দুর্গাপুর , 22 এপ্রিল : গ্রামে ঢুকলেই মন ভরে যাবে । কোরোনা আতঙ্ক ভুলে মেতে যাবেন ক্ষণিকের জন্য । খড়, টিনের চালা , মাটির দেওয়াল বা কংক্রিটের মেঝে সবটুকু জুড়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য । এক পেপার বিক্রেতার তুলির টানে টিয়া পাখি থেকে ময়ূর গ্রামের পুকুর থেকে মন্দির ছবি ফুটে উঠেছে বাড়ির দেওয়ালে দেওয়ালে এমনকী মেঝেতেও । লকডাউন চলাকালীন বুদবুদ থানা এলাকার মানকর গ্রামের মল্লিকপাড়ার মানুষরা মেতে উঠেছেন মেঘনাথ সাঁতরার এই শিল্পকর্মে ।
ভোরবেলা থেকে সংবাদপত্র নিয়ে বাড়ির দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়ান । সাইকেলে চড়ে যান মানুষের বাড়িতে বাড়িতে । সাইকেলের সামনেও তাঁর নিজের হাতের আঁকা ছবি । কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে মানুষকে সচেতনতার বার্তা আঁকা । সংসার চালাতে গিয়ে বাড়ি বাড়ি পেপার বিক্রি করা আজ পেশা হয়ে দাঁড়ালেও জীবনের প্রথম থেকেই বড় সাধ ছিল চিত্রকর হওয়ার । মাত্র দু'বছর ছবি আঁকা শিখেছিলেন । কিন্তু তারপর নিজে নিজেই তাঁর ছবি আঁকতে শেখা । রং- তুলি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে মানকর মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা মেঘনাথ সাঁতরা আজ গ্রামীণ এক শিল্পী ।
চারিদিকে কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্ক । গৃহবন্দী মানুষ । সবথেকে বিপাকে পড়েছে কচিকাঁচারা । স্কুলের বন্ধুদের সাথে গল্পগুজব , হৈ হুল্লোড় নেই । খেলার মাঠে খেলাধুলাও বন্ধ । একঘেঁয়ে হয়ে ওঠা কচিকাঁচাদের কথা মাথায় রেখেই মেঘনাথবাবু রং আর তুলি নিয়ে গ্রামের মাটির কিংবা কংক্রিটের দেওয়ালগুলিতে ছবি এঁকেছেন । প্রাকৃতিক দৃশ্য থেকে শুরু করে কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে সতর্কবার্তা সবই ফুটে উঠেছে শিল্পীর তুলির টানে । ছবিতে মজেছেন গ্রামের আট থেকে আশি সবাই । নিজের বাড়ির বাইরের দেওয়াল থেকে বাড়ির ভিতরের দেওয়াল এমন কোনও দেওয়াল নেই যেখানে ছবি আঁকেননি । এমনকী মেঝেতেও তিনি এঁকেছেন হরেক রকমের ছবি । বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি দেওয়ালে দেওয়ালে । এতেই খুশি তিনি ।
খ্যাতিমান শিল্পী তিনি নন । কিন্তু গ্রামের মানুষদের কাছে তিনি রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন । তাঁর এই শিল্পকর্মের কারণেই ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের কাছে মেঘনাথবাবুই হয়ে উঠেছেন আদর্শ এক চিত্রকর । আজ তিনি বললেন , “আমি তো খুব ভালো ছবি আঁকতে জানি না । তবুও মনে হল যদি আমার আঁকা ছবি দেখে অন্ততপক্ষে এই লকডাউনে গৃহবন্দী মানুষ একটু আনন্দ পান তাহলেই আমার সার্থকতা ।”