বামনগোলা (মালদা), 18 নভেম্বর: বেহাল রাস্তার জন্য প্রাণ গেল মাত্র 19 বছর বয়সী এক বধূর ৷ কাঁধে চাপিয়ে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি তাঁকে ৷ গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে মালদার বামনগোলা ব্লকের গোবিন্দপুর মহেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মালডাঙা গ্রামে ৷ রাতে গোটা ঘটনার ভিডিয়ো সোশাল মিডিয়ায় তুলে ধরেন ওই এলাকার বিজেপি নেত্রী ৷
ইতিমধ্যে ভাইরাল সেই ভিডিয়ো ক্লিপ ৷ ইটিভি ভারত ওই ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি ৷ বিজেপি নেত্রী সাফ জানিয়েছেন, তিনিই সেই ভিডিয়ো ক্লিপ তুলেছেন ৷ এদিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস তৃণমূলের জেলা সভাপতি ৷ ওই এলাকায় দ্রুত রাস্তা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্থানীয় বিডিও ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত বধূর নাম মামনি রায় ৷ বয়স মাত্র 19 বছর ৷ বাড়ি মালডাঙা গ্রামেই ৷ স্বামী কার্তিক রায় কৃষক ৷ গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রবল জ্বরে ভুগছিলেন মামনি ৷ গতকাল দুপুরে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি ভীষণ খারাপ হয়ে পড়ে ৷ পরিবারের লোকজন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ৷ কিন্তু গ্রামের খারাপ রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্স কিংবা কোনও গাড়ি ঢুকতে চায় না ৷
এদিকে হাসপাতালও গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ৷ তাই তাঁকে খাটিয়ায় তুলে বামনগোলা গ্রামীণ হাসপাতালের দিকে রওনা দেন পরিবারের লোকজন ৷ একসময় হাসপাতালে পৌঁছান ৷ কিন্তু চিকিৎসকরা মামনিকে মৃত ঘোষণা করেন ৷ তাঁরা পরিবারের সদস্যদের জানান, খানিক আগে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে তাঁরা রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারতেন ৷
ফেসবুক ওই ঘটনার ভিডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ করেন এলাকার বাসিন্দা ও বিজেপির মহিলা মোর্চার উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সহ-সভানেত্রী তথা জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য বীণা সরকার কীর্তনিয়া ৷ সেখানে তিনি বলেন, “রাস্তা সংস্কারের দাবিতে মালডাঙা বুথের মানুষ এর আগেও পথ অবরোধ করেছিল ৷ তখন বিডিও কথা দিয়েছিলেন, দ্রুত ওই রাস্তা করে দেবেন ৷ কিন্তু তিনি রাস্তা তৈরি করেননি ৷ সেই রাস্তার জন্যই মাত্র 19 বছরের একটি নিষ্পাপ মেয়েকে আজ চলে যেতে হল ৷ দু’বছরের বাচ্চা মাকে হারাল ৷’’
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার এখন পথশ্রী করে বেড়াচ্ছে ৷ মালডাঙায় কোথায় সেই পথশ্রী ? যদি সত্যিই পথশ্রীর কাজ হত, তবে দুধের শিশুকে রেখে এক মাকে অকালে ঝরে যেতে হত না ৷ যেভাবে এই গ্রামের মানুষকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে হয়, তা যেন মধ্যযুগীয় ব্যবস্থাকে মনে করিয়ে দেয় ৷ কেন্দ্র থেকে রাজ্যকে টাকা পাঠানো হয় ৷ সেই টাকা শুধু কয়লা-গরুর পিছনে চলে যায় ৷”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসিকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি বলেন, “এমন ঘটনার কথা আমার জানা নেই ৷ রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্পে গ্রামগঞ্জের রাস্তা সংস্কার করা হচ্ছে ৷ এই রাজ্যের সব জেলাতেই চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত রয়েছে ৷ এই অবস্থায় এমন ঘটনা ঘটার কথা নয় ৷ যদি সত্যিই তা ঘটে থাকে, তবে তা খতিয়ে দেখে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে ৷”
বামনগোলার বিডিও রাজু কুণ্ডু বলেন, “ওই এলাকায় পাঁচ কিলোমিটার বেহাল রাস্তার খবর জানি ৷ এর আগে ওই রাস্তা সংস্কারের দাবিতে গ্রামবাসীরা আন্দোলনও করেছিলেন ৷ রাস্তাটির জন্য আমরা স্কিম করে উপর মহলে পাঠিয়েছি ৷ প্রকল্প অনুমোদন হলেই কাজ শুরু করা হবে ৷ আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি স্কিমটি অনুমোদিত হয়ে যাবে ৷”
অন্যদিকে শান্তনু সেন বলেন, "রাজ্যের 11 কোটি মানুষ জানেন 2011 সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের পর রাজ্যের স্বাস্থ্যে পরিষেবা ও পরিকাঠামোগত উন্নতি কতটা হয়েছে । আগে গরিব মানুষেরা ঘটিবাটি বিক্রি করে হলেও চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে যেতেন। এখন সমাজের ধনী-গরিব সব মানুষেরা সরকারি হাসপাতালে যান । বাংলাই একমাত্র রাজ্য যেখানে 100% বিনামূল্যে পায় । কোনও একটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা দেখিয়ে রাজ্যকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টাটা ভুল ।"
আরও পড়ুন: