দুর্গাপুর, 8 অক্টোবর: বাংলার দুর্গাপুজো শুরু হতে বাকি আরও এক পক্ষকাল । তবে দুর্গাপুরের ফরিদপুর ব্লকের সরপি গ্রামে বোধনের মাধ্যমে শুরু হয়ে গেল দেবী দুর্গার আরাধনা । 400 বছর আগে দুর্গাপুজোর এক পক্ষকাল আগেই রাজা অর্জুন রায়চৌধুরীর হাত ধরে শুরু হয়েছিল রায়চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপুজো । সেই রীতি মেনে আজও শুক্লপক্ষের কৃষ্ণ নবমী তিথিতেই হয় দেবীর বোধন । তাই পুজোর 14 দিন আগে থেকেই এলাকায় দুর্গাপুজোর আমেজ।
শোনা যায়, রাজা অর্জুন রায়চৌধুরী প্রথমে পাথরের তৈরি দুর্গা পুজোর প্রচলন করেন । পরে দুই স্ত্রী-সন্তানদের মধ্যে 10 আনা ও 6 আনা ভাগে জমিদারি ভাগ করে দেন । পাশাপাশি একই জায়গায় দু'টি পুজো এখনও চলছে । রবিবার দেবীর বোধন হল । বোধনের পর থেকেই ঘট পুজো শুরু হয় । দুর্গা মূর্তির সামনে এই ঘট দশমীর দিন পর্যন্ত পূজিত হয় । আজ থেকেই মাকে দেওয়া হবে অন্ন ভোগ । বোধনের দিন হয় পাঁঠাবলিও । সন্ধ্যায় হয় আরতি । আজ থেকেই ঘট পুজোর সঙ্গে হবে চণ্ডীপাঠ, দশমীর দিন পর্যন্ত জ্বলবে প্রদীপ । দশমীর দিন মায়ের ভোগে থাকে চ্যাংমাছ।
সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতেও হয় পাঁঠা বলি । রাজা না থাকলেও রয়ে গিয়েছে সেই রীতি আজও। বোধনের দিনেও পরিবারের সকলেই একত্রিত হয়। সকাল থেকেই নতুন জামা কাপড় পরে গ্রামের বাইরের পুকুর থেকে নিয়ে আসা হয় ঘটে করে জল । তারপর সেই ঘট মন্দিরে রেখে শুরু হয় পুজো । দশমীর দিন পর্যন্ত উৎসবের মেজাজ থাকে গ্রামবাসীদের মধ্যে । আগে অষ্টমীর দিন এই দুর্গোৎসবে মহিষ বলি দেওয়া হত । কিন্তু করোনার সময় থেকে সেই প্রথা বন্ধ করে দেওয়া হয় । তবে আজও দেবীর বোধনের দিন থেকেই এই মন্দিরে প্রতিদিন অন্নভোগ দেওয়া হয় । প্রাচীন রীতিনীতি মেনে আজও ভক্তি ভরে পাশাপাশি দুটি মন্দিরে দুর্গোৎসব হয়ে থাকে । আর দুর্গাপুজোর বহুদিন আগে এই উৎসব শুরু হয়ে যাওয়ার কারণে গোটা গ্রামের মানুষ উৎসবমুখর হয়ে পড়েন । আট থেকে আশি - সকলেই প্রায় 20 দিন ধরে চলতে থাকা এই উৎসবকে ঘিরে মাতোয়ারা থাকে ।
আরও পড়ুন: একরত্তিকে বাড়িতে রেখে দুর্গার চিন্ময়ী রূপ দিতে কলকাতা থেকে ভিনজেলায় পাড়ি 'মা'য়ের
অষ্টাদশী গৌরী রায়চৌধুরী জানাল, "15 দিন আগে দুর্গোৎসব শুরু হয়ে যাওয়ার যে কী আনন্দ তা বলা যাবে না । আমাদের প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই অতিথি আসা শুরু হয়ে গেল আজ থেকে । সমস্ত বয়সের মানুষেরা আজ থেকে আনন্দে মেতে উঠবেন । অন্যদের পুজো যখন সপ্তমী থেকে চার দিন আমরা 15 দিন একটানা এই আনন্দ উপভোগ করি।" একই কথা শোনা গেল রায়চৌধুরী পরিবারের বর্ষিয়ান বংশধর সুখেন রায় চৌধুরীর কন্ঠে।