মালদা, 17 ডিসেম্বর : কোনও বেসুরো নয়, এবার সরাসরি বিদ্রোহ ৷ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে পদত্যাগ করলেন বামনগোলা ব্লক তৃণমূলের পাঁচ অঞ্চল সভাপতি ৷ এনিয়ে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুরের ৷ তবে এই ঘটনায় আমল দিতে নারাজ জেলা তৃণমূলের কোঅর্ডিনেটর দুলাল সরকার ৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘নতুন কমিটি তৈরির আগে নিজেদের দাম বাড়াতেই এই পাঁচ অঞ্চল সভাপতি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন ৷"
আজ তৃণমূল ছেড়েছেন শুভেন্দু অধিকারী ৷ আর তার সঙ্গে সঙ্গেই বেসুরো গাইতে শুরু করেছেন বিভিন্ন জেলার একাধিক তৃণমূল নেতা ৷ গতকাল সন্ধেয় বামনগোলা ব্লকের গোবিন্দপুর-মহেশপুর, জগদলা, পাকুয়াহাট, চাঁদপুর ও বামনগোলা অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতিরা জেলা কার্যালয়ে এসে নিজেদের পদত্যাগপত্র জমা দেন ৷ চিঠির কপি তাঁরা পাঠিয়েছেন দলের জেলা চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন ও কোঅর্ডিনেটর দুলাল সরকারের কাছেও ৷ তাঁরা প্রত্যেকেই সম্প্রতি নিযুক্ত ব্লক সভাপতি অশোক সরকারের বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন ৷
পাকুয়াহাট অঞ্চল তৃণমূলের পদত্যাগী সভাপতি শ্যামল মণ্ডল বলেন, “আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক হিসাবে দীর্ঘদিন ধরে দল করে আসছি ৷ আগে যাঁরা এই ব্লকে তৃণমূল সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন, সেই ফাইজুদ্দিন সরকার, সুনীল বর্মণ, অমল কিস্কুরা আমাদের যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছেন ৷ তাঁরা আমাদের সঙ্গে থেকে কাজ করেছেন ৷ কিন্তু এখন যিনি ব্লক সভাপতি হয়েছেন, তিনি এখানকার তৃণমূল কর্মীদেরই চেনেন না ৷ আগামীতে এখানে নতুন অঞ্চল কমিটি গঠন হতে চলেছে ৷ তিনি আমাদের ব্রাত্য রেখে কিছু ব্যবসায়ীকে নিয়ে কমিটি গঠন করতে চলেছেন ৷ আমরা সেটা মানব না ৷ আমরা দিদির সৈনিক ৷ দিদির জন্যই কাজ করছি, করব ৷ আমাদের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই ৷ গতকাল আমরা মৌসম নুরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম ৷ তিনি কলকাতায় রয়েছেন ৷ জেলায় ফিরলেই তাঁর সঙ্গে আমরা গোটা বিষয় নিয়ে কথা বলব ৷ তবে তিনিও এখন চাপে রয়েছেন ৷”
বামনগোলা অঞ্চল তৃণমূলের বিদায়ি সভাপতি তফিউর রহমান বলেন, “ব্লক নেতৃত্ব যেভাবে দল চালাচ্ছে তাতে আমাদের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে ৷ আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে ব্লক নেতৃত্ব আমাদের উপর সবকিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ৷ এভাবে কাজ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না ৷ তাই আমরা পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি ৷ দল থেকে নয় ৷ আমরা দলে থাকতে চাই, পদে থাকতে চাই না ৷ এটা হঠাৎ কোনও সিদ্ধান্ত নয়, ব্লক নেতৃত্বের এহেন কাজকর্মের সঙ্গে আমরা খাপ খাওয়াতে পারছি না ৷ এখনই আমাদের অন্য দলে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই ৷ তবে দল যদি উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেয়, তবে আমাদের ভেবে দেখতে হবে ৷”
আরও পড়ুন :- তৃণমূল ছাড়লেন শুভেন্দু
বামনগোলা অঞ্চল তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি মোস্তাফিজুর সরকার অবশ্য সাফ জানাচ্ছেন, এই ব্লকে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের সিন্ডিকেট রাজ চলে ৷ তিনি বলেন, “এই ব্লকে যাঁরা প্রথম সারিতে থেকে দলের নেতৃত্ব দেন, তাঁরা সবাই পদত্যাগ করেছেন ৷ যে কারণে তাঁরা পদত্যাগ করেছেন, আমিও সেই কারণেই পদত্যাগ করেছি ৷ আমরা মানুষের কাজ করতে পারছি না ৷ আমাদের নেতৃত্ব শুধুমাত্র মিটিং-মিছিলে লোক জড়ো করার জন্য আমাদের ডাকে ৷ তারপর তারা আর আমাদের কোনও খোঁজখবর নেয় না ৷ এখানে নেতাদের সিন্ডিকেট রাজ চলে ৷ সেকারণেই আমিও পদ থেকে সরে এসেছি ৷”
পাঁচ অঞ্চল সভাপতির পদত্যাগ নিয়ে অবশ্য চিন্তিত নয় জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ দলের জেলা কোঅর্ডিনেটর দুলাল সরকার বলেন, “দল আমাদের নির্দেশ দিয়েছে, প্রতিটি ব্লক ও অঞ্চল কমিটি নতুন করে তৈরি করতে হবে ৷ এখানে যে ৩-৪ জন ছেলে পদত্যাগ করেছে, তাদের হয়ত উচ্চাকাঙ্খা রয়েছে ৷ এই ব্লকে যে সভাপতি হয়েছেন, তিনিও নতুন ৷ তিনি কংগ্রেস থেকে আমাদের দলে এসেছেন ৷ যোগ্যতা অনুযায়ী তাঁকে ব্লক সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ তাঁকে ভয় দেখিয়ে এরা অঞ্চল সভাপতি হওয়ার চেষ্টা করছিল ৷ বিগত দিনে এরা কেউ সভাপতি ছিলেন না ৷ তার কোনও কাগজও ওদের কাছে নেই ৷ নতুন অঞ্চল সভাপতির নাম ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চলে গিয়েছে ৷ তা জেনেই এরা বাজার গরম করার চেষ্টা করছে ৷ এসব নিয়ে দল চিন্তিত নয় ৷”