ভীমচক, 31 জানুয়ারি: মাও আতঙ্কে কাটত এক একটা দিন । আর সেই আতঙ্কের ভয়ে স্কুল কলেজ থাকত বন্ধ ৷ তেমনই বন্ধ থাকত হাট-বাজার ৷ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিয়ের আসর ৷ এমনকী ঘর থেকে বেরোতেই ভয় পেতেন মানুষজন । কিন্তু আস্তে আস্তে পরিবর্তন ঘটেছে সময়ের ৷ সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের মাও অধ্যুষিত এলাকার পরিস্থিতির ৷ এখন সেখানে বসছে গণবিবাহের আসর ৷ এমনই এক গণবিবাহের আসরের (Mass Marriage) আয়োজন করে আম্মা জনসেবা পরিষদীয় সোসাইটি ৷ এই কর্মকাণ্ডের মূলে কয়েকজন শিক্ষিত যুবক-যুবতী ।
একসময় মেদিনীপুর জেলার ছোট কলসি ভাঙ্গা, পাথরী, ভীমচক, পিড়াকাটা এলাকাগুলির নাম শুনলেই আঁতকে কেঁপে উঠত রাজ্যের মানুষজন । একটাই আতঙ্ক ছিল মাওবাদীদের । জানা যায়, দিনের পর দিন গণআসর বসিয়ে সেখানে মৃত্যুদণ্ড দিত মাওবাদীরা । শুধু রাতের বেলায় নয়, ভর দুপুরবেলায় চলত গুলির আওয়াজ । গুলিবিদ্ধ হতেন একাধিক মানুষজন বলে খবর পাওয়া যেত । আর সেই মাওবাদীদের কর্মকাণ্ডকে রুখতে আসরে নামানো হয়েছিল কেন্দ্র বাহিনীকে । রাতারাতি এলাকায় গড়ে তোলা হয় এক ও একাধিক ক্যাম্প । আস্তে আস্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করা হয় । সরকার পরিবর্তনের পর পুনর্বাসনের প্যাকেজ দিয়ে ছোট কলসি ভাঙ্গা, বড় কলসি ভাঙ্গা, ভীমচক, লালগড়, ভীমপুর-সহ বিভিন্ন এলাকার মাওবাদীদের জীবনের মূল পথে ফিরিয়ে এনেছে । যেখানে এক সময় থাকতো বারুদের গন্ধ আজ সেখানে বাজছে সানাইয়ের বাঁশি ৷
আম্মা সোসাইটির নামে এখানে শিক্ষিত বেকার উদ্যোগী যুবক-যুবতীরা গণবিবাহের আসর বসিয়েছে ৷ মূলত যাদের অনুষ্ঠান করে এবং মেয়েকে সাজিয়ে গুছিয়ে বিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা নেই ৷ তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে এই যুবক-যুবতীরা । এলাকার অনগ্রসর মানুষ, আদিবাসী মাহাতো সঙ্গে মুসলিম পরিবারের মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন তারা । প্রায় 22 জন পাত্র-পাত্রীর চার হাত এক হল এই গণবিবাহের আসরে । তাদের চারহাত এক করে দেওয়ার জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিবৃন্দ, মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো, সন্দীপ সিংহ ও শাসকদলের নেতাকর্মী ৷ অপরদিকে বজরং লাল আগরলাল,সনাতন দাস-সহ বিশিষ্ট মানুষজন । রীতিমতো সকালবেলা থেকে হল গায়েহলুদ, স্নান করানো, নান্দীমুখ। সন্ধ্যেবেলায় মালা বদল, সিঁদুর দান এবং সেই সঙ্গে আংটি বদল হল ছাদনা তলায়।
এদিনের বিয়ের বন্ধনে বাঁধা পড়লেন পজন্মের পর পজন্ম ধরে মাও পরিবারের একটি পাত্রী ৷ তবে এখন তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে ৷ গণবিবাহের আসরে মুসলিম সম্প্রদায়ের পাত্রীদের নিকাহ কবুল করালেন মৌলবিরা । এর সঙ্গে ছিল ভুরিভোজের আয়োজন। এই গণ বিবাহে খাওয়াদাওয়া করল প্রায় 6000 জন ৷ দিলেন আশীর্বাদ নব দম্পতিকে । এই গণবিবাহ অনুষ্ঠিত হওয়ায় খুশি এলাকার মানুষ ৷ খুশি জঙ্গলমহলের মানুষজন ।
আম্মা সোসাইটির সদস্য প্রবীর মাইতি বলেন, "অসহায় দুঃস্থ পরিবারে অনুষ্ঠান করে বিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা নেই । তাই তাদের আবেদনেই সাড়া দিয়ে এই কাজ । আমাদের এই গণবিবাহে হিন্দু-মুসলিম মিলিয়ে মোট 11 জোড়া বিয়ে দেওয়া হচ্ছে । এলাকায় বারুদের গন্ধ মিটিয়ে সচেতনতার বার্তা দেওয়া হল গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্য ।" ত্রিবেণী যুব কল্যাণ অর্গানাইজেশন সদস্য সনাতন দাস বলেন, "কমবয়সি মেয়েরা বাড়ি থেকে বিয়ের নাম করে পাচার হয়ে যায় ৷ তা আটকাতেই বিয়ে দিয়ে শান্তিতে সংসার করার উদ্দেশ্যেই এই কার্যকলাপ ।"
আরও পড়ুন: জমাটি শীতে জমজমাট গণবিবাহের আসর তিলোত্তমায়