তমলুক, 28 অক্টোবর : শাসকদলের দাপুটে নেতা পাঁশকুড়া ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি ও পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি কুরবান শাহ খুনের নেপথ্যে রয়েছে এলাকা দখলের রাজনীতি । খবর পাঁশকুড়া থানার পুলিশ সূত্রে ৷ স্থানীয় বাসিন্দাদেরও একাংশের দাবি, তৃণমূলের প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই প্রাণ দিতে হয়েছে কুরবানকে ৷ দলেরই না কি অনেকের আক্রোশ ছিল কুরবানের উপর । সেই আক্রোশ থেকেই পরিকল্পনা করে খুন করা হয় কুরবানকে । আর এই খুনের জন্য সাড়ে 4 লাখ টাকা খরচ করে আনানো হয়েছিল সুপারি কিলার । পুজোর সময় নবমীর রাতে মাইশোরাতে দলের কার্যালয়ে বসেছিলেন বছর বত্রিশের কুরবান । দ্রুত গতির বাইকে ছুটে এসে তৃণমূল কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে কুরবানকে সেদিন খুন করে পালিয়ে যায় ৷ খুনের ধরন দেখে ঘটনার মূলে গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পেয়েছিল পুলিশ । পরিবারের লোকেরাও খুনের অভিযোগ এনে CID তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন ।
কুরবান খুনের কিনারা করতে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে তদন্তে নেমেছিল পুলিশ । শুরুতেই তদন্তকারীদের হাতে ধরা পড়েছিল পাঁশকুড়া ব্লক তৃণমূলের নেতা মহম্মদ খালেক । ওই নেতাকে জেরা করে পুলিশ গতরাতে গ্রেপ্তার করে আরও পাঁচজনকে । পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে চার জন তৃণমূলের নেতা আর একজন সুপারি কিলার ৷ শেখ তসলিম আরিফ (রাজা) নামের ওই সুপারি কিলারের বাড়ি খড়গপুর থানা এলাকায় । বাকি চার তৃণমূল কর্মীদের নাম পাঁশকুড়ার রাজশহরের দীপক চক্রবর্তী, বৃন্দাবনপুরের নিশীথ পাল, মাংলুইয়ের নবারুণ মিশ্র ও জয়কৃষ্ণপুরের মলয় ঘোষ । তদন্তকারীদের কাছে এরা আক্রোশের জেরে কুরবানকে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছে ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনায় আরও কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে ৷ তাদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে ৷
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপার ভি সলেমান নেশাকুমার বলেন, "এ পর্যন্ত এই ঘটনায় মোট ছয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে ।" ধৃতদের ব্যবহৃত কয়েকটি মোবাইলও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ ।
আজ ধৃত পাঁচ জনকে তমলুক আদালতে তোলা হয় । বিচারক তদন্তের স্বার্থে ধৃত চার তৃণমূল নেতাকে 14 দিনের জন্য পুলিশ হেপাজতে পাঠিয়েছেন ও অপর অভিযুক্ত অর্থাৎ সুপারি কিলার রাজাকে জেল হেপাজতে রাখা ও তাকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আদালতের সরকারি আইনজীবী সফিউল আলি খান । তিনি বলেন, "খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের হাত রয়েছে বলে স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে পুলিশি তদন্তে । পুরোনো আক্রোশের জেরে এই খুন ও খুনের ষড়যন্ত্র বলে জানা গেছে ।" শুরুতে অবশ্য এই ঘটনার পিছনে BJP যোগের অভিযোগ তুলেছিল নিহত নেতার পরিবার ও তৃণমল । BJP নেতা আনিসুর রহমানকে খুনে মুখ্য অভিযুক্ত করে খুনের অভিযোগও দায়ের করা হয়েছিল পাঁচ জনের নামে । কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই পাঁচ জনের কাউকেই এই মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি । তারা যুক্ত আছে কি না সে বিষয়েও অবশ্য কোনও মন্তব্য করেনি পুলিশ । যদিও আনিসুর ও BJP-র তরফে দাবি ছিল, অভিযোগ মিথ্যে । আনিসুর ঘটনার CBI তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন ।