বর্ধমান,17 সেপ্টেম্বর: সকাল হতে না হতেই ট্রেন ধরার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন কুন্তল কুণ্ডু, জ্ঞানশংকর তা, সুরঞ্জন মুখোপাধ্যায়, নীহার পালেরা। এরা সকলেই দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের কর্মী (Worker of Durgapur Steel Plant) । আগে বরানগর দমদম থেকে আসানসোল লোকাল ধরার জন্য ভোর চারটেয় ট্রেন ধরতেন অমিতাভ বোস, অরূপ দাসরা। আর বিশ্বকর্মা পুজোর (Vishwakarma Puja) আগে তাদের শুরু হয়ে যেত চলন্ত ট্রেনে বিশ্বকর্মা পুজোর প্রস্তুতি (Vishwakarma Puja Celebration)।
ট্রেন তো আর আগের দিন থেকে সাজানো যায় না ৷ অগত্যা যতটা সম্ভব সকালে এসে চলত ট্রেনকে ফুল, মালা, রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো। চলতো আপেল, বেদানা, ন্যাশপাতি, কলা-সহ অন্যান্য ফল কাটা। মিষ্টির ভারটা অবশ্যই থাকতো কুন্তল কুন্ডুর উপর। জলভরা সন্দেশ, মোতিচুরের লাড্ডু, মুগের বরফি-সহ আরও কত কি মিষ্টি হাতে হাজির হতেন তিনি।
যেহেতু আগে থেকে ট্রেন পাওয়া যাবে না তাই আগের দিন দলবেঁধে স্টেশন মাস্টারকে অনুরোধ করা হত সকাল 07.25-এর আসানসোল লোকাল বেশ কিছুক্ষণ আগে প্ল্যাটফর্মে দিয়ে দেওয়ার জন্য। রেলও বাড়িয়ে দিত সহযোগিতার হাত। এদের মধ্যে জ্ঞানশংকর তা আসতেন তিন চারজন ঢাকিকে নিয়ে। সঙ্গে থাকত ছোট-ছোট কলাগাছ। ট্রেনের শেষ থেকে চার নম্বর কামরায় বিশ্বকর্মার ছবি সাঁটিয়ে শুরু হতো বিশ্বকর্মার পুজো। কামরায় ঢোকার মুখে বেঁধে দেওয়া হতো কলাগাছ ৷ মানকরে ট্রেন থামলেই উঠতেন দেবদাস ভট্টাচার্য, তপন দে, অরূপ দত্তরা।
আরও পড়ুন: বিশ্বকর্মা পুজোর দিন হাতি পুজো, থাকে মনপসন্দ খাবার
ট্রেনের কামরায় যাতে প্রত্যেক প্যাসেঞ্জার লাড্ডু পান সেদিকে থাকত প্রত্যেকেরই নজর। আর বিভিন্ন স্টেশন থেকে ওঠা যাত্রীরা এদিন নিত্যযাত্রীদের সঙ্গে আনন্দে সামিল হতেন। লকডাউনের সময় থেকে বদলে গেল চিত্রটা। এরমধ্যে কেউ কেউ অবসর নিয়েছেন। কেউ ট্রান্সফার নিয়ে বাড়ির কাছাকাছি চলে গিয়েছেন। লকডাউনের জন্য বছর দুয়েক ট্রেনে বিশ্বকর্মা পুজোও বন্ধ ছিল। এবার পুজো হতেও আগের মতো সেই জৌলুশ আর নেই। ঠিক যেন কফি হাউসের মতো। কত স্বপ্নের রোদ ওঠে এই চলন্ত ট্রেনে, কত স্বপ্ন ট্রেনে মিশে যায়। ট্রেন ছুটে চলে নিজের গন্তব্যস্থলে। কানে বাজে সেই ঢাকের শব্দ ৷