আসানসোল, 7 ডিসেম্বর: 11 বছরের পুরনো খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হল এক ব্যক্তি ৷ তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের (Life Imprisonment) সাজা শোনাল আদালত ৷ সাজাপ্রাপ্ত ওই খুনের আসামির নাম দিনু বাউরি ওরফে অরবিন্দ ৷ বুধবার তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের সাজা শোনান আসানসোলের (Asansol) অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদলতের বিচারক শরণ্য়া সেন প্রসাদ ৷
মামলার সরকারি আইনজীবী বিনয়ানন্দ চট্টোপাধ্যায় জানান, 2011 সালে বিধানসভা ভোটের আগে রাজনীতির বলি হন তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের নেতা রবীন কাজি ৷ সেই সময় 'বামদুর্গ' বলে পরিচিত জামুড়িয়ায় ভোটের প্রচার চলাকালীন তাঁকে খুন করা হয় ৷ চারচাকা গাড়ির নীচে বারবার পিষে খুন করা হয় রবীনকে ৷ সেই ঘটনায় অভিযুক্ত ছিল দিনু ৷ 11 বছর ধরে মামলা চলার পর বুধবার তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত ৷ একইসঙ্গে, দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ৷
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি তরুণীকে গণধর্ষণে দুই অভিযুক্তের 20 বছরের কারাদণ্ড
তথ্য বলছে, 2011 সালের 4 এপ্রিল জামুড়িয়ায় ভোট প্রচারে যান তৃণমূল প্রার্থী প্রভাত চট্টোপাধ্যায় ৷ সেই সময় জামুরিয়ার বারুল গ্রামে প্রচারে ঢুকতে তাঁকে বাধা দেয় দিনু ৷ এলাকাবাসীর দাবি ছিল, দিনু সিপিএম সমর্থক এবং কয়লা মাফিয়া ৷ 2011 সালের 4 এপ্রিল দলবল নিয়ে প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের মিছিল আটকে দাঁড়ায় দিনু বাউরি ৷ এ নিয়ে শুরু হয় বচসা ৷ প্রার্থী প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের উপর এরপর হামলা করে দিনু বাউরির লোকজন ৷ সেই ঘটনা দেখে প্রভাত চট্টোপাধ্যায়কে বাঁচাতে এগিয়ে যান তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের নেতা রবীন কাজি ৷ তা দেখে রবীনকে মাটিতে ফেলে দেয় দিনু বাউরির অনুগামীরা ৷ এরপরই দিনু বাউরি তার চারচাকা গাড়ি রবীন কাজির উপর চালিয়ে দেয় ৷
প্রত্যক্ষদর্শীরা আদালতে জানিয়েছেন, শুধুমাত্র একবার নয় ৷ বারবার রবীনকে চাকার নীচে পিষে দেওয়া হয় ৷ তাতেই প্রাণ যায় তাঁর ৷ এই ঘটনার পরই গা-ঢাকা দেয় দিনু ৷ সেই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তোলপাড় শুরু হয় ৷ তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) রবীন কাজির মৃতদেহ নিয়ে জামুড়িয়ায় মিছিল করেন ৷ চারিদিকে আন্দোলন সংগঠিত হয় ৷ চাপে পড়ে যায় পুলিশ প্রশাসন ৷ এর কয়েকদিনের মধ্যেই ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেফতার হয় দিনু বাউরি ৷ এই ঘটনায় বাম নেতৃত্বের মদত ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল সেই সময় ৷
সরকারি আইনজীবী বিনয়ানন্দ চট্টোপাধ্যায় মামলা প্রসঙ্গে বলেন, "মোট 17 জন সাক্ষী এই ঘটনায় সাক্ষ্য দেন ৷ বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এই ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে আদালতে প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছিল ৷ কিন্তু, সাক্ষীরা সমস্ত হুমকি, প্রলোভন উপেক্ষা করে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৷ তারই প্রেক্ষিতে আদালত দিনু বাউরিকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনায় ৷"
সাজা ঘোষণার পর আসানসোল আদালত থেকে আসানসোল সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়ার পথে দিনু বাউরির প্রতিক্রিয়া চান সাংবাদিকরা ৷ তাঁদের প্রশ্নের উত্তরে দিনু বলে, "এই মুহূর্তে আমার কিছুই বলার নেই ৷"