মেদিনীপুর, 2 মে: সরকারি অফিস, বাড়ি ঘরের পর এবার রাস্তায় চলাচল করা ই-রিকশা অর্থাৎ টোটোতেও নীল সাদার ছোঁয়া ৷ এমনটাই মেদিনীপুর শহরের সমস্ত টোটো চালকদের কাছে নির্দেশিকা এসেছে পৌরসভার তরফে ৷ নির্দেশিকায়, চালকদের তাদের টোটোকে নীল সাদা রং করতে বলা হয়েছে। আর তা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা । এই ঘটনায় ক্ষোভ জন্মেছে টোটো চালকের মধ্যেও । তবে টোটো ইউনিয়ন নেতা সহমত জানিয়েছেন পৌরসভার নির্দেশিকাতে ।
প্রসঙ্গত, একসময় 2011 সালে রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরেই সমস্ত সরকারি দফতরগুলি নীল সাদা রঙে সাজিয়ে তোলা হয় ৷ আর এই নীল সাদা রং করার নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই মতো সরকারি সমস্ত দফতরগুলি রাতারাতি রং পরিবর্তন করে নীল সাদাতে রূপান্তরিত হয় । এমনকী পৌরসভাগুলিও নীল সাদা রঙে সেজে ওঠে । এ বার পৌরসভা থেকে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, সেই সব টোটোকেই মান্যতা দেওয়া হবে রাস্তা চলাচলের ক্ষেত্রে যেসব টোটোর রং নীল সাদা থাকবে । আর সেই নির্দেশ পাওয়ার পরেই নিজেদের গাড়ির রং পরিবর্তনে নামল মেদিনীপুরের খেটে খাওয়ার টোটো চালকরা । রাতারাতি লাল, হলুদ, মেরুন কালারের টোটো পরিবর্তিত হচ্ছে নীল সাদাতে ।
মেদিনীপুর শহরে মোট 25টি ওয়ার্ড রয়েছে । এক থেকে পঁচিশটি ওয়ার্ডের মধ্যে এই যান চলাচলের ক্ষেত্রে সেই সময় অটোর পাশাপাশি টোটো চলাচলে অনুমতি দিয়েছিল প্রশাসন । প্রথমে 876টি টোটো চলছিল ৷ পরবর্তীকালে আরও কিছু সংযোজিত হয়েছে ৷ পৌরসভার নম্বর দিয়ে সেগুলোর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে হাজারের কাছাকাছি । কিন্তু এরপরই জল গড়িয়েছে অন্যদিকে । একেকজন মালিক তার এক ও একাধিক টোটো নামিয়েছে শহর ও জেলায় । এই মুহূর্তে টোটোর জেরে মেদিনীপুরে পা রাখবার জায়গা নেই । প্রতিদিনই টোটো অটোতে সংঘর্ষ দেখা যাচ্ছে ৷ পাশাপাশি যাত্রী তোলা নিয়ে টোটো চালকদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব হচ্ছে ।
তাছাড়া অতিরিক্ত টোটো রাস্তায় চলাচলের ফলে চলাফেরার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে শহরবাসীদের ৷ তাতে যেমন ভিড় জমছে তেমনই বাড়ছে দুর্ঘটনা । প্রতিদিনের এই ঝামেলা এড়াতে তাই বৈঠক ডেকেছিলেন মেদিনীপুর পৌরসভা । সেই বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিল টোটো চালকের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ববৃন্দ, টোটো চালকরা, পৌরসভার কর্মকর্তা, পুলিশ প্রশাসন ও সরকারি আধিকারিক বৃন্দ । আর তাতেই সিদ্ধান্ত হয় যে 2 মে থেকে শহরে যানজট এড়াতে কেবলমাত্র রেজিস্টেশন করা নম্বরযুক্ত সমস্ত নীল-সাদা টোটোই মান্যতা পাবে । সেই মোতাবেক যেগুলি আগে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ৷ কিন্তু অন্য রঙের টোটো ছিল ৷ সেগুলিকে রং করে নীল সাদা করা হচ্ছে । রাতারাতি লাইন দিয়ে টোটো গুলির রং করার কাজ চলছে এখন সহজ জুড়ে ।
এই টোটোতে নীল সাদা করার নিয়েই তীব্র বিরোধিতা করেছে গেরুয়া শিবির । বিজেপি জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস বলেন, "সরকার পরিবর্তনের পরেই সমস্ত সরকারি দফতর এবং বাড়িগুলিকে নীল সাদা করেছে ৷ রাজ্যের মানুষকে সুবিধা পাওয়ার জন্য নীল সাদা করার নির্দেশিকাও দিয়েছিল । এরপরই এই টোটোগুলিকে নিজেদের আধিপত্যে রাখার জন্য নীল সাদা রংয়ের নির্দেশিকা দিয়েছে ৷ যার আমরা তীব্র বিরোধিতা করছি ।"
যদিও টোটোর নির্দেশকাকে মান্যতা দিয়েছে টোটো ইউনিয়ন ইউনিয়ন নেতা বুদ্ধ মহাপাত্র । তিনি উলটো সুরে বলেন, "মূলত শহরে যানজট এড়াতেই এই নির্দেশিকা ৷ আর তাই তড়িঘড়ি নীল ও সাদা রং করা হচ্ছে । আমরা চাই শহরকে যানজট মুক্ত করতে ।" টোটো চালক দেবাশিস পাল ও গৌতম দাসরা বলেন, "শহরে গাড়ি চালাতে গিয়ে টোটোতে নীল সাদা রং করতে বাধ্য হচ্ছি । কারণ পৌরসভার নির্দেশিকা না মানলে আমদের না খেতে পেয়ে মরতে হবে । তাই গাড়িকে আমরা নীল সাদা রং করছি ৷ নিজেদের টাকা খরচ করে ।"
আরও পড়ুন: নিয়োগ মামলায় 'বেঙ্গল টাইগার' অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ বদলে হতাশ 'ফ্যান' টোটোচালক