দুর্গাপুর, 2 এপ্রিল: দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে নিহত বিজেপি নেতা রাজু ঝা ৷ শনিবার ভরসন্ধেয় শক্তিগড়ে শ্যুটআউটে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বাম আমলের কয়লা মাফিয়া ৷ গেরুয়া শিবিরের নেতা হওয়ায় স্বভাবতই রাজু ঝা-র মৃত্যু ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা ৷
কে এই রাজেশ ওরফে রাজু ঝাঁ ?
এক সময় রানিগঞ্জ এলাকায় সাইকেল চুরিতে নাম জড়িয়েছিল রাজু ঝার ৷ তখন বাম জমানা ৷ ওই এলাকায় বেআইনি কয়লার রমরমা কারবার ৷ কয়লা মাফিয়াদের সঙ্গে হাত মেলায় রাজেশ ৷ এক সামান্য সাইকেল চোর থেকে বাম শাসনকালে কুখ্যাত কয়লা মাফিয়া হয়ে ওঠে রাজু ৷ বেআইনি কয়লা কারবারের সিন্ডিকেট চালু হয় তার সময়েই ৷ ফুলেফেঁপে ওঠে কুখ্যাত কয়লা মাফিয়া রাজেশ ওরফে রাজু ঝা-র 'সাম্রাজ্য' ৷
আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদে একের পর এক জমির মালিক হয়ে ওঠে রাজু ঝা ৷ সর্বপ্রথম আসানসোল ও দুর্গাপুর থেকে কলকাতার ধর্মতলা ও করুণাময়ী রুটে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ভলভো বাস পরিষেবা চালু হয় রাজু ঝা-র হাত ধরে ৷ এরপর হোটেল ব্যবসায় বিনিয়োগ করে সে ৷ কিন্তু রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল হতেই রাজুর বেআইনি কয়লা ব্যবসায় লাগাম পড়ে ৷ আসানসোলের জামুড়িয়া, বারাবনি এলাকায় রাজুর বিশাল প্রতিপত্তি ছিল ৷ তার সঙ্গী শঙ্খ বিশ্বাসও দাপুটে পুলিশ আধিকারিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন এলাকায় ৷ এমনকী কানাঘুষো শোনা যায়, তিনি 'বাম-ঘনিষ্ঠ' ছিলেন ৷
বাম শাসনের অবসান আর তৃণমূল সরকারের সূচনার সঙ্গে সঙ্গে রাজু ঝা ও তাঁর সঙ্গী পুলিশ অফিসারের জীবনেও বদল আসে ৷ বেআইনি কয়লা কারবারে লাগাম পড়ে ৷ তৃণমূল সরকারের আমলে রাজু ঝা'কে বেশ কয়েকটি পুরনো মামলায় গ্রেফতার করা হয় ৷ বেশ কয়েকবার সংশোধনাগারে থাকতে হয় রাজেশ ওরফে রাজুকে ৷ কয়লা কারবারি থেকে সরে আসে রাজেশ ৷ তার জায়গায় বে-আইনি কয়লা কারবারের দখল নেয় অনুপ মাঝি ওরফে লালা ৷
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যজুড়ে দলবদলের হিড়িক পড়েছিল ৷ সেই সময় সুযোগ বুঝে রাজু ঝা, শঙ্খ বিশ্বাস বিজেপিতে যোগ দেয় ৷ দুর্গাপুরের পলাশডিহা ময়দানে বিজেপির যোগদান মেলায় তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাত ধরে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখায় রাজু ও শঙ্খ ৷ তাদের কয়েকজন অনুগামীও পদ্ম শিবিরে যোগ দেয় ৷ তখন ওই মেলায় উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং ৷ 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফেরে তৃণমূল কংগ্রেস ৷
আরও পড়ুন: কে এই কয়লা মাফিয়া লালা ?
এরপর থেকে রাজনৈতিক কার্যকলাপে রাজু ঝা'র খুব একটা দেখা মেলেনি । তবে বিজেপির হয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রচারে যেত রাজু ও তার ঘনিষ্ঠ শঙ্খ । একদা 'বাম নেতাদের ঘনিষ্ঠ' শঙ্খ বিশ্বাস, রাজু ঝা জামুড়িয়া, বারাবনী এলাকাগুলিতে পদ্ম শিবিরের হয়ে ব্যাপক প্রচার শুরু করে ৷ দুর্গাপুরের মেনগেট এলাকায় বিজেপির একটি অনুষ্ঠানে 'কুখ্যাত কয়লা মাফিয়া' রাজু ঝা'র সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা যায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা অরবিন্দ মেনন, নরোত্তম মিশ্রদের ৷ সেই সময় আরও একটি ছবি সামনে এসেছিল ৷ বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিং আহলুওয়ালিয়াকে মেনগেটের সেই মঞ্চে রাজু উত্তরীয় পরাতে চাইছিলেন ৷ কিন্তু পোড় খাওয়া সাংসদ তার হাত থেকে উত্তরীয় পরেননি ৷ সেই ভিডিয়ো এখনও দেখতে পাওয়া যায় ৷
শনিবার কলকাতার উদ্দেশে যাওয়ার সময় শক্তিগড়ে দাঁড়িয়ে গাড়ির ভিতরে খাওয়াদাওয়া করছিল রাজু ঝা ৷ সঙ্গে ছিল অণ্ডালের বাসিন্দা তার ছায়াসঙ্গী ব্রতীন বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেই সময় তাদের গাড়ির পাশে এসে থামে আরেকটি গাড়ি ৷ গাড়িটির ভিতর থেকে দুষ্কৃতীরা প্রায় সাত রাউন্ড গুলি ছোড়ে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ৷ রাজু ঝা গুলিবিদ্ধ হয়ে গাড়িতেই লুটিয়ে পড়ে ৷ ব্রতীন বন্দ্যোপাধ্যায় পালানোর চেষ্টা করলে তার শরীরেও গুলি লাগে ৷ দু'জনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা রাজু ঝা'কে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় ৷ ব্রতীন বন্দ্যোপাধ্যায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন ৷ রাজনৈতিক ওয়াকিবহালদের মতে, বাম আমলের একের পর এক কুখ্যাত কয়লা মাফিয়ার জীবনের চরম পরিণতি ঘটেছে এভাবেই ৷ এর আগে শেখ সেলিম, শেখ আমিনদেরও এভাবে গুলিবিদ্ধ হয়ে মরতে হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ৷ 1 এপ্রিল একসময়ের বেআইনি কয়লা কারবারের বাদশা রাজেশ ওরফে রাজু ঝা'রও একই পরিণতি হল ৷
আরও পড়ুন: দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত 'কয়লা মাফিয়া' তথা বিজেপি নেতা রাজু ঝাঁ