নারায়ণগড়, 23 জুন : একপ্রকার দিন আনা দিন খাওয়া 42টি আদিবাসী পরিবার প্রায় একঘরে রয়েছেন (Government facilities are not being provided to 42 families) ৷ অভিযোগ, তাঁরা তৃণমূল করেন না তাই সরকারি সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি তাঁদের পানীয় জল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ যদিও এই ঘটনার খবর করতে গিয়েই প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে এসেছেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন ।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড় ব্লকের মকরামপুর অঞ্চলের তালাচক ও ফুলগেড়িয়া এই দুটি গ্রামের প্রায় 40 থেকে 42টি বাড়ি সমস্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন । অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে । মূলত, তালাচক গ্রামের 27টি পরিবার নিয়ে একটি আদিবাসী পাড়া । আর সেই পাড়ার 27টি পরিবারকেই বয়কট করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন দিক থেকে । এক প্রকার দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর অভিযোগ, তাঁরা স্থানীয় তৃণমূল নেতা, তথা অঞ্চল সভাপতি লক্ষ্মী সিটের গোষ্ঠীর লোক নন ।
আর সেই কারণে প্রায় দেড় থেকে দুই বছর ধরে চলছে তাঁদের একঘরে করে রাখার ব্যবস্থা । এই পরিবারগুলো জানান, গত প্রায় দেড় থেকে দু'বছর ধরেই ওই গ্রামের কোনও মানুষ কোনও সরকারি সাহায্য পাননি । এমনকী একটা এসটি সার্টিফিকেট নিতে গেলেও ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের । দেওয়া হয় না পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জল অথচ গ্রামেই রয়েছে সাবমার্শিবল । এসব বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানিয়েও কোনও ফল হয়নি ৷ তাই শেষ পর্যন্ত তাঁরা সংবাদ মাধ্যমের দ্বারস্থ হয়েছেন ৷
আরও পড়ুন : BJP supporter harassment : বিজেপি করার অপরাধে একঘরে দুই পরিবার
একই অভিযোগ পাশের এলাকা ফুলগেড়িয়ায় । সেখানেও প্রায় 14 থেকে 15টি বাড়িকে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে । এমনকী গ্রামে উচ্চমাধ্যমিক পাস এক ছাত্রীকে কন্যাশ্রী দেওয়া হয়নি । স্কলারশিপের টাকার জন্য ফর্মে পঞ্চায়েতের যে স্বাক্ষর লাগে সেইটুকুও করে দেওয়া হচ্ছে না পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে । সরকারি কোনও সুযোগ-সুবিধা নিতে গেলে এই পঞ্চায়েত থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় । বলে দেওয়া হয় স্থানীয় তৃণমূল নেতা অর্থাৎ স্থানীয় বুথ সভাপতির লিখিত অনুমতি লাগবে । স্থানীয় বুথ সভাপতি পরিষ্কার জানিয়ে দেন অঞ্চল সভাপতির নির্দেশ আছে তাই ওই সমস্ত পরিবার কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবেন না ৷
এই ঘটনার খবর করতে গ্রামে ঢুকতেই খবর পৌঁছে যায় স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের কাছে । খবর পেয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা এলাকায় চলে আসেন । তারপরই ব্লক সভাপতি ও নারায়ণগড় পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি-সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে একরকম বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাঁদের । ব্লক সভাপতি ও পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতিকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত পরিবারের সদস্যরা । ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ জানান, বয়কটের অভিযোগ কতটা সত্য, সেটা জানতে তারা গ্রামে এসেছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে ।
আরও পড়ুন : Women torture : মোড়লের নিদান, 2 বছর একঘরে আদিবাসী পরিবার
পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি গণেশ মাইতি সরকারি তথ্য দেখিয়ে তিনি জানান, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা । আর যার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ তৃণমূলের সেই অঞ্চল সভাপতি লক্ষ্মী সিটের বক্তব্য, মিথ্যা অভিযোগ করছেন ওই সমস্ত মানুষজন ।
ইতিমধ্যে এই খবর চাউর হতেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন । তারা সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে । বারে বারে পুলিশ টহল দিচ্ছে গ্রামে ৷