মেদিনীপুর, 30 মার্চ : ভোট বড় বালাই ৷ প্রচার, জনসংযোগ সবেতেই বাড়তি নজর ৷ হাজারো রকমের প্রতিশ্রুতির বন্যা ৷ আর ভোট মিটতেই... আগেও এমন ঝুড়ি ঝুড়ি উদাহরণ রয়েছে ৷ প্রথম দফার ভোট মিটতেই তেমনই একটি ছবি আরও একবার সামনে এল ৷
মেদিনীপুর ৷ তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় এই কেন্দ্রের দাবিদার ছিলেন একাধিক মুখ ৷ কাকে ছেড়ে কাকে করবেন, তা ঠিক করতে যথেষ্টই নাজেহাল হতে হয়েছিল ৷ আর ইতিহাস বলছে, যখনই এরকম কোনও সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন মমতা, তখনই এগিয়ে দেওয়া হয়েছে কোনও তারকাকে ৷ এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি ৷ তৃণমূলের মঞ্চে দীর্ঘদিন ধরে দেখা গেলেও এতদিন প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে ছিলেন না জুন ৷ হঠাৎ করে ভোটের আগে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিলেন মমতা শিবিরে ৷ মেদিনীপুরের গোষ্ঠীকোন্দল এড়াতে মমতা প্রার্থী করলেন জুনকে ৷
মেদিনীপুরের মাটিতে পা রেখেই আশ্বাসে ভরিয়ে দিয়েছিলেন মমতার তারকা প্রার্থী ৷ মেদিনীপুরের মাটি জুনের জন্য একেবারে নতুন ৷ আনকোড়া ৷ এসেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বানিয়েছিলেন জেলার সাংবাদিকদের নিয়ে ৷ জেলার ও নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল নেতারাও ছিলেন গ্রুপে ৷ কোথায় কখন প্রচারে যাচ্ছেন, সব আপডেট দিতেন গ্রুপে ৷ আবদার মিটিয়েছেন সাংবাদিকদের ৷ একের পর এক একান্ত সাক্ষাৎকারও হয়েছে এই গ্রুপের থেকেই ৷ কাজের তাগিদ ছিল সাংবাদিকদের ৷ কিন্তু নিজের প্রচারের কাজেও যে জুন সাংবাদিকদের ভরপুর ব্যবহার করেছেন সেটাও সত্য ৷ যদিও একজন প্রার্থীর ক্ষেত্রে এটাই স্বাভাবিক ৷
তবে সাংবাদিকদের এই গ্রুপে নাকি একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জোড়াফুলের প্রার্থী ৷ গ্রুপের মাধ্যমে তিনি বলেছিলেন, "আমি আপনাদের ঘরের মেয়ে ৷ আপনাদের সঙ্গে থাকার জন্যই আমি এসেছি মেদিনীপুরে । প্রাক্তন বিধায়ক অসম্পূর্ণ কাজ করার জন্য মেদিনীপুরের প্রার্থী হয়েছি ।" নিজের খবর করার জন্যও বার বার অনুরোধ করতেন সাংবাদিকদের ৷
ভোটের দিনেও সব ঠিকঠাক ৷ কিন্তু ভোট পার হতে না হতেই পুরো অন্য চরিত্র জুন মাল্যর ৷ রবিবার সকালে গ্রুপে একটি ম্যাসেজ লেখেন ৷ জানান, "গ্রুপের যে উদ্দেশ্য ছিল, তা হয়ে গিয়েছে ৷ গ্রুপের উদ্দেশ্য সফল হওয়ায় গ্রুপ মুছে ফেলতে বাধ্য হলাম । আমি আমার নেতা নির্মাল্য চক্রবর্তীকে বলব এই গ্রুপের থেকে সবাইকে মুছে ফেলার জন্য ৷ সেই সঙ্গে এই গ্রুপটা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ।" এর পরেই গ্রুপ থেকে কারণ একে একে সমস্ত নেতা ও সাংবাদিকদের সরিয়ে দেওয়া হয় । আর তাতেই ছড়ায় বিতর্ক ।
