কেশপুর, 21 জুন: এক সময় বাম ছাত্র রাজনীতি করতেন ৷ কিন্তু পরিবর্তনের পরেই শাসকদলের নেতৃত্ব তাঁকে মারধর, জরিমানা এবং পা ভেঙে গ্রাম ছাড়া করে বলে অভিযোগ। এবার সেই গ্রামেই জবাব চাইতে প্রার্থী কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সমরেশ চক্রবর্তী । তাঁর দাবি, ভোটে জেতার পরই সমস্ত রাজনৈতিক দলের খেটে খাওয়া মানুষকে বিনামূল্যে আইনি পরিষেবা দেবেন তিনি । এটাই হবে তাঁর উপর হওয়া অত্যাচারের উপযুক্ত জবাব ।
জানা গিয়েছে, 2006 সালে এসএফআইয়ের ছাত্রনেতা রাজনৈতিক জীবনে হাতে খড়ি সমরেশের । দীর্ঘদিন বামেদের সঙ্গেই নিজের রাজনৈতিক জীবন গেঁথেছিলেন তিনি । ভাই ও মাকে নিয়ে কেশপুর এক নম্বর অঞ্চল সৈয়দবালী এলাকায় ছিল তাঁর বসবাস । কিন্তু 2011 রাজ্যে সরকারের পালা বদল ঘটে ৷ বামেরা ক্ষমতাচ্যুত হয় ৷ তৃণমূলের হাতে আসে রাজ্যের শাসনভার ৷ সেসময় সিপিএম করার অপরাধে শাসকদলের হুমকির মুখে পড়তে হয় সমরেশকে এবং তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ । এমনকী একাধিকবার তাঁকে জরিমানা করা হয় বলে দাবি সমরেশের ৷
আরও পড়ুন: মনোনয়ন প্রত্যাহারের হুমকি ! একরত্তি সন্তানকে নিয়ে আত্মগোপন বিজেপি প্রার্থী এক দম্পতির
পাশাপাশি তাঁকে মারধর করে তাঁর পা ভেঙে দেওয়া হয় এবং তাঁকে গ্রাম ছাড়া করা হয় বলেও তিনি জানান। সুস্থ হতে ও গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়ে সমরেশ ঠাঁই নিয়েছিলেন মেদিনীপুরে । সেখান থেকেই দাঁতে দাঁত চেপে দীর্ঘ লড়াই চলে তাঁর । যাঁকে কেশপুর ঢুকতে দেওয়া হয়নি সেই সমরেশ দীর্ঘ লড়াই করার পর বামকে বাঁচিয়ে রাখতে এলএলবি পড়েন ৷ এরই সঙ্গে তিনি এমএসসি (আইটি) ও এমসিএ করেন ।
এরই মধ্যে কেটে গিয়েছে বারোটা বছর । বামেদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কেশপুর এখন শাসকদলের হাতে । সেখানে সালিশি সভায় মারধর থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ গ্রামবাসীদের । পাশাপাশি চাষের জমি জমা কেড়ে নেওয়া ও বিষ দিয়ে দেওয়া হয় পুকুরে বলেও বারবার অভিযোগ উঠেছে । সেই পরিস্থিতির মধ্যে এবার 2023 সালে কেশপুর থেকে বামেদের প্রার্থী হলেন বছর 38-এর সমরেশ চক্রবর্তী । তাও আবার এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির ।
আরও পড়ুন: 'হুমকি না স্বেচ্ছায়!' সালানপুরে বামেদের মনোনয়ন তোলার হিড়িক ঘিরে প্রশ্ন
বর্তমানে সমরেশ আইনজীবী হিসাবে হাইকোর্টের পাশাপাশি মেদিনীপুর কোর্টে ওকালতি করেন ৷ বিনা ব্যয়ে সাধারণ মানুষকে আইনি পরিষেবা দিয়ে চলেছেন তিনি । তাই দল তাঁকেই এবার পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী করায় সমরেশ তাঁর জবাব চাইতে ফের হাজির হয়েছেন কেশপুরে । বাড়িতে মা ভাই এবং স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার । তবে এখন আর সমরেশকে সেইভাবে কেউ ভয় দেখায় না বলে তাঁর দাবি । এখন সমরেশ উলটে শাসকদলেরও নেতা কর্মীদের আইনি পরিষেবা দিচ্ছেন বলে জানান ।
এবার 3 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে সমরেশের প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের জ্যোৎস্না মিদ্দা ৷ বিজেপির হয়ে ভোটে লড়ছেন বিভাস রানা । তবে সমরেশ ইতিমধ্যে তাঁর সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রচার শুরু করে দিয়েছেন । একদিকে যখন বাম বিজেপি প্রার্থীদের ভয় দেখিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারের অভিযোগ উঠছে ৷ অপরদিকে সমরেশ তখন গর্জে উঠছেন বামেদের হয়ে । প্রচারে ভোটের জন্য আবেদন করছেন স্থানীয় মানুষদের কাছে । আবার কেশপুরে ফিরবে লালেরা,সেই আশায় বুক বাঁধছে সমরেশ ।
আরও পড়ুন: একজনের প্রচারে দিদি, আরেক জনের মুখে মোদি ! শালবনিতে প্রার্থী দুই জায়ের জোর টক্কর
এ দিন সমরেশ ইটিভি ভারতকে বলেন, "এক সময় যে ভয়ঙ্কর যুগ থেকে বেরিয়ে এসেছি তা বিভীষিকাময় । শাসকদলের মানুষ পা ভেঙে দিয়েছিল, সঙ্গে জুলুম জরিমানা করে । একবছর ছিলাম গ্রামের বাইরে । লড়াইটা খুবই কঠিন ছিল। বেশ কয়েকজন পার্টির নেতার সহযোগিতায় আজকে আবার নিজে দাঁড়াতে পেরেছি। এখনও পরিবার কেশপুরে রয়েছে। তবে এবারও লড়াই হবে টক্করে টক্করে এবং জিতে এসে এলাকায় গরিব মানুষদের বিনামূল্যে আইনি পরিষেবা দেব ।"