কৃষ্ণনগর, 6 জুলাই : সরকারি চাকরি দেবে বলে টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে ৷ ঘটনাটি কৃষ্ণনগর পৌরসভার 5 নম্বর ওয়ার্ডের ৷ রাধারানি বিশ্বাস এলাকার মানুষের কাছে সিআইডি-র ডিএসপি নামেই পরিচিত ছিল এর আগে ৷ যদিও তার মেয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে সামাজিক কাজ করে রাধারানি ৷
ছোটবেলা থেকে রাধারানি বিশ্বাসকে কাঁধে তিনটি স্টার চিহ্নযুক্ত পুলিশি পোশাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখেছেন প্রতারিত যুবক গৌরব চট্টোপাধ্যায় ৷ এমনকি গত বছর লকডাউনে সে অনেক দুঃস্থ মানুষকে সাহায্য করেছে ৷ সেই থেকে গৌরবের কেমন যেন আস্থা জন্মেছিল রাধারানির প্রতি ৷ তাই বেকার যুবক গৌরব ফেব্রুয়ারি মাসে রাধারানির সঙ্গে সরকারি চাকরি পেতে যোগাযোগ করেন ৷ তখন গ্রুপ ডি-তে লোক নেওয়া হবে বলে বাড়িতে বসিয়ে গৌরবকে দিয়ে একটি ফর্ম ফিলাপ করিয়ে নেয় রাধারানি ৷ বলে যে এরপর একটা ই-মেল আসবে, তার আগে 5 লক্ষ টাকা দিতে হবে ৷ চাকরির আশায় ধার করে 27 কি 28 ফেব্রুয়ারি সেই টাকা তুলে দেন "ডিএসপি"র হাতে ৷ এর পর 2 মার্চ একটি মেল পান গৌরব ৷ তিনি বলেন, "মেলে উল্লেখ থাকে বগুলা হাসপাতালে মেডিক্যালের জন্য যেতে হবে ৷" সেই অনুযায়ী গৌরব-সহ পাশাপাশি অঞ্চল থেকে বেশ কিছু যুবক বগুলা হাসপাতালে যান ৷ এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, "বগুলা হাসপাতালে 20-30 জনের চেস্টের মাপ নিয়েছে, প্রেশার মেপেছে ৷ একটা সাদা কাগজে সই করে ছেড়ে দিয়েছে ৷ কোনও ডকুমেন্ট দেয়নি ৷" সেখানেও গৌরবকে 5000 টাকা দিতে হয়েছে ৷ এর পর 20 দিন সময়ের মধ্য়ে সবকিছু সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে জানানো হয় ৷
আরও পড়ুন : নেপথ্যে কি ব্ল্যাকমেল? বালিতে জাতীয় স্তরের ক্যারাটে খেলোয়াড় পামেলা আত্মঘাতী
কিন্তু 3 মাস কেটে গেলেও কিছু না হওয়ায় গৌরব রাধারানির বাড়িতে যান ৷ তিনি বলেন, "লকডাউন চলছে ৷ টাকা নেই ৷ ব্যবসা করব, তাই টাকা চাই ৷ কিন্তু তিনি অস্বীকার করেন ৷" এর পর বেকার প্রতারিত যুবক স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানান ৷ তিনি দায়িত্ব নিয়ে জানান যে এর ব্যবস্থা করবেন ৷ কেন গৌরব এত বিশ্বাস করলেন রাধারানিকে, এর উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, রাধারানিকে ছোট থেকে সামাজিক কাজকর্ম করতে দেখেছেন আর তিনি নিজেকে সিআইডি-র ডিএসপি বলে পরিচয় দিয়েছিলেন ৷ এছাড়া পুলিশি পোশাকে নজর কেড়েছিল রাধারানি ৷
প্রাক্তন কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী এ বিষয়ে বলেন যে, তিনি বিষয়টি শুনেছেন ৷ এর আগে রাতে রাধারানির বাড়িতে ঝামেলা হয়েছিল বলে তাঁরা বিষয়টি জানতে পারেননি ৷ আর রাধারানির তৃণমূল যোগ নিয়ে তাঁর কাছে সঠিক কোনও তথ্য নেই ৷
রাধারানির মেয়ে তিয়াসা বিশ্বাস এই অভিযোগকে তাদের ফাঁসানোর চক্রান্ত বলে দাবি করেছে ৷ তিনি বলেন, "আমার মা কিছু করে না, হাউজওয়াইফ ৷ সিআইডি এসব মিথ্যে কথা ৷ আমাদের একটা ছোট ব্যবসা আছে, তাতে চলে ৷" তাঁর মা রাজনীতি করেন কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিয়াসা বলেন, "রাজনীতি মানে উনি সমাজসেবী ৷ মানুষের সেবা করেন ৷ তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে কাজকর্মগুলো করেন ৷" সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষকে সাহায্য করেন তিনি ৷ টাকা নিয়ে চাকরি না দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি তিয়াসার ৷ তবে এটা তিয়াসা "প্রশাসনের উপর ছেড়ে দেব" বলেন ৷
দেবাঞ্জন দেবের মতো রাধারানিকে কোনও বিশেষ নেতা, মন্ত্রীর সঙ্গে কখনও দেখা যায়নি বলে জানান গৌরব ৷ তিনি বলেন, "উনি ক্ষমতাশালী, প্রভাবশালী ৷ কিন্তু কোনও নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গে ওঠাবসা দেখিনি ৷ এর সঙ্গে কোনও নেতা, মন্ত্রী জড়িত নয় ৷" থানায় রাধারানি বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন গৌরব ৷ বিষয়টি দেখছেন বর্তমান কাউন্সিলরের স্বামী প্রাক্তন কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী ৷
রাধারানিকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি, তার মেয়েও কোনও সন্ধান দিতে পারেননি ৷