আসানসোল, 4 নভেম্বর : ঘড়িতে রাত ১২ টা। আসানসোলের মহিশীলা কলোনির পিয়ালবেড়া শ্মশানে একটি প্রকাণ্ড বটগাছে এক পুরোহিত আকুতি ভরে ডেকে চলেছেন,"আয়,আয়,আয় শিবানী...."। আরও কত নাম। হ্যাঁ ভূত চতুর্দশীতে, ভূতেদের ডাকছেন তিনি। বছরে এই একটি দিন ভূতেরা গাছ থেকে নেমে আসে বলে দাবি ওই পুরোহিতের। ভূতেদের উদ্দেশ্যে মদ, মাংস-সহ বিভিন্ন উপাচারে ভোগও নিবেদন করা হয়। প্রায় ৭০ বছর ধরে ভূত চতুর্দশীতে এই প্রথা চলে আসছে আসানসোলের মহিশীলা কলোনীতে।
একদা ছিল গা ছমছম করা শ্মশান। মরা পোড়ানো হত এখানে। এখন সেসব নেই। চারপাশে কংক্রিটের জঙ্গলে ঢেকেছে। শ্মশানে তৈরি হয়ে গিয়েছে জনপদ। কিন্তু সেই প্রাচীন গাছটি রয়ে গিয়েছে। কথিত আছে, প্রায় সত্তর বছর আগে মহিশীলার পিয়ালবেড়া শ্মশানে এসে সাধনা করতেন বামাক্ষ্যাপার অন্যতম প্রধান শিষ্য বনমালী ভট্টাচার্য। তাঁকে জমি দান করেছিলেন আসানসোলের রায় পরিবারের সদস্যরা। শ্মশানের পাশেই বাড়ি বানিয়ে পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। সেখানেই কালীপুজো শুরু করেন তিনি। তবে সেই পুজো হয় ভূত চতুর্দশীতে। এখনও সেই রীতি চলছে ৷
আরও পড়ুন : Kali Pujo 2021 : কাঁথির ক্লাব ইন্দিরার কালীপুজোয় এবছর দেখা মিলবে রাজস্থানের রাজপ্রাসাদের
বর্তমানে সাধক বনমালীর ছেলে বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য এই পুজো করেন। বিশ্বনাথবাবু বলেন, "সেই সময় ভূতেদের উপদ্রব ছিল এলাকায়। তাই শ্মশানের একটি বটগাছে সাধনা বলে ভূতদের বেঁধে দিয়েছিলেন বাবা। শুধুমাত্র ভূত চতুর্দশীর দিন ভূতেদের ছাড়া হয় আনন্দ দানের জন্য। তাদের উদ্দেশ্যে ভোগ নিবেদন করা হয়। মদ, মাংস-সহ বিভিন্ন উপকরণ নিবেদন করা হয় ভূতেদের উদ্দেশ্যে।" ভট্টাচার্য পরিবারের কালী মন্দির এখন সুবিশাল। চারপাশে প্রচুর বাড়ি, ঘর, বহুতল আবাসন। শহরের ছোঁয়া এখন সেই পিয়ালবেড়া শ্মশানেও। কালীপুজোয় বহু জন সমাগম হয় ভট্টাচার্য পরিবারের এই কালী মন্দিরে। তবে ওই বটগাছের কাছে রাতের বেলায় আজও কেউ পা মাড়ায় না। শুধু বর্তমান পুরোহিত বিশ্বনাথবাবু একা ভূতেদের ডাকেন। সেই ডাকে এত আকুতি, যে শিহরণ জাগায়।