জামুড়িয়া, 29 নভেম্বর : কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, "একই বৃন্তে দু'টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান" । কবির সেই লেখা অক্ষরে অক্ষরে যেন পালন করলেন তাঁর গ্রামের মানুষজন । কবির জন্মভিটা চুরুলিয়ায় এক হিন্দু ব্যক্তির দেহ সৎকারে পাশে দাঁড়ালেন মুসলিম পরিবারের লোকজন । হিন্দু ধর্মের রীতি-নীতি মেনে সৎকারের কাজ সম্পন্ন করলেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষজন ।
জামুড়িয়া থানার অন্তর্গত চুরুলিয়া গ্রাম । যে গ্রামের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস । বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থান চুরুলিয়া । কবি একসময় তাঁর কবিতার মাধ্যমে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের কথা বলেছিলেন । লিখেছিলেন "মোরা একই বৃন্তে দু'টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান, মুসলিম তাঁর নয়নমণি হিন্দু তাহার প্রাণ" । কবির পরম্পরা যেন বয়ে চলেছেন তাঁর গ্রামের মানুষ ।
চুরুলিয়ায় 230টি পরিবারের মধ্যে হিন্দু পরিবার মাত্র একটি । সেই হিন্দু পরিবারের বৃদ্ধ সদস্য রামধনু রজক (80)-এর মৃত্যু হয় । বৃদ্ধের দুই সন্তানের মধ্যে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন । অন্যজন কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন । একাকী বৃদ্ধ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁর চিকিৎসা থেকে সেবা-শুশ্রূষার সব ব্যবস্থা করেছিলেন গ্রামের মানুষজন । মৃত্যুর পরও বৃদ্ধের দেহ সৎকারের জন্য হিন্দু ধর্মীয় রীতি-নীতি মেনে কাজ সম্পন্ন করলেন গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন । বাড়ি থেকে নদীর পাড়ে কাঁধে করে দেহ নিয়ে গেলেন গ্রামবাসীরা । তারপর দেহ সৎকার করা হয় ।
গ্রামের বাসিন্দা শেখ ফিরদৌস বলেন, "রামধনু রজক খুব ভালো মানুষ ছিলেন । আমাদের গ্রামে সাম্প্রদায়িক সদ্ভাব দৃষ্টান্ত রেখেছে বহুকাল ধরে । বর্তমানে গোটা দেশে হিন্দু ও মুসলমানদের নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছেন । তাঁদের উদ্দেশ্যে বলব, আমরা এই দেশে হিন্দু ও মুসলমান ভাইয়ের মতো । আমাদের মধ্যে কোনও বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না । যিনি মারা গেছেন তিনি ধর্মীয়ভাবে হিন্দু হলেও তিনি আমাদের গ্রামেরই একজন সম্মানীয় ব্যক্তি ছিলেন ।"