ETV Bharat / state

চিনা পণ্য বয়কটের ডাকে শঙ্কিত মুর্শিদাবাদের পরচুল ব্যবসায়ীরা - মুর্শিদাবাদের চুল ব্যবসায়ীরা

মুর্শিদাবাদে তৈরি হওয়া পরচুলের 95 শতাংশ রপ্তানি হয় চিনে ৷ কিন্তু ভারত-চিন সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে এখন চিনা পণ্য বয়কটের ডাক উঠছে সর্বত্র ৷ এই পরিস্থিতিতে চিনারা এই ব্যবসা থেকে হাত গুটিয়ে নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মুর্শিদাবাদের পরচুল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন ৷

Hair Businessman of Murshidabad
মুর্শিদাবাদের চুল ব্যবসায়ীরা
author img

By

Published : Jun 21, 2020, 2:56 AM IST

Updated : Jun 30, 2020, 10:49 PM IST

বেলডাঙা, 20 জুন : প্রথমে বাড়ির মহিলাদের উঠে যাওয়া মাথার চুল টাকার পরিবর্তে কিনে আনেন ফেরিওয়ালারা ৷ তারপর বিভিন্ন ধাপের মাধ্যমে সেই চুলগুলিকে সুসজ্জিত করা হয় ৷ এরপর মহাজনরা তা রপ্তানি করেন ৷ এই চুলগুলির সাধারণত পরচুল তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ৷ মুর্শিদাবাদের ভরতপুর, রেজিনগর ও বেলডাঙা ব্লকে রমরমিয়ে চলে এই চুলের কারবার ৷ মুর্শিদাবাদে তৈরি হওয়া পরচুলের 95 শতাংশ রপ্তানি হয় চিনে ৷ কিন্তু ভারত-চিন সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে এখন চিনা পণ্য বয়কটের ডাক উঠছে সর্বত্র ৷ এই পরিস্থিতিতে চিনারা এই ব্যবসা থেকে হাত গুটিয়ে নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মুর্শিদাবাদের চুল ব্যবসার সঙ্গে যুক্তরা ৷ তাই কাজ হারানোর ভয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ তাঁদের ৷

মুর্শিদাবাদের এই চুল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ মহিলা ও পুরুষ ৷ বিভিন্ন ধাপে এই চুলগুলিকে বাড়ি বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে রপ্তানিযোগ্য করে তোলা হয় ৷ প্রথমে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত জেলার বেশ কিছু মানুষ হকারি করে বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাড়ির মহিলাদের উঠে যাওয়া চুল সংগ্রহ করেন ৷ পরিবর্তে হকাররা কখনও ওই চুলের মালিককে টাকা বা জিনিস দেন ৷ তারপর তা মুর্শিদাবাদে এসে ভাংড়ি বাজারে বিক্রি করেন ৷ সেখান থেকে চুলগুলি চলে যায় একদল মহিলাদের কাছে ৷ তাঁদের কাজ অগোছালো চুলগুলিকে বিন্যাস করা ৷ তারপর সেগুলি পাঠানো হয়ে ধোয়ার জন্য ৷ ধোয়া হয়ে গেলে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় একদল মিস্ত্রির হাতে ৷ তাঁদের চুলের মিস্ত্রি বলা হয় ৷ এই মিস্ত্রিদের কাজ ধুয়ে আসা চুলগুলিকে দৈর্ঘ্য অনুযায়ী বাছাই করা ও সেগুলিকে সুসজ্জিত করা ৷ তারপর সেগুলির প্যাকিং করা হয় ৷

এই চুলের মিস্ত্রি বিভিন্ন মহাজনের অধীনে কাজ করে ৷ এই মহাজনের হাত ধরেই প্যাকিং করা চুলগুলি রপ্তানি করা হয় চিন ও বার্মায় ৷ চুলের দৈর্ঘ্যের উপর ভিত্তি করে রপ্তানি মূল্য ঠিক হয় ৷ যেমন 3 থেকে 4 ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের চুলের কেজি প্রতি দাম 200 থেকে 400 টাকা ৷ 8 থেকে 10 ইঞ্চি চুল 4 থেকে 6 হাজার টাকা কেজি প্রতি দামে বিক্রি করা হয় ৷ এইভাবে দৈর্ঘ্য ও গুনগত দিক দিয়ে এই চুলগুলির সর্বোচ্চ দাম পাওয়া যায় কেজি প্রতি 25 থেকে 30 হাজার টাকা ৷ বিশেষ করে বিউটি পার্লার থেকে যে চুল সংগ্রহ করে হকারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধাপে সুসজ্জিত হয়ে চুলের মিস্ত্রিদের কাছে আসে তার দাম সব থেকে বেশি ৷

