মেদিনীপুর, 21 জুলাই: কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে থেকে গ্রেফতার হওয়া শেখ নূর আমিনকে নিয়ে সন্দেহে দানা বাঁধতে শুরু করেছে মেদিনীপুর শহরের অলিগঞ্জ কসাইপাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে । পাড়া-প্রতিবেশীদের বক্তব্য, 15-20 দিন অন্তর গভীর রাতে আসতেন নূর । পুলিশ স্টিকার সাঁটানো বড় কালো গাড়িতেই তিনি আসতেন ৷ ফলে এলাকার বাসিন্দারা তাঁকে সমীহ করেই চলতেন ৷ কারও সাহস হয়নি তাঁর সম্পর্কে বেশি কিছু জানার ৷ তাই শুক্রবার নূরের গ্রেফতারির খবর ছড়িয়ে পড়তেই তাঁকে নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে কসাইপাড়ায় ৷
মেদিনীপুরে নূর আমিনের শ্বশুরবাড়ি: নূর আমিনের শাশুড়ি সুলতানা বিবির বক্তব্য, পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা এলাকায় আদি বাড়ি নূরের । মেদিনীপুর শহরের অলিগঞ্জ কসাইপাড়া এলাকায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি । স্ত্রী পুনম বিবি ও দুই সন্তান সেখানেই থাকেন । পুলিশের স্টিকার লাগানো কালো গাড়িতে প্রতি সপ্তাহের শনিবার তিনি আসতেন শ্বশুরবাড়িতে । সোমবার চলে যেতেন কলকাতায় । সেখানে ইন্টিরিয়ার ডেকোরেশনের দোকান আছে বলে জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী পুনম বিবি ।
আরও পড়ুন: নূরের সঠিক পরিচয় জানতে বিএসএফ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করছে লালবাজার
পুনম বিবির দাবি: নূরের স্ত্রীর বক্তব্য, তাঁর স্বামী মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন । বাইপোলার ডিসঅর্ডারের রোগী । নিয়মিত ওষুধ খেতে হয় । গত 14 জুন কলকাতায় এক চিকিৎসকের কাছে নূরকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় । চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরেও তাঁর স্বামীর সমস্যা কিছুটা বেড়েছে । বিষয়টি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে তিনি জানিয়েছেন ৷
তবে পুনম বলেন, ‘‘নূর মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী । মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী হিসেবে এ দিন একুশে জুলাইয়ের সভায় ডাক পেয়েছিলেন নূর । শুক্রবার সকালেও ফোনে কথা হয়েছে । শনিবার রাতে মেদিনীপুরে আসবেন বলে ফোনে জানিয়েছিলেন নূর । আমরাও টিভিতে সবকিছু জানতে পারলাম । আমি খুব দুশ্চিন্তায় আছি ।’’

তিনি আরও জানান, কলকাতায় ব্যবসাও আছে নূরের । একসময় বিএসএফের বিভিন্ন জিনিসপত্র সরবরাহ করতেন ! প্রশ্ন উঠছে, মানসিক রোগ নিয়ে এতসব সামলাতেন কী করে নূর ? সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য পুনম দিতে পারেননি ৷
এদিকে, কলকাতা পুলিশের দাবি, নূরের আটক করা কালো গাড়িতে পাওয়া গিয়েছে ছুরি-ভোজালি-আগ্নেয়াস্ত্র এবং মাদক । এছাড়াও, পাওয়া গিয়েছে পুলিশ, আইবি ও বিএসএফের একাধিক ভুয়ো পরিচয়পত্র ! কিন্তু পুনমের পালটা দাবি, সবকিছুই তো গাড়িতে পাওয়া গিয়েছে । আর, যেটাকে আগ্নেয়াস্ত্র বলা হচ্ছে, ওটা একটা লাইটার ! ভালো করে দেখুন গিয়ে । ফলে প্রশ্ন উঠছে তবে কি এই সব কিছুই স্ত্রী পুনম বিবি জানতেন ? স্বামীকে সতর্ক করেননি কেন ? এই প্রশ্নেরও কোনও উত্তর মেলেনি ৷
আরও পড়ুন: মমতার বাড়ির সামনে সশস্ত্র যুবক, নূর আমিনের উদ্দেশ্য নিয়ে ধন্দে পুলিশ
কসাইপাড়ার বাসিন্দাদের বক্তব্য: কসাইপাড়ার বাসিন্দারা বলছেন, "উনি পুলিশের স্টিকার লাগানো গাড়িতে করে রাতে রাতে আসতেন । জিজ্ঞেস করলে বলতেন গাড়িটি পুলিশকে দেওয়া আছে ।" এলাকার বাসিন্দা শেখ তাবরেজ ও সানির মতে, হঠাৎ রাতেন আসতেন এই নূর আমিন । বিরাট বড় কালো গাড়িতে করে আসতেন ৷ পুলিশের স্টিকার লাগানোই থাকত তাঁর গাড়িতে । মাঝে মাঝে আসতেন এবং মাঝে মাঝে উধাও হয়ে যেতেন ।
তাঁরা জানাচ্ছেন, তবে কোনোদিন খুব একটা পাড়ার লোকেদের সঙ্গে জমজমাট ভাবে আড্ডা দেওয়া বা গল্প করার মতো অবস্থায় পাওয়া যায়নি এই নূর আমিনকে । তাঁর শ্বশুরবাড়ির অবস্থা খুব ভালো নয় ৷ চা দোকান রয়েছে ৷ সেই দোকানের আয় থেকেই সংসার চলে ৷ কিন্তু সম্প্রতি বড় বাড়ি হচ্ছিল ওদের ৷ এলাকাবাসীর কারও কারও দাবি, কিছুদিন আগে ভারতের জাতীয় পতাকা পায়ের নিচে রেখে তা ফেসবুক লাইভ করেও পোস্ট করেছিল এই নূর আমিন ।
ফলে রহস্য বাড়ছে এই ব্যক্তিকে ঘিরে ৷ সত্যিই তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ! নাকি নেপথ্যে লুকিয়ে অন্য কোনও ষড়যন্ত্রের বীজ ! আপাতত তদন্ত করছে কলকাতা পুলিশ ৷ সেই তদন্তে কী উঠে আসে, সেই দিকেই তাকিয়ে কসাইপাড়ার মানুষ ৷
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে থেকে আটক যুবক মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত, দাবি স্ত্রী'র