দুর্গাপুর, 22 জানুয়ারি: কথায় বলে মাছে-ভাতে বাঙালি ৷ কিন্তু কালের প্রবাহে আধুনিক প্রজন্মের কাছে যেন অপ্রিয় হয়ে উঠছে মাছ ৷ সে কাঁটা গলায় গেঁথে যাওয়ার ভয়েই হোক বা অন্য কারণেই ৷ এখন মাছ খুব একটা প্রিয় খাদ্য হিসাবে তাদের তালিকার মধ্যে পড়ে না । এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মাছের তুলনায় চিকেন, মাটন কিংবা ডিমেই বেশি স্বাচ্ছ্যন্দ ৷ তাই আধুনিক প্রজন্মকে মাছ খাওয়ার প্রতি আকৃষ্ট করতে উদ্যোগ নিল দুর্গাপুরের 9 নম্বর ওয়ার্ডের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ৷ তারা আধুনিক প্রজন্মের কাছে মাছের বিভিন্ন লোভনীয় পদ তুলে দিলেন মৎস্য উৎসবের মাধ্যমে ৷ প্রবাদ মেনেই এর নামকরণ করা হয় মাছে-ভাতে বাঙালি ৷ এই উৎসব দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করল এ বছর ।
দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপের এ-জোন হর্ষবর্ধন রোডের ফুটবল ময়দানে রবিবাসরীয় দুপুরে দেখা গেল মৎস্য প্রিয় বাঙালিকে কাঁচা মিঠে রোদ গায়ে মেখে প্রায় ষোল রকমের মাছের বিভিন্ন পদ দিয়ে দুপুরের আহার সারতে । পদ্মার ইলিশ থেকে চারা পোনা, সামুদ্রিক পমফ্রেট থেকে পাবদা সবেতেই বাঙালির মনে অন্য রসনা জড়িয়ে রয়েছে । বাঙালির রসনা তৃপ্তি মেটাতে দুর্গাপুরের প্রাক্তন কাউন্সিলর পল্লবরঞ্জন নাগের উদ্যোগে মৎস্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে । হাজার হাজার মৎসপ্রেমীরা হাজির হয়েছেন এই মেলায় । রবিবারের দুপুরটা যেন পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সকলের একসঙ্গে কাটছে এই মেলায় । মাছের স্বাদ উপভোগ করছেন আট থেকে আশি সকলেই ।
দ্বিতীয় বছরের এই মৎস্য মেলায় উপচে পড়ল ভিড় । শুধু দুর্গাপুরবাসী নয়, পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষও ভিড় জমাচ্ছেন এই মৎস্য মেলায় । উদ্বোধন করলেন দুর্গাপুর নগর নিগমের পৌর প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় । রবিবারের দুপুর গড়াতে না গড়াতেই পরিপূর্ণ হয়ে গেল দুর্গাপুরের হর্ষবর্ধনের মাঠ । সব মিলিয়ে জমজমাট হয়ে উঠল দুর্গাপুরের মৎস্য উৎসব । দুর্গাপুরের প্রাক্তন মেয়র তথা প্রাক্তন বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, "মাছ আমাদের প্রত্যেকের কাছে অত্যন্ত প্রিয় । ঘটি হোক কিংবা বাঙাল আজ সবাই মেতে উঠেছেন মৎস্য উৎসবে । তাই আমি চাইব দুর্গাপুরে এই উৎসব বেঁচে থাকুক ।"
হরেক রকমের মাছ দিয়ে দুপুরের আহারা সারতে সারতে সাধারণ গৃহবধূরা বলেন, "দারুন উৎসব । যারা এই উৎসবে আসেননি তাদেরকে বলব এই উৎসবে আসুন । এক ছাতার নিচে এত রকমের মাছের স্বাদ একবার চেটে পুটে গ্রহণ করুন ।" যার উদ্যোগে এই নিয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করল এই মৎস্য উৎসব, প্রাক্তন কাউন্সিলর পল্লবরঞ্জন নাথ বলেন, "আধুনিক প্রজন্ম কাঁটা গেঁথে যাওয়ার ভয়ে মাছ থেকে বিমুখ হয়ে যাচ্ছে । তাদেরকে যাতে মাছের প্রতি আকৃষ্ট করা যায় এবং অনেকেই বহুরকম মাছের স্বাদ বছরভর পান না । তাই তাদেরকে বিভিন্নরকম মাছের পদ খাওয়ানোর জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ । ঘটি এবং বাঙালদের মাছ খাওয়ার মধ্যে একটা সুপ্ত প্রতিযোগিতা রয়েছে । তাই এই এক ছাতার নিচে শুটকি মাছ থেকে রুই মাছের ঝোল সব আছে ।"
আরও পড়ুন: পুরী-বৃন্দাবন ঘুরে বাড়ি ফেরেন রঘুনাথ গোস্বামী, সেই আনন্দে আজও মাছের মেলা
রবিবাসরীয় দুপুরে হর্ষবর্ধন রোডের ফুটবল ময়দান জুড়ে এক অন্য উৎসবের ছবি (Fish festival arranged in Durgapur on Sunday) । সংগীতের তালের সঙ্গে কই, ভেটকি, মৌরলা, ইলিশ, পাবদা, রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, লটে, চিংড়ি, পমফ্রেট, চারা পোণা ইত্যাদি বহু রকমের মাছের ভিন্ন ভিন্ন পদ চেখে দেখার অনন্য স্বাদ যেন ভোলার নয় । তাই সকলেই এক বাক্যে বললেন, এই উৎসব বেঁচে থাক অনন্তকাল । মাছে-ভাতে বাঙালি থেকে যাক চিরকাল ৷