শঙ্কিত মুর্শিদাবাদের পরচুল ব্যবসায়ীরা

ভারতবর্ষ থেকে প্রতিবছর 15 হাজার টন এই চুল রপ্তানি হয় চিনে ৷ তার মধ্যে 4 হাজার টন চুল রপ্তানি হয় মুর্শিদাবাদ থেকে ৷ যা জেলার ব্যবসার 95 শতাংশ ৷ আর বাকি 5 শতাংশ যায় বার্মায় ৷ কিন্তু বর্তমানে ভারত-চিন সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে চিনা পণ্য বয়কটের ডাক উঠছে ৷ আর তাতেই আশঙ্কায় দিন গুনছে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মুর্শিদাবাদের বহু মানুষ ৷

চুলের মিস্ত্রি আজিজুল হক বলেন, "এই চুলের ব্যবসায়ে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয় ৷ বেলডাঙার বেশ কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী এই চুলের রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত ৷ চুলের মিস্ত্রিরা কাজ করে দৈনিক 400 থেকে 500 টাকা করে রোজগার করেন ৷ চিন ব্যবসা বন্ধ করে আমাদের পেটের দায়ে চুরি,ডাকাতি করতে হবে ৷ "

চুল ব্যবসায়ী ফাইজার আলি বলেন, "চিনের সঙ্গে যুদ্ধ হলে আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ব । চিনারা না এলে চুলের ব্যবসায় প্রভাব পড়বে । বহুজন এই কাজের সঙ্গে যুক্ত । তাঁরা কাজ হারিয়ে কার্যত পথে বসবেন ।"

অপর এক ব্যবসায়ী মহম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, "লকডাউনে প্রায় আড়াই মাস বন্ধ ছিল চুলের কারবার । নতুন করে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওযায় চুলের ব্যবসায় আরও সংকট দেখা দিয়েছে । চিনারা না এলে ব্যাপক প্রভাব পড়বে চুলের ব্যবসায়ে ।"

ভারত-চিন সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে শুধু মুর্শিবাদের এই চুল ব্যবসায়ীরাই আশঙ্কায় রয়েছেন তা কিন্তু নয় ৷ খেলনার ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক্স, পোশাক-সহ রেস্তরাঁর মালিকদেরও কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ৷

বেলডাঙা, 20 জুন : প্রথমে বাড়ির মহিলাদের উঠে যাওয়া মাথার চুল টাকার পরিবর্তে কিনে আনেন ফেরিওয়ালারা ৷ তারপর বিভিন্ন ধাপের মাধ্যমে সেই চুলগুলিকে সুসজ্জিত করা হয় ৷ এরপর মহাজনরা তা রপ্তানি করেন ৷ এই চুলগুলির সাধারণত পরচুল তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ৷ মুর্শিদাবাদের ভরতপুর, রেজিনগর ও বেলডাঙা ব্লকে রমরমিয়ে চলে এই চুলের কারবার ৷ মুর্শিদাবাদে তৈরি হওয়া পরচুলের 95 শতাংশ রপ্তানি হয় চিনে ৷ কিন্তু ভারত-চিন সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে এখন চিনা পণ্য বয়কটের ডাক উঠছে সর্বত্র ৷ এই পরিস্থিতিতে চিনারা এই ব্যবসা থেকে হাত গুটিয়ে নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মুর্শিদাবাদের চুল ব্যবসার সঙ্গে যুক্তরা ৷ তাই কাজ হারানোর ভয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ তাঁদের ৷

