ETV Bharat / state

Viral Dance: নাচের ছন্দে লিখব জীবন ! মাস্টার জেডি'র হাত ধরেই স্বপ্ন দেখছে একদল ক্ষুদে - মাস্টার জেডি

কিছু না পাওয়ার মধ্যেও তারা পেয়েছেন অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা ৷ পেয়েছেন বড়দের আশীর্বাদ ৷ আসানসোল উত্তরে গিরমিন্ট কোলিয়ারি এলাকার ছোট ছেলে-মেয়েরা নাচ করেই পেয়েছেন পরিচয় ৷ ভাইরাল হয়েছেন নেট দুনিয়ায় ৷

Etv Bharat
Etv Bharat
author img

By

Published : Jun 9, 2023, 8:33 PM IST

Updated : Jun 9, 2023, 10:57 PM IST

নাচের ছন্দে লিখব জীবন

আসানসোল, 9 জুন: আসানসোল উত্তরে গিরমিন্ট কোলিয়ারি এলাকা। ইসিএলের খনির ছোট ছোট আবাসন। তারই পাশে সার দিয়ে টালির ঘর। পাড়ার মাঝে পুড়ছে কয়লা। দুপুরের গরম কমে যাওয়ার পর পাড়ার মহিলারা বেরিয়ে এসেছে বাইরে বৈকালিক আড্ডায়। আর তারই পাশে একমনে নাচের অধ্যাবসায় করে যাচ্ছে মাস্টার জেডি'র ছাত্রছাত্রীরা। এরা প্রত্যেকেই দিনমজুর শ্রেণীর পরিবারের। কারও বাবা ইঁট ভাটায় কাজ করেন, কারও মা আবার পরিচারিকা। তাঁদের ঘরের ছেলে-মেয়েরাই নিজেদের প্রতিভার জোরে ভাইরাল সোশাল মিডিয়ায় ৷

পুষ্টিকর খাবার নেই, পরনে ভালো পোশাক নেই, নেই নাচের জন্য কোনও পরিকাঠামো। কিন্তু শুধুমাত্র নাচের প্রতি ভালোবাসা থেকেই সবরকম ঝা-চকচকে দুনিয়া থেকে দূরে থেকেও লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন নিমেষে ৷ সেই খবর পেয়ে তাঁদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছেন আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষক চন্দ্রশেখর কুন্ডু।

আসানসোলের গিরমিন্ট কোলিয়ারি এলাকার বাসিন্দা অজয় তুড়ি। আসানসোলের নাচের লোকেদের কাছে তাঁর পরিচয় জেডি নামেই। অজয়ের স্বপ্ন ছিল বড় ডান্সার হয়ে ওঠা। দূরদূরান্তে প্রতিযোগিতায় নাম দিতেন তিনি ৷ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বহু ট্রফি রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। এই রকমই একটি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নের প্রাইজ জিতে ফিরছিলেন। কিন্তু পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মাথায় গভীর আঘাত পান তিনি। এখনও সেই দাগ স্পষ্ট। চিকিৎসকরা সম্পূর্ণরূপে তাঁকে বেড রেস্ট করতে বলেন। পাশাপাশি ছাড়তে হবে নাচ, সেটাও জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা ৷

বাড়িতে বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন অজয়। তাই নিজের অসমাপ্ত স্বপ্নকে সফল করতে পাড়ারই দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের নিয়ে গড়ে তোলেন একটি নাচের দল। তাঁদেরকে তিনি নাচ শেখাতে শুরু করেন ৷ তাঁদের মধ্য দিয়ে নিজের স্বপ্নকে আস্তে আস্তে বাস্তবায়িত করতে থাকেন তিনি । খুব সাধারণভাবেই সোশাল মিডিয়ায় রিল তৈরি করে প্রথম প্রথম ছাড়তে শুরু করেন অজয়। প্রথমদিকে কঠিন ধৈয্যের পরীক্ষা দিতে হলেও এখন অজয়ের লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার ৷ নাচের কোনও পোস্ট করলেই তাতে 4-5 লাখ ভিউ, লাইক আসে ৷ আসে একাধিক মন্তব্যও ৷

অজয় তুরি বলেন, "দুর্ঘটনার ফলে আমার নাচ বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ কিন্তু নাচের সেই স্বপ্ন এই ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে গুলোর মধ্য দিয়ে পূরণ করছি। এরা প্রত্যেকেই দিনমজুর শ্রেণীর পরিবার থেকে আসা। আমি নিজেও গরিব। আমার স্বপ্ন এরা সবাই একদিন রিয়েলিটি শোয়ে যাবে, নিজেদের প্রতিভাকে তুলে ধরবে।"

অজয়ের কাছে নাচের প্রশিক্ষণ নেয় বর্ষা বাউরি। বর্ষা বলে, "আমার বাবা নেই। মা অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। তারপর আর পড়ার জন্য খরচ করার সামর্থ্য নেই মায়ের। তাই পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু নাচকে আঁকড়ে ধরেই এখন এগিয়ে যেতে চাই।"

আরও পড়ুন: লন্ঠনেই শিক্ষার 'আলো' এনেছেন 'রাস্তার মাস্টার' দীপ

জেডি ও তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিশিষ্ট সমাজসেবী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষক চন্দ্রশেখর কুন্ডু ৷ তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে গিয়ে তাদের সমস্যার কথা শোনেন ও গরম থেকে স্বস্তি দিতে তাদেরকে একটি এয়ারকুলার মেশিনও দিয়েছেন। পাশাপাশি নাচের প্রশিক্ষক জেডি এবং তার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রতি মাসে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করেছেন চন্দ্রশেখর কুণ্ডু। চন্দ্রশেখর কুণ্ড জানিয়েছেন, আগামী দিনে সমস্ত প্রয়োজনে তিনি তাদের পাশে রয়েছেন ৷ শিল্পীদের আরও বড় মঞ্চ, বড় প্ল্যাটফর্ম করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন তিনি।

