আসানসোল, 23 নভেম্বর: উত্তরকাশীর টানেলে আটকে পড়া 41 জন শ্রমিককে উদ্ধার করতে এখন মরণবাচন লড়াই চলছে । প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পাওয়া খবরে আটকে পড়া শ্রমিকদের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছেন উদ্ধারকারীরা ৷ শ্রমিকদের উদ্ধার করাটা এখন সময়ের অপেক্ষা, এই ভেবেই আশায় বুক বাঁধছে গোটা দেশবাসী । আর সেই সময় এমনই আরও এক রোমহর্ষক মহাবীর খনিতে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারকার্যের অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন আসানসোলের বেসরকারি মাটিতে বোরহোল করার সংস্থার কর্ণধার । একই রকমের ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার আসানসোলের রানিগঞ্জের সেই মহাবীর খনিতে আটকে পড়া এক শ্রমিকও তুলে ধরলেন তাঁর ভয়াবহ স্মৃতি ।
1989 সালের 13 নভেম্বর আসানসোলের মহাবীর খনিতে ঘটেছিল ভয়াবহ দুর্ঘটনা । পাশের এক পরিত্যক্ত খনির জলে ঢুকে গিয়েছিল মহাবীর খনিতে এবং সেই খনির মধ্যে আটকে পড়েছিলেন 65 জন শ্রমিক । প্রায় তিন দিন পর তাঁদেরকে মাটির উপর থেকে বোরহোল করে ক্যাপসুল ঢুকিয়ে রোমহর্ষকভাবে উদ্ধার করা হয়েছিল । উত্তরকাশীতেও টানেলে ধসের কারণে একই রকম ভাবে আটকে পড়েছেন ৪১ জন শ্রমিক । বর্তমানে ওই সুড়ঙ্গ পথের গায়ে গর্ত করে পাইপ ঢুকিয়ে তাঁদের উদ্ধারকার্যের প্রক্রিয়া চলছে ।
মহাবীর খনিতে শ্রমিকদের উদ্ধার করতে বোরহোল করেছিল বেসরকারি সংস্থা আসানসোলের মাইনিং অ্যাসোসিয়েট কোম্পানি । সেই কোম্পানির কর্ণধার সঞ্জয় বনশালকে ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করা হয়েছে এই উদ্ধারকার্যের জন্য । তাঁকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে । যদিও সঞ্জয় বনশাল জানিয়েছেন, তাঁরা উপর থেকে গর্ত করে শ্রমিকদের উদ্ধার করতে পারবেন । সে ক্ষেত্রে পাহাড়ের ওই দুর্গম জায়গায় তাঁদেরকে নিয়ে যেতে হবে এবং সেই মেশিন লাগানোর মতো জায়গা প্রস্তুত করতে হবে । এরই মাঝে, সুড়ঙ্গের গা বরাবর পাইপ ঢুকিয়ে সেখান থেকে শ্রমিকদের উদ্ধার করার একটি প্রক্রিয়া চলছে ।
সঞ্জয় বনশাল নিজের অভিজ্ঞতায় জানাচ্ছেন, যেভাবে কাজ চলছে, তাতে আশা করা যায় শ্রমিকদের উদ্ধার করা যাবে । কিন্তু ওই সুরঙ্গের স্থানের মাটি খুব দুর্বল । যার ফলে ধস নেমেছে । খুব সাবধানে এই গর্ত চালিয়ে যেতে হবে । যাতে পুনরায় মাটি ধসে গর্তকে না বুজিয়ে দেয় । তবে আশার কথা, এই গর্তের সঙ্গে পাইপও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । যার ফলে শ্রমিকদের বের করে নিয়ে আসা সুবিধা হবে ।
অন্যদিকে, মহাবীর খনিতে যে 65 জন শ্রমিক আটকে পড়েছিলেন, তার মধ্যে এখনও বেঁচে আছেন জগদীশ কঁহার । তিনি বিহারে থাকেন । আসানসোলেও তাঁর একটি বাড়ি আছে । আসানসোলের বাড়িতে বসে তিনি জানালেন, "আমরা খনির মধ্যে আটকে ছিলাম । কিন্তু যখন মানুষের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়, তখনই আমাদের সাহসও বাড়তে শুরু করে ৷ বাঁচার আশা ফিরে পাই ৷ ঠিক উত্তরকাশীতেও যাঁরা আটকে আছেন তাঁদের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে । সুতরাং যোগাযোগ যখন হয়েছে, তখন তাঁরা নিশ্চয়ই উদ্ধার হবেন । শুনেছি, তাঁদের জন্য খাবার পৌঁছনো গিয়েছে, জল পৌঁছনো গিয়েছে । একইভাবে আমাদেরও খাবার, জল পাঠানো হয়েছিল । তাই এই মুহূর্তে ধৈর্য ধরে বসে থাকতে হবে এবং সাহস সঞ্চয় করতে হবে । নিশ্চয়ই তাঁদেরকে উদ্ধার করা হবে । আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, যেন খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারেন । যে ভাবে আমরা ফিরে আসতে পেরেছিলাম ।"
আরও পড়ুন: