সব নিয়েছেন কি না।" অন্যদিকে, মেয়ে ইন্দ্রানী বলেন, "মা তো আমার কাছে বন্ধুর মতো। দু'জনেই আমরা পড়ুয়া ৷ তাই রান্না থেকে পড়া সব কাজেই আমরা একে অপরকে সাহায্য করি ৷ মা আমাকে অনেক সময় পড়া বুঝিয়ে দিতে সাহায্য করে। আমার নেহাতই শিক্ষাবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিল না-হলে আমরা দু'জনে একই কলেজে ভরতি হতাম।"
মা ও মেয়ে দু'জনেই জানান, পরীক্ষা তাঁদের ভালো হচ্ছে। নিজের স্ত্রীকে এই বয়সে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উৎসাহ জোগান পেশায় কৃষক দয়াময় পতিও। এদিন তিনি বলেন, "যত দূর ইচ্ছে পড়াশুনা করুক ও অসুবিধে নেই ।"