মেদিনীপুর, 1 এপ্রিল: দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে এসে রাঁধুনিদের বেতন নিয়ে সমস্যার কথা শুনলেনই না খোদ জেলাশাসক । বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থেকে বাল্যবিবাহর মত দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে নানা রকমের অভিযোগ নেওয়া হচ্ছিল ৷ সেই দুয়ারে সরকার ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন জেলাশাসক ৷ কিন্তু রাঁধুনিরা তাঁদের অভাব অভিযোগ নিয়ে গেলে তিনি তাতে গুরুত্ব আরোপ করলেন না ৷ তিনি বললেন, "সময় নেই পরে কথা হবে ।" এমনকী জেলাশাসকের কাছে অভিয়োগ করায় রাঁধুনিদের রীতিমতো ধমক দিলেন পৌরসভার চেয়ারম্যান । তিনি বললেন, "তাদের জায়গায় অন্য সহায়ক দল কাজ করবে আগামিদিনে ।"
প্রসঙ্গত, এদিন গোটা রাজ্যের সঙ্গে মেদিনীপুর শহরের অলিগঞ্জ স্কুলে বসেছিল দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প । প্রায় কুড়ি দিন ধরে এই ক্যাম্প চলার কথা রয়েছে । আর এই দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে অভিযোগ শোনা হচ্ছে এবং বিভিন্ন প্রকল্পের ফর্ম ফিলাপ করা হচ্ছে । বিশেষ করে বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, স্বাস্থ্য সাথী-সহ সমস্ত রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সমস্যা সমাধানে চলছে এই ক্যাম্প । এরই সঙ্গে বাক্স করা হয়েছে ৷ কেউ চাইলে সেই বাক্সতে তার অভিযোগপত্র জমা দিতে পারে ।
আর সেই দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প দেখতে এদিন মেদিনীপুর শহরের অলিগঞ্জ স্কুলে এসেছিলেন জেলাশাসক খুরশেদ আলি কাদেরী ও পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার । তারা যখন সমস্ত ডেস্কগুলি পরিদর্শন করে ফেরত যাচ্ছিলেন সেই সময় স্কুলের স্বসহায়ক দলের রাঁধুনিরা জেলাশাসককে হাতের কাছে পেয়ে তাদের অভিযোগ জানাতে চান । তাঁরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে দেড় হাজার টাকায় তাঁরা কাজ করে আসছে এবং এই পরিষেবা দিতে দিতে আজ তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন । কারণ ক্রমবর্ধমান জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী ৷ এরই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে গ্যাসের দাম । যে গ্যাসের দাম একসময় 406 টাকা ছিল ৷ সেই গ্যাস এখন 1129 টাকা । এই অবস্থায় তাদের পক্ষে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে ।
বহুবার বিভিন্ন জায়গায় লিখিত আবেদনে অভিযোগ জানিয়েও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় দুয়ারে ক্যাম্পে জেলাশাসকের কাছে তারা অভিযোগ করে বসেন । সঙ্গে তারা জেলাশাসকের সঙ্গে দু'মিনিট সময় চেয়ে নেন তাদের অভিযোগ শোনানোর জন্য । জেলাশাসক জানান, তিনি আরও অন্যান্য স্কুল পরিদর্শন করবেন । তাই তিনি এখন অভিযোগ শুনতে পারবেন না । এই বলে তিনি অভিযোগ না শুনে ৷ সমস্যার সমাধান না করে বেরিয়ে যান সেখান থেকে । এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে সংশ্লিষ্ট স্কুলে ।
এরপরই রাঁধুনিদের ধমক দেন মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান । তাঁকে সাংবাদিকদের সামনেই রাঁধুনিদের বলতে শোনা গিয়েছে, এরপর আপনারা এই কাজে করতে পারবেন না । আগামিদিনে আপনাদের জায়গায় অন্য স্বসহায়ক দলের মহিলাদের পাঠানো হবে । কারণ হিসেবে তিনি অদ্ভুত যুক্তি দেখিয়েছেন । তিনি বলেছেন, "আপনাদের বেতন অত্যন্ত কম এটা জানি ৷ কিন্তু আপনারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পান, সেই সঙ্গে বার্ধক্য বিধবা ভাতা ও বিধবা পান । আপনারা এত সুন্দর দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প এসে নিজেদের অভিযোগ জানাতে গিয়ে এটাকে কলুষিত করে ফেলেছেন ৷ এটা আপনাদের করা উচিত হয়নি । আপনারা যদি মনে করতেন তাহলে আপনারা অভিযোগ জানানোর জন্য জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে পারতেন ।"
আর চেয়ারম্যানের ধমকানিতে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন রাঁধুনিরা। মিনা দাস, তানিয়া মাইতিরা বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি ৷ অথচ টাকা বাড়ছে না । বহু জায়গায় আবেদন নিবেদন করা হয়েছে তারপরও টনক নড়েনি । আজ জেলাশাসককে হাতের কাছে পেয়ে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলাম, কিন্তু ওনার সময় নেই আমাদের অভিযোগ শোনার ।" যদিও এদিন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুজাতা গোস্বামী জানান, অবশ্যই তাঁদের অভিযোগ রয়েছে এবং অভিযোগগুলি সত্যি । তাঁদের চলে না ওই টাকায় । তবে ঘটনার সময় তিনি ছিলেন না বলে জানান । রাঁধুনিরা অন্যভাবে অভিযোগ জানালে হয়ত ভালো হত বলে তাঁর মত ।
আরও পড়ুন: আজ থেকে চালু দুয়ারে সরকার কর্মসূচি, মিলবে বিধবা ভাতা-সহ চারটি নতুন পরিষেবা