মুর্শিদাবাদের এই চুল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ মহিলা ও পুরুষ ৷ বিভিন্ন ধাপে এই চুলগুলিকে বাড়ি বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে রপ্তানিযোগ্য করে তোলা হয় ৷ প্রথমে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত জেলার বেশ কিছু মানুষ হকারি করে বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাড়ির মহিলাদের উঠে যাওয়া চুল সংগ্রহ করেন ৷ পরিবর্তে হকাররা কখনও ওই চুলের মালিককে টাকা বা জিনিস দেন ৷ তারপর তা মুর্শিদাবাদে এসে ভাংড়ি বাজারে বিক্রি করেন ৷ সেখান থেকে চুলগুলি চলে যায় একদল মহিলাদের কাছে ৷ তাঁদের কাজ অগোছালো চুলগুলিকে বিন্যাস করা ৷ তারপর সেগুলি পাঠানো হয়ে ধোয়ার জন্য ৷ ধোয়া হয়ে গেলে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় একদল মিস্ত্রির হাতে ৷ তাঁদের চুলের মিস্ত্রি বলা হয় ৷ এই মিস্ত্রিদের কাজ ধুয়ে আসা চুলগুলিকে দৈর্ঘ্য অনুযায়ী বাছাই করা ও সেগুলিকে সুসজ্জিত করা ৷ তারপর সেগুলির প্যাকিং করা হয় ৷

এই চুলের মিস্ত্রি বিভিন্ন মহাজনের অধীনে কাজ করে ৷ এই মহাজনের হাত ধরেই প্যাকিং করা চুলগুলি রপ্তানি করা হয় চিন ও বার্মায় ৷ চুলের দৈর্ঘ্যের উপর ভিত্তি করে রপ্তানি মূল্য ঠিক হয় ৷ যেমন 3 থেকে 4 ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের চুলের কেজি প্রতি দাম 200 থেকে 400 টাকা ৷ 8 থেকে 10 ইঞ্চি চুল 4 থেকে 6 হাজার টাকা কেজি প্রতি দামে বিক্রি করা হয় ৷ এইভাবে দৈর্ঘ্য ও গুনগত দিক দিয়ে এই চুলগুলির সর্বোচ্চ দাম পাওয়া যায় কেজি প্রতি 25 থেকে 30 হাজার টাকা ৷ বিশেষ করে বিউটি পার্লার থেকে যে চুল সংগ্রহ করে হকারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধাপে সুসজ্জিত হয়ে চুলের মিস্ত্রিদের কাছে আসে তার দাম সব থেকে বেশি ৷

শঙ্কিত মুর্শিদাবাদের পরচুল ব্যবসায়ীরা

ভারতবর্ষ থেকে প্রতিবছর 15 হাজার টন এই চুল রপ্তানি হয় চিনে ৷ তার মধ্যে 4 হাজার টন চুল রপ্তানি হয় মুর্শিদাবাদ থেকে ৷ যা জেলার ব্যবসার 95 শতাংশ ৷ আর বাকি 5 শতাংশ যায় বার্মায় ৷ কিন্তু বর্তমানে ভারত-চিন সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে চিনা পণ্য বয়কটের ডাক উঠছে ৷ আর তাতেই আশঙ্কায় দিন গুনছে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মুর্শিদাবাদের বহু মানুষ ৷

চুলের মিস্ত্রি আজিজুল হক বলেন, "এই চুলের ব্যবসায়ে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয় ৷ বেলডাঙার বেশ কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী এই চুলের রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত ৷ চুলের মিস্ত্রিরা কাজ করে দৈনিক 400 থেকে 500 টাকা করে রোজগার করেন ৷ চিন ব্যবসা বন্ধ করে আমাদের পেটের দায়ে চুরি,ডাকাতি করতে হবে ৷ "

চুল ব্যবসায়ী ফাইজার আলি বলেন, "চিনের সঙ্গে যুদ্ধ হলে আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ব । চিনারা না এলে চুলের ব্যবসায় প্রভাব পড়বে । বহুজন এই কাজের সঙ্গে যুক্ত । তাঁরা কাজ হারিয়ে কার্যত পথে বসবেন ।"

অপর এক ব্যবসায়ী মহম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, "লকডাউনে প্রায় আড়াই মাস বন্ধ ছিল চুলের কারবার । নতুন করে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওযায় চুলের ব্যবসায় আরও সংকট দেখা দিয়েছে । চিনারা না এলে ব্যাপক প্রভাব পড়বে চুলের ব্যবসায়ে ।"

ভারত-চিন সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে শুধু মুর্শিবাদের এই চুল ব্যবসায়ীরাই আশঙ্কায় রয়েছেন তা কিন্তু নয় ৷ খেলনার ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক্স, পোশাক-সহ রেস্তরাঁর মালিকদেরও কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ৷

Last Updated : Jun 30, 2020, 10:49 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.