নাচের ছন্দে লিখব জীবন

আসানসোল, 9 জুন: আসানসোল উত্তরে গিরমিন্ট কোলিয়ারি এলাকা। ইসিএলের খনির ছোট ছোট আবাসন। তারই পাশে সার দিয়ে টালির ঘর। পাড়ার মাঝে পুড়ছে কয়লা। দুপুরের গরম কমে যাওয়ার পর পাড়ার মহিলারা বেরিয়ে এসেছে বাইরে বৈকালিক আড্ডায়। আর তারই পাশে একমনে নাচের অধ্যাবসায় করে যাচ্ছে মাস্টার জেডি'র ছাত্রছাত্রীরা। এরা প্রত্যেকেই দিনমজুর শ্রেণীর পরিবারের। কারও বাবা ইঁট ভাটায় কাজ করেন, কারও মা আবার পরিচারিকা। তাঁদের ঘরের ছেলে-মেয়েরাই নিজেদের প্রতিভার জোরে ভাইরাল সোশাল মিডিয়ায় ৷

পুষ্টিকর খাবার নেই, পরনে ভালো পোশাক নেই, নেই নাচের জন্য কোনও পরিকাঠামো। কিন্তু শুধুমাত্র নাচের প্রতি ভালোবাসা থেকেই সবরকম ঝা-চকচকে দুনিয়া থেকে দূরে থেকেও লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন নিমেষে ৷ সেই খবর পেয়ে তাঁদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছেন আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষক চন্দ্রশেখর কুন্ডু।

আসানসোলের গিরমিন্ট কোলিয়ারি এলাকার বাসিন্দা অজয় তুড়ি। আসানসোলের নাচের লোকেদের কাছে তাঁর পরিচয় জেডি নামেই। অজয়ের স্বপ্ন ছিল বড় ডান্সার হয়ে ওঠা। দূরদূরান্তে প্রতিযোগিতায় নাম দিতেন তিনি ৷ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বহু ট্রফি রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। এই রকমই একটি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নের প্রাইজ জিতে ফিরছিলেন। কিন্তু পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মাথায় গভীর আঘাত পান তিনি। এখনও সেই দাগ স্পষ্ট। চিকিৎসকরা সম্পূর্ণরূপে তাঁকে বেড রেস্ট করতে বলেন। পাশাপাশি ছাড়তে হবে নাচ, সেটাও জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা ৷

বাড়িতে বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন অজয়। তাই নিজের অসমাপ্ত স্বপ্নকে সফল করতে পাড়ারই দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের নিয়ে গড়ে তোলেন একটি নাচের দল। তাঁদেরকে তিনি নাচ শেখাতে শুরু করেন ৷ তাঁদের মধ্য দিয়ে নিজের স্বপ্নকে আস্তে আস্তে বাস্তবায়িত করতে থাকেন তিনি । খুব সাধারণভাবেই সোশাল মিডিয়ায় রিল তৈরি করে প্রথম প্রথম ছাড়তে শুরু করেন অজয়। প্রথমদিকে কঠিন ধৈয্যের পরীক্ষা দিতে হলেও এখন অজয়ের লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার ৷ নাচের কোনও পোস্ট করলেই তাতে 4-5 লাখ ভিউ, লাইক আসে ৷ আসে একাধিক মন্তব্যও ৷

অজয় তুরি বলেন, "দুর্ঘটনার ফলে আমার নাচ বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ কিন্তু নাচের সেই স্বপ্ন এই ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে গুলোর মধ্য দিয়ে পূরণ করছি। এরা প্রত্যেকেই দিনমজুর শ্রেণীর পরিবার থেকে আসা। আমি নিজেও গরিব। আমার স্বপ্ন এরা সবাই একদিন রিয়েলিটি শোয়ে যাবে, নিজেদের প্রতিভাকে তুলে ধরবে।"

অজয়ের কাছে নাচের প্রশিক্ষণ নেয় বর্ষা বাউরি। বর্ষা বলে, "আমার বাবা নেই। মা অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। তারপর আর পড়ার জন্য খরচ করার সামর্থ্য নেই মায়ের। তাই পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু নাচকে আঁকড়ে ধরেই এখন এগিয়ে যেতে চাই।"

আরও পড়ুন: লন্ঠনেই শিক্ষার 'আলো' এনেছেন 'রাস্তার মাস্টার' দীপ

জেডি ও তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিশিষ্ট সমাজসেবী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষক চন্দ্রশেখর কুন্ডু ৷ তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে গিয়ে তাদের সমস্যার কথা শোনেন ও গরম থেকে স্বস্তি দিতে তাদেরকে একটি এয়ারকুলার মেশিনও দিয়েছেন। পাশাপাশি নাচের প্রশিক্ষক জেডি এবং তার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রতি মাসে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করেছেন চন্দ্রশেখর কুণ্ডু। চন্দ্রশেখর কুণ্ড জানিয়েছেন, আগামী দিনে সমস্ত প্রয়োজনে তিনি তাদের পাশে রয়েছেন ৷ শিল্পীদের আরও বড় মঞ্চ, বড় প্ল্যাটফর্ম করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন তিনি।

Last Updated : Jun 9, 2023, 10:57 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.