বহরমপুর, 31 অগস্ট: "আদরের ছোট মেয়েকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু খুনির ফাঁসির সাজা হয়েছে শুনে অন্তত নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারব। এতদিন একবুক ব্যাথা নিয়ে বেঁচে ছিলাম। আদালতকে ধন্যবাদ দ্রুত মামলার নিস্পত্তি করার জন্য।" কথা বলতে বলতে বারবার চোখের জল মুছছিলেন মৃত কলেজ ছাত্রী সুতপা চৌধুরীর বাবা স্বাধীন চৌধুরী। রায় শোনার পর বাইরে বেরিয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, "এই ধরনের খুনির একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত ৷ এই নৃশংসতার শাস্তি যদি মৃত্যুদণ্ড না-হয়, তাহলে আগামিদিনে এই ধরনের ঘটনা আরও বেড়ে যাবে ৷ এমন ঘটনা যাতে সমাজে আর না ঘটে, সেই বার্তায় দেবে এই শাস্তি ৷ অভিযুক্তরা হাইকোর্টে যাবে এই শাস্তির বিরুদ্ধে ৷ তবে আমাদের লড়াই চলছে চলবে ৷"
তিনি আরও বলেন, "এই ধরনের অপরাধ বন্ধের নানা রকম উপায় হতে পারে ৷ আমি মনে করি এই ধরনের ঘটনা ঘটলে দ্রুত শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত ৷ তাহলে অনেকে এই ঘটনা থেকে বিরত থাকবে ৷ আর যদি মামলা দীর্ঘমেয়াদি হয়, শাস্তি দেরিতে দেওয়া হয়, তাহলে সমাজ সেই ঘটনা ভুলে যায় ৷ আইনের কাছে কেউ মুক্তি পায় না ৷ কোনও বাবা-মা যেন তাঁর সন্তানকে এইভাবে না হারান, সেই চেষ্টা করতে হবে ৷"
সুতপা খুনের 15 মাসের মাথায় অভিযুক্ত সুশান্তকে দোষী সাব্যস্ত করে বহরমপুর আদালত। বৃহস্পতিবার অভিযুক্তের শাস্তি ঘোষণা করেন বিচারক ৷ আদালতে সুশান্তের আইনজীবী তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আবেদন জানালেও বিচারক ফাঁসির সাজা শোনান ৷
আরও পড়ুন: সুতপা চৌধুরী খুনে সুশান্তর ফাঁসির সাজা আদালতের
দুই মেয়ের মধ্যে ছোট মেয়ে সুতপা ছিলেন বাবার অত্যন্ত স্নেহের। মেয়েকে কাছে রাখার জন্য নিজের স্কুলে ভর্তি করিয়ে ছিলেন বাবা স্বাধীন চৌধুরী। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর একরকম ইচ্ছার বিরুদ্ধেই সুতপাকে বহরমপুর গার্লস কলেজে ভরতি করেছিলেন। স্বাধীনবাবু জানান, মেয়েকে বহরমপুরে রেখে সেদিন বাড়ির দিকে পা বাড়াতে খুবই কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু মেয়ের উচ্চশিক্ষার জন্যই তাঁকে ওখানে রেখে পড়ানো দরকার ছিল। আগেও তিনি বলেছিলেন, মালদায় থাকলে সুশান্ত মেয়েকে পড়তে দিত না। বারবার বিরক্ত করত। বহরমপুর রাখার সেটাও আর এক কারণ। কিন্তু বহরমপুরে রেখেও সুশান্তর হাত থেকে মেয়েকে বাঁচাতে পারেননি ৷