আরও পড়ুন : মেদিনীপুরে জনতার মাঝে সাবলীল প্রচার আনকোরা জুনের
বিগত দিনগুলিতে বিরোধীরা বারবার বলেছিলেন, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের এখানে প্রার্থী করার ফল ভুগতে হয়েছে মেদিনীপুরকে । এর আগেও এলাকার সাংসদ হয়েছিলেন অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায় । তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি প্রায় সময়ই কলকাতায় বসে থাকতেন ৷ মেদিনীপুরের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধায় তিনি কোনওরকম পাত্তা দিতেন না । প্রয়োজনে তাঁকে পাওয়া যেত না । সেই ঘটনার ক্ষোভ ছড়িয়েছিল মেদিনীপুরবাসী সহ জেলার সাংবাদিক মহলে ।
কিন্তু পরবর্তীকালে জুন মাল্য বিধানসভার প্রার্থী হওয়ার পরে সেই ক্ষোভ প্রশমিত করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথাবার্তা বলে সাংবাদিকদের মন জয় করেছিলেন । কিন্তু ভোট শেষ হতেই তিনি গ্রুপ থেকে সবাইকে মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত ঘিরে বিতর্কে জমেছে মেদিনীপুর শহর ও জেলায় । এই বিষয়ে বিজেপি মেদিনীপুরের প্রার্থী সমিতকুমার দাস বলেন, "আমরা বিগত দিনে সন্ধ্যা রায় সাংসদ হওয়ার পর থেকে দেখেছি মেদিনীপুরবাসীর প্রতি কোনও টান ছিল না । ভোটের আগে বিভিন্ন ধরনের প্রচার করতেন এবং মেদিনীপুরবাসীকে জানাতেন, তিনি সবসময় পাশে আছেন ৷ কিন্তু তারপর ভোট ফুরোতেই মেদিনীপুর ছেড়েছিলেন সন্ধ্যা রায় । তিনি সরাসরি যোগাযোগ রাখতেন না । সেই অভিজ্ঞতা থেকে যখন অভিনেত্রী জুন প্রার্থী হন, তখনও আমরা বলেছিলাম যে এই ঘটনা আবার ঘটবে ৷ আর তাই হল ।"
আরও পড়ুন : দিদি ছাড়া অন্য কাউকে ভোট দেবেন না : জুন মালিয়া
যদিও এ বিষয়ে তীব্র কটাক্ষের সুর বিজেপি সহ-সভাপতির মুখে । বিজেপি সহ সভাপতি অরূপ দাস বলেন, "বিগত দিনের থেকে আমরা সন্ধ্যা রায়কে দেখে ভুক্তভোগী । যদিও সাংসদ ভোট শেষ হওয়ার পরও বার দুয়েক এসেছিলেন মেদিনীপুরে ৷ কিন্তু জুন মাল্য আগেভাগে বুঝে ফেলেছেন মেদিনীপুরে তিনি হারতে চলেছেন ৷ তাই ভোট ফুরোতেই স্বার্থ শেষ হয়েছে এবং তিনি পগারপার দিয়েছেন কলকাতার উদ্দেশ্যে ।"
এ বিষয়ে তৃণমূলের কোনও মন্তব্য না পাওয়া গেলেও তৃণমূলের শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডব বলেন, "এই গ্রুপ নিয়ে আমার কোনও মতামত নেই ৷ এই গ্রুপটা আমি খুলেনি । যিনি বা যাঁরা এই গ্রুপে ছিলেন তাঁরা বলতে পারবেন এই বিষয়ের সার্থকতা ।" যদিও তিনি বলেন যিনি এই গ্রুপ যিনি খুলেছেন তিনি মনে করেছেন ভোটের প্রচারের পর এই গ্রুপের উদ্দেশ্য শেষ হয়েছে ৷ তাই তিনি গ্রুপ বন্ধ করে দিয়েছেন । যে কারণে গ্রুপটা খোলা হয়েছিল সেই উদ্দেশ্য সাধন হওয়ার জন্য গ্রুপ বন্ধ করে দিয়েছেন ৷ এটাই হওয়া উচিত ।"